যাঁকে ভালো না বেসে থাকা যায় না

পলি শাহীনা।

মিষ্টি একটা বাতাস এসে বারবার ছুঁয়ে দেয় আমাকে। রাত্রি তখন আড়াইটা বাজে। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরলো তড়বড় করে। আমি দাঁড়িয়ে হাসপাতালের ঝকঝকে করিডোরে। নানান রঙের টিউলিপ ফুটে আছে। গাড়ির দিকে হাঁটছি অন্ধকারের সবুজ গালিচা মাড়িয়ে। গাড়ির স্পিড ক্রমশ বাড়ছে, এত এত অনুষঙ্গের ভিড়ে আমার চোখে শুধু এন্ড্রুর মুখখানি ভাসছে।

ডাক্তার এন্ড্রুর সঙ্গে গত দু’দিনে বারকয়েক দেখা হলেও লম্বা আলাপ হয়েছে দু’বার। একবার লেবার রুমে, অন্যবার অপারেশন থিয়েটারে, ভাগ্নির কেয়ারগিভার এবং ইন্টারপ্রেটার হিসেবে। এন্ড্রু যেন মানুষ রুপি এক ফেরেশতা। একজন মানুষ এত নম্র, এত সুন্দর, এত মানবিক হয় কী করে? এন্ড্রুর ঘোর কাটছে না আমার কোনভাবেই। তাঁর কথাগুলো পিয়ানোর সুরের মত কানে বাজছে। মানুষ সুন্দরের পূজারী, বুঝি না নিজেকে কী দোষ দেব এতে?

বাসায় এসে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ি। স্বপ্নে দেখি, আমি সমুদ্র জলে হাত-পা ছড়িয়ে দূর আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বুঁজে ভাসছি। চোখ মেলতেই দেখি আকাশের বুকে চাঁদ, তারা নয়, এন্ড্রু ফুটে আছে। এন্ড্রুর আলোয় গোটা পৃথিবী হাসছে।

Post MIddle

আসলে এন্ড্রু এমন এক মানবিক ফেরিওয়ালা, যাঁকে মনে না রেখে, ভালো না বেসে, থাকা যায় না। মানুষ যত বড় হয় তত ঝুঁকে থাকে- তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের সময়টা বারবার মনে পড়ছিল বাক্যটা। তাঁর সঙ্গে আমার আর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে এ আকাশছোঁয়া বড় গাছের ঝুঁকে থাকার কথা সবসময় মনে থাকবে। মানুষ অন্যের মনে বেঁচে থাকে ব্যবহারে।

এন্ড্রু এবং তাঁর মত মহৎপ্রাণ মানুষ মানেই অসংখ্য অসুখের পৃথিবীতে সুখের করুণা ধারা। ভাবনার করিডোরে তাঁর মুখোমুখি হলেই অবচেতন মনে আওড়াতে থাকি,

‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর…। ‘

পছন্দের আরো পোস্ট