আজকের নারী আগামী দিনের মা

উম্মে মাবুদা

মা সম্পর্কে যা-ই লিখি না কেন তা কম হয়ে যাবে। ‘মা’ তুমি অতুলনীয়। একজন গর্ভধারিণী মা সন্তান জন্মের পর থেকে তাকে লালন-পালন করে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আশায়। মা নিজের ইচ্ছে, রাগ-অভিমান, সুখ-দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা বিসর্জন দেয় তাঁর সন্তানের সুখের জন্য। এমনও মা আছেন, যিনি সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে স্বামী-শ্বশুরবাড়ির সকল অত্যাচার সহ্য করেও থেকে যায়। যদিও সেটা সহ্য করার মত থাকে না, সে চাইলে অন্যত্র চলে গিয়ে সুখে থাকতে পারে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার সন্তানের মানসিক অবস্থা কী হবে সেটা ভেবে, সে নিজের সুখ বিসর্জন দিতে দু’বার ভাবে না।
দেখা যায় সবার প্লেটে ভালো খাবারটা দিলেও তুলনামূলক পড়ে থাকা খাবারটা মা খায়, তুলনামূলক কম দামী পোশাকটা মা পরে। এমনও অনেক ঈদ মা নতুন পোশাক ছারা কাটিয়ে দেয়। তবুও তাঁর সন্তানকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করে শতকষ্ট বুকে জমা রেখে। কিন্তু এই মা আমার আপনার থেকে এমনকি সমাজ থেকেও পায় না যথাযথ সম্মান।
আমার সমাজ শেখায়, মা হবেন নিঃস্বার্থ, সংসার-সন্তানের জন্য নিবেদিত প্রাণ। সমাজ নির্ধারিত এই মতহী বৈশিষ্ট্যের আড়ালে মাকে বঞ্চনার এক সুস্পষ্ট চরিত্র লুকিয়ে আছে। মায়ের নিঃশেষিত চেহারাকেই সমাজ উচ্চ মর্যদার খোলসে আটকে রেখে করছে নীরব নির্যাতন।
আজকের নারী আগামী দিনের মা। কিন্তু সেই নারীকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় তুমি মেয়ে, তুমি কোমল, তোমাকে ত্যাগ করা শিখতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে, তোমাকে বন্দি থাকতে হবে, তোমাকে নির্ভর হতে হবে কারণ তুমি মেয়ে। দিনশেষে সে যখন মা হবে তখন তাঁকে এসব মেনে নিতে হয়, জলাঞ্জলি দিতে হয় নিজেট সকল চাহিদা, রুচি। নিজের আলাদা সত্তার ভাবনা মা মাথাতেই আনেন না। পুড়ে মরে হাজারো মায়ের স্বদিচ্ছা, স্বপ্ন। কেননা প্রত্যেকটা মানুষ কিছু নিজ শক্তি জন্মে, যেটা তারা ভালো পারে। কিন্তু আমাদের সমাজ সবকিছু ভস্মে রূপান্তরিত করে।
দিনশেষে এই মা কিছুই পায় না। স্বামী যে কি-না মেয়ে মানুষ বলে নূন্যতম সম্মানটুকু করে না। নিজ পণ্যের মত ব্যাবহার করে। সন্তান যাকে নিয়ে পরবর্তী আশা রাখে মা, সে বাবার থেকে প্রাপ্ত আচরণ প্রতিফলিত হয় ছেলের আচরণে। ব্যস্ততার মাঝে এরা একটুখানি সময় পায় না, মা কে মনে করার। বর্তমানে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হচ্ছে, মা গ্রামে থেকে যাচ্ছে। ছেলে সময় পাচ্ছে না মা’কে মনে করার। এদিকে মা সারাদিন অপেক্ষায় অবহেলিত হচ্ছে। তাই বলে যারা বাড়িতেই থাকে তারা মা’কে দেখে এমন নজিরও খুব পাওয়া যায়। মা’কে ভাগ করে নেয়। দিনশেষে মা’কে সন্তানের কাছে খাওয়ার জন্যও ভাগ হওয়া লাগে। কিন্তু সমাজ সেটা দেখে না, সমাজ দেখে না তাঁর মানসিক অবস্থাটা। আসলে যে সমাজে নারী মানুষ নয়, সে সমাজে মা কখনো সম্মানের পাত্রী হতে পারবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনতে না পারলে, নারীবান্ধব আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে, নারী কখনোই মর্যাদর অধিকারী হবে না।
তবে সবার আগে হচ্ছে সচেতনতাবোধ। একজন ব্যক্তিই পারে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মা’র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করতে, সমাজকে নতুন রূপ দিয়ে এর রূপান্তর ঘটাতে। বর্তমানে মেয়েরা অনেক সোচ্চার। তাই একজন নারী বা মাই পারে তাঁর আওয়াজ তুলে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। সবাই এগিয়ে আসুন, সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন হতে সাহায্য করুন, নারীর পাশে দাঁড়ান, মা’র মর্যাদা রক্ষা করুন।
উম্মে মাবুদা
শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, সমাজকর্ম বিভাগ।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
পছন্দের আরো পোস্ট