রাবিতে সিন্ডিকেট উপেক্ষা করে শিক্ষক নিয়োগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য নিজ বিভাগেই সিন্ডিকেট ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত যোগ্যতা না মেনেই একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে এ কে আনোয়ার নামের ওই শিক্ষকের নিয়োগ চুড়ান্ত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫১তম সিন্ডিকেটে।RU

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪৬তম সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক নিয়োগে সনাতন পদ্ধতিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যে কোন একটিতে প্রথম শ্রেণী ও অন্যটিতে দ্বিতীয় শ্রেণী এবং গ্রেডিং পদ্ধতিতে একটিতে জিপিএ ৪ এবং অন্যটিতে জিপিএ ৩ থাকতে হবে। তবে শুধুমাত্র ২০০১ সালের এসএসসি ও ২০০৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য ন্যূনতম জিপিএ ৩ থাকার কথা বলা হয়। একই সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় যে কোন একটিতে প্রথম শ্রেণী থাকার বিষয়েও সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এই নিয়ম অনুসারেই গত বছরের ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি (বিজ্ঞপ্তি নং-৬৮/২০১৩) প্রকাশিত হয়। তবে ওই বিভাগে ৪৫১তম সিন্ডিকেটে নিয়োগ পাওয়া তিন শিক্ষকের মধ্যে আনোয়ারের উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বলে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনোয়ার ২০০২ সালের এসএসসিতে জিপিএ ৩.৩৮ (বি গ্রেড) ও ২০০৪ সালের এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৯১ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। যা সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন সিন্ডিকেট ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত না মেনেই ওই শিক্ষককে নিজ বিভাগে নিয়োগ দিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

 

Post MIddle

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলেও কিভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর প্রাপ্ত জিপিএর সত্যতা স্বীকার করে এ কে আনোয়ার বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত শিথিল করে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।’ তাঁর সম্পর্কে অন্য আরও তথ্য চাইলে তিনি তা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি নিলুফার সুলতানা বলেন, ‘তাকে সরকারি গেজেট অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিত করা হয়েছে। ওই শিক্ষক নিয়োগে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ব্যাহত হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স দেখে বলার কথা জানান।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কোনো শর্ত শিথিল করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। সে ফোর্থ ফাস্ট ক্লাস। নিয়ম মেনেই তার নিয়োগ চুড়ান্ত করা হয়েছে।’

 

উল্লেখ্য, সরকারি গেজেট উপেক্ষা করে বিশেষ প্রার্থীকে সামনে রেখে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়েরর ৪৪৬ তম সিন্ডিকেটের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণে সরকারি গেজেট অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম শ্রেণীধারী এবং অনার্স ও মাস্টার্সে বিভিন্ন বিভাগের প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ও প্রথম শ্রেণীধারী অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আবেদন করার ন্যূনতম যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে একই যোগ্যতা নিয়ে কেউ কেউ সিন্ডিকেটের এই নিয়মকে পাস কাটিয়েই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনের এই দ্বি-মূখী নীতির বিরুদ্ধে সচেতন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীমহল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

 

সঃ সুউ ফয়সাল

পছন্দের আরো পোস্ট