আইইউবিএটিতে একই গাছে চুকুর ও ঢেঁড়সের সফল উদ্ভাবনী

শাহাদাত হোসেন শাকিল।

সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) বিস্ময়কর কৃষি উদ্ধাবন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ড. আব্দুল মোহাম্মদ ফারুক। একই গাছে ফাটল কলমের মাধ্যমে চুকু (Hibiscus sabdariffa) আর ঢেঁড়স (Abelmoschus esculentus) উৎপাদনে সফল হয়েছেন তিনি।

আইইউবিএটি এর প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবীদ ড. এম আলিমউল্যা মিয়ানের নামে প্রতিষ্ঠিত মিয়ান রিসার্চ সেন্টারের অর্থায়নে শুরু হয় এই গবেষণা। শুরুতেই আলাদাভাবে ঢেঁড়স ও চুকুভেন্ডি লাগিয়ে গ্রাফটিং করে পাটল কলম তৈরি করা হয়। ঢেঁড়সের বীজ লাগানোর ১৫ দিন পরে ঢেঁড়সের মাথা কেটে দেয়া হয়। এর ১৫ দিন পর চুকুভেন্ডি গাছ থেকে সায়ন সংগ্রহ করে ঢেঁড়স গাছের রুটস্টোকের সঙ্গে ফাটল কলম পদ্ধতিতে সংযুক্ত করা হয়। গ্রাফটিং এর ১০ দিনের মাথায় র‍্যাপিং খুলে ফেলেন গবেষকরা।

পুরো পদ্ধতিতে গাছের সুরক্ষায় জৈব সার ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। তাই এই ফসল সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যসম্মত বলে মতামত দেন তারা।  চুকুর পাতা রান্না করে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। এটির মাংসল বৃতি (শাঁস) কনফেকশনারি খাদ্যসামগ্রী যেমন-জ্যাম, জেলি, জুস, আচার, চা ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। চুকুরের পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-সি ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান থাকে। চুকুর এর বীজ এ ২০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। পৃথিবীর অনেক দেশে এই তেল সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এবং খাবার তেলের সাথে এই তেল মিশানো হয়। সাধারণ পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ঢেড়সের পাশাপাশি চুকুরও বিশ্বব্যাপি গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে।

Post MIddle

বাংলাদেশের মত কম চাষবাদ জমির দেশে ফসলী জমির সংকট কমিয়ে একই গাছে এমন দুই ধরণের সবজি উৎপাদন অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। মাটির জমির পাশাপাশি বাড়ির ছাদেও যে কেউ চাইলে এই ফসলের চাষাবাদ করতে পারে।

গোটা গবেষণায় অধ্যাপক ড. আব্দুল মোহাম্মদ ফারুকের সহযোগী হিসাবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি অণুষদের সদ্য স্নাতক মেহেদী হাসান। এর আগে ২০১৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টমালু (একই গাছে টমেটো ও আলু) এবং ২০২১ সালে ব্রিঞ্জালু (একই গাছে বেগুন ও আলু) নিয়ে গবেষণায় সফল হয় এই গবেষক দলটি। ভবিষ্যতে কৃষিভিত্তিক এমন উদ্ভাবনী গবেষণার মাধ্যমে দেশের মাটিতে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের আশাব্যক্ত করে তারা।

১৯৯১ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে যাত্রা শুরু করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন স্নাতক গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে উত্তরায় ২০ বিঘা নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বেসরকারি পর্যায়ে দেশে প্রথম কৃষিতে স্নাতক প্রোগ্রাম চালু করে আইইউবিএটি।

৩১ বছরের পথচলায় আইইউবিএটি লক্ষ্য অর্জনে অনেকটাই এগিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদে ১১টি প্রোগ্রামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এছাড়াও এশিয়া ও আফ্রিকার ১২টি দেশের শতাধিক শিক্ষার্থীর পদচারণ আছে এই ক্যাম্পাসে। ২০২১ সালের ইউআই গ্রিন মেট্রিক ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশে আইইউবিএটির অবস্থান দ্বিতীয়, আর বিশ্বের ৭৯টি দেশের ৯৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অবস্থান ২৯৪তম। ২০২১ সালে উরি (ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিস উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট) র‍্যাঙ্কিংয়ে নৈতিক মানের বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পেয়েছে আইইউবিএটি।

পছন্দের আরো পোস্ট