শতবর্ষপূর্তিতে ঢাবিতে নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা

ঢাবি প্রতিনিধি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে দৃষ্টিনন্দন আলোক সজ্জা শোভা পাচ্ছে। মনোরম ক্যাম্পাসের সর্বত্র এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন করা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ গতকাল (১ ডিসেম্বর ২০২১) বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভূটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এ কে আজাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) ও শতবর্ষ উদ্যাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’র সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শতবর্ষের তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং ‘থিম সং’ পরিবেশন করা হয়। এছাড়া, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অভিযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সক্ষম, দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি করতে হবে।

Post MIddle

এক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, বাঙালি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গবেষণা-উদ্ভাবন, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, প্রগতিশীল ভাবনা, জাতি-গঠন ও দেশাত্ববোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাঙালির আশা আকাক্সক্ষার এক অনন্য বাতিঘর এ প্রতিষ্ঠান। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্যাপনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উদারতা ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে তাদের অবদান রাখতে হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিবর্তন ও উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অব্যাহতভাবে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আন্তর্জাতিক জ্ঞানরাজ্যেও এই প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান প্রজন্মকে যোগ্য করে গড়ে তোলাই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক আচরণের উৎকর্ষ সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জন ও সরকারের ‘পরিপ্রেক্ষিত রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে আমাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।

এ লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলাম পুনর্গঠনসহ মৌলিক গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ সফল করার ক্ষেত্রে তিনি অ্যালামনাই এবং শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, উৎসবের উদ্বোধনী দিনসহ ২ ডিসেম্বর,৩ ডিসেম্বর, ৪ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।

প্রথিতযশা শিল্পী ও সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ এবং নৃত্যকলা বিভাগের শিল্পীবৃন্দ ও অ্যালামনাইবৃন্দ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করবেন।

পছন্দের আরো পোস্ট