পাখির সাথে বসবাস ইবি শিক্ষার্থীদের
ইবি প্রতিনিধি-
কুয়াশার চাদর ভেদ করে মিষ্টি রোদের আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে প্রভাতের রবি। জানালার ফাঁক দিয়ে সেই কিরণের আভায় ক্রমেই আলোকিত হচ্ছে ঘরের চারপাশ। বাইরের পাখির কলকাকলির মধুর শব্দ শুনা যাচ্ছে। কিন্তু লেপের নিচে অলস ঘুমে আচ্ছন্ন প্রাণ যেন জাগতেই চায় না। এমন সময় জানালায় টুকটাক শব্দ শুনে চোখ থেকে বিদায় নিলো ঘুম। যেন পরম আদরে কেউ বলছে, “চোখ খুলে দেখ দিগন্ত তোমায় ডাকছে”। অলস ঘুম ছেড়ে জানালার পাশে তাকাতেই দেখা গেল, এতো আর কেউ নয়, আমার পড়শি ‘রঙ বেরঙয়ের পাখিরা’ আমায় ডাকছে।
ঠিক এভাবেই পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের। দেশে প্রচুর বৃক্ষনিধনের ফলে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখির আবাসস্থল এ ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসংলগ্ন এলাকার গাছ ও জানালার কার্নিশে ঘর বাঁধে এসব পাখি। এদের মধ্যে চড়ূই, ঘুঘু, শালিক, বুলবুলি, দোয়েল, কাঠ ঠোকরা, বামুন শালিক ও গোবরে শালিক অন্যতম। সকাল হলেই তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় হলগুলো। ঘুম থেকে উঠে এসব পাখিদের খুনসুটি দেখে অলস সময় পার করে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গাছের ফলফলাদি খেয়ে জীবনধারণ করে এসব পাখিরা। অনেক সময় শিক্ষার্থীরাও আধার দেয় এসব পাখিদের। এভাবেই যেন শিক্ষার্থীদের প্রতিবেশী হয়ে উঠেছে মন ভোলানো এই পাখিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি আবাসিক হলের প্রায় প্রতিটি হলেই বসে এসব পাখিদের মিলনমেলা। শুধু আবাসিক হল নয় ১৭৫ একরের এ ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে রয়েছে পাখির বাসা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্ত্বরে এসব পাখির মধুর ডাকে মুগ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা।
এছাড়া শীতের তীব্রতা বাড়লে সুদুর সাইবেরীয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয় লেকে আশ্রয় নেয় পরিযায়ী পাখিরা। ঝাঁকে ঝাঁকে আসা এসব পরিযায়ী পাখিরা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে যেন আলাদা মাত্রা যোগ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বোরহান কবির বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্ত্বরই পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পাখিদের সাথে আমাদের বসবাস প্রতিবেশীর মত। আমরা যদি সকাল বেলা ঘুম থেকে না উঠতে চাই তবুও পাখিরা আমাদের জোর করে ঘুম থেকে ওঠায়। সকাল বেলায় তাদের কিচিরমিচির শব্দে এতটাই আনন্দমূখর পরিবেশ তৈরী হয় যে আপনি চাইলেও ঘুমিয়ে থাকতে পারবেন না। আবার সন্ধ্যা বেলায় তাদের কলকাকলিতেই আমরা জানতে পারি যে এখন ঘরে যাওয়ার সময় হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, পাখি প্রকৃতির একটি অংশ। ক্যাম্পাসে পাখির অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের মনকে প্রফুল্ল করে। এছাড়া প্রকৃতিতে পাখির অংশগ্রহণ পরিবেশকে মনোরম করে তোলে। ক্যাম্পাসে পাখির বসবাসকে আরো সহজ করতে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ।