ছাত্র নিহতের ঘটনায় যবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা
যেভাবে খুন হলেন রিয়াদ:
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদের (২৪) রক্তে রঞ্জিত হলো ক্যাম্পাস।
সংঘর্ষ, দ্বন্দ্ব, খুন এড়াতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেও ছাত্রলীগের হাত থেকে রক্ষা পেলো না বিশ্ববিদ্যালয়।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ইফতার পার্টির আয়োজন করে।
এই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার দ্বন্দ্বের জের ধরে রিয়াদকে ছাত্রলীগ নেতার নির্দেশে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে।
নিহত রিয়াদ পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকার মনিরুল ইসলামের ছেলে।
আহত হয়েছে জেলাল হোসেন জুয়েল নামের আরও এক সহপাঠী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা পৌনে ২টার দিকে তিনটি মোটরসাইকেলে ৯ জন সন্ত্রাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান সন্ত্রাসীদের নিশ্চিত করে রিয়াদ প্রধান ফটকের সামনে দোকানে বসে আছে।
এসময় সন্ত্রাসীরা গিয়ে রিয়াদের পেটে ও গলায় ছুরিকাঘাত করে। হামলাকারীদের ঠেকাতে গেলে রিয়াদের সহপাঠী জুয়েলের কপালে পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করে।
শিক্ষার্থীরা রিয়াদকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসাপাতালে নেয়ার পর বেলা আড়াইটার দিকে মৃত্যু হয়।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ না করায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের ভাগিনা তানভিরের সঙ্গে বিরোধ হয়।
এ ঘটনার জের ধরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে রিয়াদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
নিহতের সহপাঠী জেলাল হোসেন জুয়েল যুগান্তরকে বলেন, বেলা দেড়টার দিকে রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালযের প্রধান ফটকের কাছে একটি দোকানে বসেছিলো।
এসময় তিনটি মোটরসাইলে ৯জন বহিরাগত সন্ত্রাসী এসে রিয়াদের ওপর হামলা চালায়। এসময় আমি ওদের পা জড়িয়ে ধরি।
কিন্তু ওরা আমার কথা শুনিনি। রিয়াদের পেট ও গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এসময় আমার কপালে পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করে।
আমি পড়ে যায়। সবার সামনে রিয়াদের ওপর হামলা করেছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু আমার বন্ধু আর আমাদের মাঝে নেই।
শিক্ষার্থীরা জানায়, রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটরিয়ায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের আয়োজেন করা হয়। এতে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা অনুপস্থিত ছিল।
ইফতারির পর সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের ভাগ্নে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তানভির তার বিভাগের সিনিয়র (চতুর্থ বর্ষ) বড় ভাই বাদল ও রিয়াদকে মারপিট করে। এর এক পর্যায়ে তার মামা (শামীম) কে জানায়।
শামীম তার ভাগ্নের কথা শুনে রিয়াদ ও বাদলকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনার জের ধরে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালযের প্রধান ফটকে প্রকাশ্যে রিয়াদের ওপর হামলা করা হয়।
ঘটনার পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে যান যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, রোববার ইফতার পার্টিতে অংশ না নেয়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপর রেশমা শারমিন ঘটনার সত্যত্যা নিশ্চিত করে বলেন, ছাত্রদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলায় ছুরিকাঘাতে রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে।
রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে দ্বি-বিভক্ত ছাত্রলীগের বলি:
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আশংকা নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে গত ১২ জুলাই ‘যবিপ্রবিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগ মানছে না” ও ১৪ জুলাই রাজনীতি নিষিদ্ধ যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ইফতার মাহফিল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এরপর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মে মাস থেকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করছে ছাত্রলীগ।
চলতি বছরের ১৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ওই কমিটি নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে নেতৃবৃন্দ।
পদ বঞ্চিতরা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হাটে হাড়ি ভেঙে দেয়। তারা দাবি করে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদ শামীম হাসানের বিরুদ্ধে তারা নানা অভিযোগ করেন।
ক্যাম্পাসে এ কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় সুব্রত ও শামীম গ্রুপ রোববার ক্যাফেটরিয়ায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল হোসেন, মোশারফ হোসেন, মীর জহুরুল ইসলাম, আফিস উদ দৌলাহ অলক, রেজাউল ইসলাম, আব্দুল মান্নান মুন্না, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল প্রমুখ।
এ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি বিরোধীরা অনুপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের ভাগ্নে তানভির ক্ষিপ্ত হয়ে রিয়াদ ও বাদলকে মারপিট করে।
এসময় তাদেরকে ছাত্রলীগের বিপক্ষে যাওয়ায় দেখা নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এঘটনার জের ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
স: ইএইচ