ঢাকার বাইরের কলেজে পড়েও ভালো করা সম্ভব

এসএসসি ও এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৫। করোনা পরিস্থিতির কারণে বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে বসেই মেডিকেল ও প্রকৌশলের জন্য নেন প্রস্তুতি। অনলাইনে ক্লাস করে দিকনির্দেশনা পান ভর্তি কোচিং উদ্ভাস থেকে। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ৫৯তম হয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে ভর্তির ক ইউনিটেও তিনি প্রথম হলেন।

এ মেধাবী মুখের নাম মেফতাউল আলম সিয়াম। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মেফতাউল বলেছেন, আমরা দেখাতে পারলাম যে ঢাকার বাইরের কলেজে পড়েও ভালো করা সম্ভব এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনের যোগ্যতাও আমরা রাখি।

বুধবার দুপুরে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হয়েছেন মেফতাউল আলম সিয়াম। তাঁর মোট নম্বর ১১৭ দশমিক ৭৫ (মূল পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৭ দশমিক ৭৫)। ক ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৪ হাজার ৫০৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ১৬৫ জন (পাসের হার ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ফেল ৮৯ দশমিক ২৪ শতাংশ)। ক ইউনিটের এই ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল গত ১ অক্টোবর। এ ইউনিটের মাধ্যমে এবার ১ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।

Post MIddle

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মেফতাউল আলম ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবেন। প্রথম হওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মেফতাউল আলম সিয়াম বলেন, ‘ক ইউনিটের পরীক্ষা ভালো হয়েছিল, কিন্তু ফল এতটা ভালো হবে, তা আশা করিনি। প্রথম হব, তা আশা করিনি। ফলাফল দেখে খুবই ভালো লাগছে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা মা–বাবার প্রতি। তাঁরা আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। মা–বাবাই আসলে এত দূর আসতে সাহায্য করেছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই সরকারি আজিজুল হক কলেজের সম্মানিত শিক্ষকদেরও, যাঁদের দিকনির্দেশনায় এত দূর আসতে পারা।’

ঢাকার বাইরের কলেজের অনেকের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা কাজ করে বলে মনে করেন মেফতাউল আলম৷ তিনি বলেন, ‘এবার আমরা দেখাতে পারলাম যে ঢাকার বাইরের কলেজে পড়েও ভালো করা সম্ভব এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনের যোগ্যতা আমরাও রাখি।’ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে মেফতাউল আলম বলেন, এইচএসসির মডেল টেস্টের সময় থেকে উদ্ভাস কোচিংয়ের সঙ্গে ছিলাম। করোনা পরিস্থিতির কারণে দুর্ভাগ্যবশত আমাদের এইচএসসি পরীক্ষাটা হলো না। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিটা অনলাইনেই নেওয়া হলো। ঢাকায় এসে কোচিং করারও সুযোগ পাইনি, যা হয়েছে, সবই অনলাইনে। প্রথম থেকেই আমি মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নিইনি।উদ্ভাস আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি পাঠ্যবইকেই বেশি প্রেফার করতাম এবং বেশ কয়েকজন লেখকের লেখা পাঠ্যবই পড়তাম। পাশাপাশি উদ্ভাসের বইগুলোও পড়া হয়েছে।

মেফতাউলের মা বলেন, ‘আমার ছেলেটা প্লেতে পড়ার সময় যেভাবে পড়াশোনা করত, এখনো ঠিক একইভাবে পড়াশোনা করে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটা দিনের জন্য একটা মিনিটও সে নষ্ট করেনি। সৃষ্টিকর্তা আমার ছেলেকে যে ধৈর্য দিয়েছে, এত ধৈর্য কোনো শিক্ষার্থীর হয় কি না, জানি না।’ কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন।

গত এপ্রিলে প্রকাশিত মেডিকেলের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ২৮২ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে ৫৯তম হয়েছেন মেফতাউল আলম। পড়ার সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এর আগে মার্চে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম হন। শুধু মেফতাউলই নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে এবার দ্বিতীয় হওয়া আসিফ করিম ও তৃতীয় হওয়া নিত্য আনন্দ বিশ্বাসও ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন। আসিফ পড়েছেন চট্টগ্রাম কলেজে আর নিত্য পড়েছেন খুলনা পাবলিক কলেজে।

পছন্দের আরো পোস্ট