স্মার্টফোন বনাম আমাদের জীবন

নাঈমা আক্তার রিতা।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোন নিঃসন্দেহে একটি নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু। বিশ্বজগতকে আপন হাতের মুঠোয় পুরতে ইন্টারনেট সংযুক্ত একটি স্মার্টফোন আজ সময়ের চাহিদা ও দাবি। এটি ছাড়া যেন দৈনন্দিন ও স্বাভাবিক কাজকর্ম অনেকটাই অকেজো ও স্থবির। তবে এই ফোনের সঠিক ব্যবহার কৌশলের অজ্ঞতা ও অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ভুল খাতে ব্যবহার আজ সভ্যতার জন্য ভয়ংকর অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে বর্তমান প্রজন্মও প্রযুক্তি নির্ভর। এর মধ্যে স্মার্টফোন নির্ভরতার অবস্থান সবচেয়ে উপরের সারিতে। কোলের ছোট্ট শিশুটিকে গান বাজিয়ে ফোনটা হাতে না দিলে খাবার মুখে তুলেনা, প্রথম শ্রেণির বাচ্চাটাও গেমস খেলতে না দিলে পড়তে বসেনা, কৈশোরে পা রাখা ছেলেমেয়ের দল ফেসবুকিং, চ্যাটিং, অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখা, নিষিদ্ধ সাইট ভ্রমণের অক্লান্ত চেষ্টাসহ নানান ভাবে স্মার্টফোন নির্ভর জীবন পার করছে। দেশের যুবসমাজ আজ রাত জেগে পড়াশোনার পরিবর্তে  পর্নোগ্রাফি দেখছে, হেডফোন কানে লাগিয়ে সারারাত কথা বলছে, চ্যাটিং করছে, ইউটিউবে অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখে মূল্যবান সময় নষ্ট করছে, পাবজি খেলায় ডুবে আছে, ক্লাসের সবচেয়ে ভালো বন্ধুটি পাশে বসে থাকা স্বত্বেও তাকে সময় না দিয়ে ফোনে নিমগ্ন। এভাবে তথ্য প্রযুক্তির খারাপ গুণগুলোকে আয়ত্ত করে দিনকে দিন অসামাজিক রোবট হয়ে যাচ্ছি আমরা।

তাই নিজেদের প্রয়োজনে, দেশ ও দশের প্রয়োজনে, সভ্যতার প্রয়োজনে এখনি আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক দিকগুলোকে বর্জন করে, সকল ইতিবাচক দিকগুলো আয়ত্ত করতে পারলে তা হবে সত্যিই আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
অনলাইনে পত্রিকা পড়া, দেশ বিদেশের সকল ধরনের বইয়ের ঢ়ভফ পড়ার সুবিধা, অজানা সব তথ্যকে জানার সুযোগ, শিক্ষামূলক ভিডিওসহ নানান ভাবে স্মার্টফোনকে ব্যবহার করে দেশের তরুণ সমাজ আধুনিক, যোগ্য ও স্মার্ট রুপে গড়ে উঠতে পারে। তবে স্নার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার অবশ্যই ক্ষতিকর।

Post MIddle

এই মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে নোমোফোবিয়া নামক এক নতুন রোগের উৎপত্তি। মোবাইল সবসময় ঠিক জায়গায় আছে কিনা, মোবাইল হারানোর ভয় থেকে মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক সমস্যা। গবেষকরা এই ভয়জনিত অসুখের নাম দিয়ছেন নোমোফোবিয়া। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ ভারতীয় তরুণরা এ রোগের শিকার। যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টি বৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া হেডফোন ব্যবহার করে উচ্চশব্দে গান শুনলে অন্তকর্ণের কোষ গুলোর ওপর প্রভাব পড়ে এবং মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করে। একসময় বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরের অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতি হয়ে আর্থরাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও মোবাইল থেকে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়। গবেষকদের দাবি, এ ক্ষতিকর তরঙ্গ শুক্রাণুর উপর প্রভাব ফেলে এবং শুক্রাণুর ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে। যা অদূর ভবিষ্যতে বংশবৃদ্ধির অন্তরায় হতে পারে। এছাড়াও মস্তিষ্কে ক্যানসারের সৃষ্টি এবং স্লিপ ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি তৈরি হয়।

আধুনিকতার আশীর্বাদে এসব ঝুঁকি আমাদের রোজকার নিত্যসঙ্গী। যা আমরা চাইলেও পুরোপুরি এড়াতে পারি না। তবে এর মাত্রা কমাতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে পারি। চার্জ চলাকালীন সময়ে ফোন ব্যবহার না করা, কথা বলার সময় মোবাইল ফোনটিকে বাম কানে ধরে কথা বলা, অব্যবহৃত অ্যাপস আনইন্সটল করা, মোবাইলের সিগন্যাল বারে হাত না রাখা, অতিরিক্ত চার্জ না দেওয়া, নিম্নমানের এক্সেসরিজ ব্যবহার না করা, ঘুমের সময় ফোন দূরে রাখা, ঘুমের কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে ফোন ব্যবহার বন্ধ করা, সর্বোপরি স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আমরা এসব ভয়ংকর ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনতে পারি।

নাঈমা আক্তার রিতা
শিক্ষার্থী,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

পছন্দের আরো পোস্ট