শুরু হলো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।

টানা ১১তম বারের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের সহযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)-তে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪, বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন করেছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই হ্যাকাথন একটানা ৩৬ ঘন্টা চলবে। শনিবার সন্ধ্যা ৬:০০ টায় অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। বিগত ১০ বছরে বিশ্বব্যাপী এই প্রতিযোগীতায় টানা তিনবারসহ সর্বমোট চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, এআইইউবি-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম রাশিদুল হাসান, সহ-সভাপতি (অর্থ) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, বেসিসের পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম ও বিপ্লব ঘোষ রাহুল, এবং নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪ এর আহ্বায়ক অভিজিৎ ভৌমিক, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ পর্বের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাহদী-উজ-জামান।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্রগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) এ আয়োজন করেছে। নাসা স্পেস  অ্যাপস চ্যালেঞ্জে এবার ১ কোটি শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করার পাশাপাশি ২ লাখ শিক্ষার্থীর সরাসরি ও প্রতিযোগিতায় যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।

এবার বাংলাদেশের ৯টি শহর থেকে ৩ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে। সর্বমোট ৫০০টি প্রকল্পের মধ্যে হাইব্রিড মডেলে বাছাইকৃত শীর্ষ ৫০ নিয়ে এআইইউবি-তে এবং বাকি ৪৫০টি প্রকল্প নিয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৪-৫ অক্টোবর, ২০২৪ দুইদিনব্যাপী হ্যাকথন।

Post MIddle

অনুষ্ঠানে এআইইউবি-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছি। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের প্রযুক্তির সকল খাতে সমানভাবে উন্নয়ন করতে হবে। এই উন্নয়নের জন্য আমাদের তরুণদেরকে বেশি বেশি উৎসাহ প্রদান করা প্রয়োজন এবং এই প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের মাধ্যমেই আমরা নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বাস্তবায়ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। পাশাপাশি এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে, তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রতি উৎসাহ প্রদান করা অত্যন্ত জরুরী। ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪’ প্রতিযোগিতা-এর মাধ্যমে তরুণেরা আরো বেশি উৎসাহ পাবে বলে আশা করি।

অনুষ্ঠানে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ নতুন বাংলাদেশ অর্জনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের সম্মানে সবাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান করার মাধ্যমে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, “রংপুরের আবু সাঈদ, ঢাকার ফ্রিল্যান্সার মুগ্ধ ও ড্রোন নির্মাতা তানভীনসহ আরও অনেকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। এখন সময় আমাদের এই নতুন বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার। আর এই দেশ গড়ার একটা ছোট্ট ধাপ হচ্ছে এই নাসা স্পেস  অ্যাপস চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে তোমরা তোমাদের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, তানভীনদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব এখন তোমাদের কাঁধে। যখন দেখি তোমাদের মধ্যে কেউ নাসায় গিয়ে বাংলাদেশের পতাকাটা উঁচু করে ধরে তখন আমাদের বুকটা ভরে যায়। তখন মনে হয় আমাদের এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সফল হয়েছে। বেসিস টানা ১১তম বারের মতো এই আয়োজন করছে। এর মধ্যে বিগত ছয় বছরে আমরা টানা তিনবারসহ সর্বমোট চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তোমরা তোমাদের মেধা দিয়ে, যোগ্যতা দিয়ে এইবারে একসাথে তিন তিনটা  গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব বয়ে আনবে।”

২০১৮ সালে ‘লুনার ভিআর প্রজেক্ট’ বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিবে এমন ভার্চুয়াল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম অলীক। ২০২১ সালে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) সম্মিলিত দল ‘টিম মহাকাশ’ এবং ২০২২ সালে “টিম ডায়মন্ডস” – “সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক” বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এবং নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩-এর বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের টিম ভয়েজার্স।

উল্লেখ্য, ৩৬ ঘন্টা টানা হ্যাকথন আয়োজনের পর আগামীকাল ৫ অক্টোবর (শনিবার) ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০০ টায় এআইইউবি- তে আয়োজিত হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এআলইইউবি-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন নাদিয়া আনোয়ার।

পছন্দের আরো পোস্ট