জমি কেনার আগে যা দেখে নিতে হবে

অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক

জনবহুল এ দেশে মানুষের তুলনায় জমি অপ্রতুল। ফলে প্রায়শঃই জমি নিয়ে দেখা যায় বিরোধ। পারিবারিক সমস্যাগুলোর মূল কেন্দ্র হয়ে উঠে জমি-জমা। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে এ সংস্যাগুলো এখন নিত্য দিনের সংকট হয়ে উঠেছে। আবার নতুন জমি কিনে অনেকেই ভূগেছেন নানা সমস্যায়। এ সব সমস্যা সমাধান বছরের পর বছর কাটছে এসি ল্যান্ড অফিস বা সংশ্লিট আদালতে। ভোগান্তিতে আছে যুগ-যুগ ধরে। ফলে জমি কিনার একজন ক্রেতাকে আগে অবশ্যই কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বিক্রেতার মালিকানা এবং জমির বিভিন্ন দলিল ভালোভাবে যাচাইবাছাই করতে হবে। যাতে পরবর্তীতে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়।

জমি কেনার আগে যেসব বিষয় যাচাই করতে হবে:
১. জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে হবে।
২. জমির তফসিল অর্থাৎ জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণ জানতে হবে।
৩. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিএস; এসএ; আরএস পর্চা দেখতে হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সিটি জরিপ খতিয়ান দেখতে হবে।
৪. বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে ভূমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয় দলিল বা ভায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত হতে হবে।
৫. বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ান বিক্রেতা বা তিনি যাঁর মাধ্যমে প্রাপ্ত তাঁর নামে অস্তিত্ব (যোগসূত্র) মিলিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে ওয়ারিশনামার আপডেটেড কপি দেখা যেতে পারে।
৬. উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার শরিকদের সঙ্গে বিক্রেতার সম্পত্তি ভাগাভাগির বণ্টননামা (ফরায়েজ) দেখে নিতে হবে।
৭. বিক্রেতার কাছ থেকে সংগৃহীত দলিল, খতিয়ান/পর্চা  ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে তলবকারী /স্বত্বলিপি রেজিস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
৮. সর্বশেষ নামজারি পর্চা, ডিসিআর,খাজনা দাখিল (রসিদ) যাচাই করে দেখতে হবে।
৯. এবং খাজনা বিরতিহীনভাবে দেওয়া হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে।
১০. জমিটি সার্টিফিকেট মোকদ্দমা ভুক্ত কি না, কখনো নিলাম হয়েছে কি না, তা তহশিল অফিস / উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জেনে নিতে হবে। কারন সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত সম্পত্তি বিক্রয়যোগ্য নয়।
১১. ভূমিটি খাস, পরিত্যক্ত/অর্পিত, অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিশকৃত কি না, তা তহশিল, উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।
১২. বিবেচ্য ভূমি কোনো আদালতে মামলা–মোকদ্দমাভুক্ত কি না, তা জেনে নিতে হবে। মামলাভুক্ত জমি কেনা উচিত নয়।
১৩. বিবেচ্য জমিটি সরেজমিনে যাচাই করে এর অবস্থান নকশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং দখল সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে বিক্রেতার মালিকানা ও দখল নিশ্চিত হতে হবে।
১৪. সাব–রেজিস্ট্রারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে জমির সর্বশেষ বেচাকেনার তথ্য জেনে নেওয়া যেতে পারে।
১৫. প্রস্তাবিত জমিটি ঋণের দায়ে কোনো ব্যাংক /সংস্থার কাছে দায়বদ্ধ কি না।
১৬. প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কি না, তা–ও দেখা প্রয়োজন।

Post MIddle

উপরোক্ত বিষয়াদি যাছাই বাছাই করে জমি ক্রয় করতে কোন ধরনের সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা নেই।

 

অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিকলেখক: অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক

রিয়েল এস্টেট এক্সিকিউটিভ।আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ

পছন্দের আরো পোস্ট