চবিতে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত

চবি প্রতিনিধি।

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বর্ণিল আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২৩ উদযাপিত হয়েছে। ২৬ মার্চ ২০২৩ সকাল ১০:০০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে চবি স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর চবি বিভিন্ন পর্ষদের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সকালে চবি উপাচার্যের নেতৃত্বে চবি স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হয়ে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বেলা ১১টায় চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। এতে সভাপতিত্ব করেন মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২৩ উদযাপন কমিটির আহবায়ক চবি আইকিউএসি এর পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন।

অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ মাতৃকার জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

উপাচার্য তাঁর ভাষণে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লক্ষ বীর বাঙালি, শহীদ জাতীয় চারনেতা ও ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বর্বর হায়েনাদের হাতে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবৃন্দকে বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

উপাচার্য মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি আলোকপাত করেন বলেন, বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করতে জাতির পিতা আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। শোষণ-বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে স্বাধীন করতে জাতির পিতার আহবানে এবং তাঁরই সম্মোহনী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে হায়েনাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয়মাস লড়াই করে এবং হায়েনাদের পরাজিত করে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে গঠিত চবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সচিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার।

Post MIddle

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ, চবি সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর, চবি শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ দানেশ মিয়া, চবি আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক, জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, চবি আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম, চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব কে এম নুর আহমদ, চবি কর্মচারী সমিতির সভাপতি জনাব মোঃ সুমন (সুমন মামুন) ও চবি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ আলী হোছাইন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি শিক্ষার্থী পার্থ প্রতীম মহাজন ও নাহিদ নেওয়াজ।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করা হয় এবং সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে স্মৃতি চারণ করে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মোহাম্মদ শাহ আলম নিপু, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর চৌধুরী সিইনসি স্পেশাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডার এ এইচ এম জিলানী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাসেম চিশতী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ বদিউল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ রাশেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব এস এম ফজলুল হক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস।

মুক্তিযোদ্ধাগণ তাঁদের বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এ মহান দিবসে এ ধরণের একটি চমৎকার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদেরকে সম্মাননা প্রদান করায় চবি কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সম্মাননা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন চবি গণিত বিভাগের প্রভাষক রাজীব কর্মকার, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অরূপ বড়ুয়া এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জেসী ডেইজী মারাক।

অনুষ্ঠানে বীর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ রাত ১২:০১ মিনিটে (২৫ মার্চ দিবাগত রাতে) বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ বেদীতে বিএনসিসি কর্তৃক বিউগল বাজিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবসকে স্বাগত জানানো হয় এবং প্রত্যুষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

২৬ মার্চ ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ ক্যাম্পাসস্থ সকল মসজিদে স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং কেন্দ্রীয় মন্দির ও প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দুপুর ১২টায় চবি কেন্দ্রীয় মন্দিরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ত্রিশ লক্ষ বীর বাঙালী, ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ও জাতীয় চার নেতার আত্মার চিরশান্তি এবং দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও মঙ্গল কামনায় গীতাপাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে চবি প্রশাসনিক ভবন, হলসমূহ, চবি ১নং ও ২নং গেইট চত্বরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতীয় শিশু দিবস ২০২৩ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত (১৭ মার্চ ২০২৩) শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানসমূহে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলসমূহের প্রভোস্টবৃন্দ ও আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির সদস্যবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারি সমিতি, কর্মচারি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দসহ সুধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পছন্দের আরো পোস্ট