মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ফেলোশিপ পেলেন ড.আবদুল আলীম

রাকিব হাসনাত।

ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি-২ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ফেলোশিপ পেলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম আবদুল আলীম। এ নিয়ে উচ্ছাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্র-ছাত্রীরা।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম। এর আগে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক নিগার সুলতানা সাক্ষরিত এক স্মারকে বিষয়টি জানানো হয়।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এই গবেষণা ফেলোশিপের মান আট লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গবেষণা নীতিমালা-২০২২ এর ধারা ৩.৪ এর আলোকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য এই ফেলোশিপের জন্য তাঁকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়েছে। আমরা এ সংক্রান্ত ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে পাঠানো একটি স্মারক পেয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম আবদুল আলীম ইতিহাস-ঐতিহ্য তথা ভাষা আন্দোলন গবেষক হিসেবে সারস্বত সমাজে বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ছাত্রজীবনেই লেখালেখি শুরু করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম স্থান এবং স্নাতোকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২৪তম বিসিএস (শিক্ষা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ও ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেন। বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনারত। এ বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা একাডেমিসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত প্রস্তক প্রকাশনী থেকে তাঁর তিরিশের অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাহিত্য পত্রিকা’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাহিত্যিকী’, ‘আইবিএস জার্নাল’, ‘বাংলা একাডেমি পত্রিকা’সহ বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় তার পঞ্চাশের অধিক গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

Post MIddle

তাঁর গবেষণার বিষয়গুলো হলো- ‘ভাষা আন্দোলনে রাজনৈতিক দল, ছাত্র-যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা’। এ গবেষণার আওতায় ন্যাশনাল কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণ-আজাদী লীগ, তমদ্দুন মজলিস, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা নিরুপণ করা হবে।

নিয়মিত কলাম ও উপ-সম্পাদকীয় লেখেন জাতীয় দৈনিকগুলোতেও। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো : ‘ভাষা-আন্দোলন কোষ’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস’, ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’, ‘আওয়ামী লীগ ও ভাষা আন্দোলন’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা’, ‘ভাষাসংগ্রামী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ‘ভাষাসংগ্রামী এম এ ওয়াদুদ’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে রফিকুল ইসলাম’, ‘ভাষা আন্দোলনে তাজউদ্দীন আহমদ’, ‘ভাষা আন্দোলনের জানা-অজানা ইতিহাস’, ‘রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্যে বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণ’, ‘বন্দে আলী মিয়া : কবি ও কাব্যরূপ’, ‘শহীদ কাদরীর ত্রিভুবন’, ‘বাংলা কাব্যের স্বরূপ ও সিদ্ধি-অন্বেষা’, ‘রবীন্দ্রনাথ উত্তর-আধুনিকতা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন’, ‘সবুজপত্র ও আধুনিক বাংলা সাহিত্য’, বাংলা বানান ও উচ্চারণবিধি’, ‘আনিসুজ্জামান’, ‘সুচিত্রা সেন’ প্রভৃতি। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থগুলো হলোÑ‘পাবনার ইতিহাস’, ‘আনিসুজ্জামান-বক্তৃতাসম্ভার’, ‘ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ : কতিপয় দলিল’, ‘ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব : কতিপয় দলিল’, শামসুজ্জামান খান-রচনাবলি (তৃতীয় খ-), ওমর আলী : স্মৃতি ও কীর্তি’ প্রভৃতি। বেশ কয়েকটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন; সেগুলো হলোÑকালবৈশাখী, কৃষ্ণপ্রহর, সাহিত্য-গবেষণাপত্র প্রভৃতি। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপপুর প্রথম বই ‘এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’-এর সম্পাদনা ও সংকলনকাজ সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন তিনি।

ড. এম আবদুল আলীমের জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর। জন্মস্থান : পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রামে। পিতা মো. আব্দুল কুদ্দুস, মাতা জাহানারা বেগম। বর্তমানে তিনি নিজ উদ্যোগের সাঁথিয়া থানার গৌরীগ্রামের পৈত্রিক ভিটায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ভাষা আন্দোলন গবেষণাকেন্দ্র’। তাছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠচক্র প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে ও পরিচর্যায় কাজ করে চলেছেন। তিনি ভাষা আন্দোলন গবেষণার স্বীকৃতি-স্বরূপ লাভ করেছেন ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’। দেশ-বিদেশের প-িত ও গবেষকগণ তাঁর লেখালেখি ও গবেষণার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

ড. এম আবদুল আলীম বলেন , ভাষা আন্দোলন গবেষণায় ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি-২ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের এই ফেলোশিপ আমার গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। এর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনে বিভিন্ন সংগঠনের অবদানের স্বরূপ-অন্বেষণে যথার্থ অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রায় এক যুগ ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করছি। এ বিষয়ে আমার পনেরোটির মতো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এজন্যে যে, এই ফেলেশিপ আমার ভাষা আন্দোলন গবেষণায় আরও একনিষ্ঠ হতে সহায়তা করবে এবং জাতীয় ইতিহাসের এই গৌরবময় অধ্যায়ের অনেক অজানা তথ্য উদঘাটনে প্রেরণা জোগাবে।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি-২ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ফেলোশিপ দিয়েছে সেজন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রদের প্রেরণা যোগাবে।

পছন্দের আরো পোস্ট