চবিতে মহান বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত

চবি প্রতিনিধি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহাসমারোহে ও আনন্দঘন পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। মহান বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্য, শহীদ মিনার ও স্মৃতি সৌধ ‘স্মরণ’ সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ ভবন এবং স্থাপনায় দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা ও অপরূপ সাজে ক্যাম্পাস সজ্জিত করা হয়।

১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২:০১ মিনিটে বিজয় দিবসের সূচনা লগ্নে বিউগল বাজিয়ে বিজয় দিবসকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং দুপুর ১২:০০ টায় চবি কেন্দ্রিয় মন্দিরে গীতাপাঠ ও বীর শহীদদের আত্মার চিরশান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ১০:০০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে পুস্পস্তবক অর্পণ করে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে।

এরপর অনুষদের ডিনবৃন্দ, চবি শিক্ষক সমিতি, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগীয় সভাপতি ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, অফিসার সমিতি, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস), চবি মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহ পুস্পস্তবক অর্পন করে।

পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় বিজয়র‌্যালি এবং র‌্যালি শেষে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর চবি জারুল তলায় অনুষ্ঠিত হয় মহান বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চ.বি. উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। সভায় বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে।

মহান বিজয় দিবসঅনুষ্ঠান শুরুতে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর চবি সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। আলোচনা সভা শেষে চবি সংগীত বিভাগ এবং উত্তরায়ন, দর্পণ, উদীচী, অঙ্গন, রঁদেভু, নৃত্যনীড়, আবৃত্তিমঞ্চ, লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ চবির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Post MIddle

উপাচার্য তাঁর ভাষণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে মহান বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর বিজয়ী শুভেচ্ছা জানান। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, রাজনীতির মহাকবি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, ১৯৭৫ এ নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন।

তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এবং ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভি রহমানসহ অন্যান্য শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির বিজয় অর্জন বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এ বিজয়ের মহানায়ক হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর সম্মোহনী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাইতো স্বাধীন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুটো অবিচ্ছেদ্য সত্তা।

প্রসঙ্গক্রমে উপাচার্য আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে যদি হারাতে না হতো তাহলে অনেক আগেই এ দেশ বিশ্বের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে সামিল হতো। এতো কিছুর পরও জাতির পিতার সুযোগ্য তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। কোনো অপশক্তি যাতে এর গতি রোধ করতে না পারে তার জন্য উপাচার্য জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের সকলকে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বিকেল ৪:৩০ টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় উপস্থিত হয়ে উপস্থিত সকলকে এবং সারাদেশের মানুষকে ভার্চুয়ালি জাতীয় পতাকা হাতে ‘সোনার বাংলা গড়ার’ শপথ বাক্য পাঠ করান। এতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে চবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য সহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে শপথ বাক্য পাঠ করেন।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন চবি সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ সেকান্দর চৌধুরী, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রাশেদ মোস্তফা, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মোঃ এমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম, কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী, সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মাইনুল হাসান চৌধুরী, প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, বঙ্গবন্ধু পরিষদ চবি এর সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ রাশেদ-উন-নবী, অফিসার সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার জাবেদ, চবি কমচারী সমিতির সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আবদুল হাই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী নির্দেশনা ও পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক, অফিস প্রধানবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, চবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মহান বিজয় দিবস

পছন্দের আরো পোস্ট