বিষন্নতা ও হতাশা দুর করতে পড়ুন সূরা “আদ দোহা”
সৈয়দা মুনিয়া জান্নাত।
ছোট্ট এই জীবনে হরেকরকম পরিস্থিতির শিকার হয় মানুষ । দুঃখ, কষ্ট, হাসি, কান্না, বিষন্নতা এগুলো যেন মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী । একের পর এক অশান্তি সাড়াশব্দবিহীন খেলে বেড়ায় অস্থির মনের আঙিনায় ।সত্যি বলতে কেউ প্রকৃত সুখী নয় ।
নীল সাদা ভার্চুয়াল জগতে যা দৃশ্যমান হয় তা কঠিন অভিনয় মাত্র । প্রত্যেকটা মানুষকেই একটু হলেও দুঃখ স্পর্শ করে । না চাইলেও একটা মানুষের কারণবিহীন মন খারাপ হয় । মানুষ যখন একাএকা থাকে সে তখন আরোবেশি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে , দুশ্চিন্তারা বলতে গেলে আঁকড়ে ধরে । আজ যেই মানুষটাকে হাসতে দেখছেন, কালই তাকে মারাত্মক কষ্টের সম্মুখীন হয়ে আছে এমন দেখা লাগতে পারে,একটুআগে যেই মানুষটা খুব খোঁজ খবর নিলো আপনার কিছুক্ষন পরই এমন শুনতে হতে পারে সেই মানুষটা আর এই রঙিন দুনিয়ায় নেই ।
খুব আফসোস লাগবে তখন যদি মানুষটাকে তার দুঃখ শেয়ার করার সময় প্রায়োরিটি না দিন, ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দিন ! কারন মানুষ কিন্তু খুব সহজেই একটা মানুষকে জীবনের ট্র্যাজিক কাহিনীগুলো শেয়ার করতে পারেনা, ভরসা পেলেই বরং আপন ভেবে মনের দুঃখ ভাগাভাগি করে একটু হালকা হতে চেষ্টা চালায় । কিন্তু সত্য কাহিনী কি জানেন ?বর্তমানযুগের মানুষ কেউ কারো কষ্টের কাহিনী শুনতে রাজীনা, সবাই চায় ভালো সময়ের মিষ্টি গল্প শুনতে । কিন্তু খারাপ সময়ে দূর থেকেও একটা মানুষকে সাপোর্ট দিলে যে ঐ মানুষটা কিছুটা হলেও ভালো থাকে এই জিনিসটাও কেউ বুঝতে চায়না, স্বার্থপরতার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে মানুষ ।
এই যে আশেপাশে এত আত্মহত্যা হচ্ছে ভালোমতো খোঁজ নিলে জানা যাবে সেই অসহায় মানুষগুলোর এক একটি সেকেন্ড দমবন্ধকরভাবে কেটেছে । অনুপ্রেরণা দেয়ার কেউ ছিলনা পাশে যে, চ্যালেঞ্জিং এই জীবনে হেরে গেলেও জেতার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে ।আমার খুববেশি কাছের যারা আমি চেষ্টা চালাই প্রত্যহ তাদের খোঁজ নিতে যে প্রিয় মানুষগুলো কেমন আছে! কেমন করে কাটে দিন, মানসিকভাবে ঠিক আছে তোহ!কেউ কষ্টে থাকলে তাকে কিভাবে সেই কষ্টের কারাগার থেকে সহজে মুক্তি দেয়া যায় সেই পথ দেখিয়ে দিতে হবে ।
মুসলিমদের জন্যে বিষন্নতা ও হতাশার প্রধান ঔষধ হচ্ছে সূরা “আদ দোহা” যেমন আপনি বললেন “আপনার জীবনে অনেক কষ্ট” আল্লাহ তখন বলেন “নিশ্চই কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি ূকোরআন ৯৪:৬ূ” এই সূরাটি যে বাংলা অর্থসহ প্রতিদিন একবার হলেও তেলাওয়াত করবে তীব্র কষ্টেরা সেই মানুষকে ছুঁতে পারবেনা, চেষ্টা করেই দেখুন ।
যে যেই অবস্থায়ই আছেন আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করুন যে বেঁচে আছেন । কত মানুষ হাজার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারেনা । দুঃখূকষ্টগুলো শেয়ার করতে হবে প্রতি নামাজের সেজদায় , মোনাজাতে মহান আল্লাহর কাছে । কোন সময় যে দোয়া কবুল হয়ে যাবে চিন্তাও করতে পারবেননা । হাজার কষ্টে থাকলেও সুইসাইডাল এটেম্পট নেয়া যাবেনা , সেলফ হার্ম করা যাবেনা । নিজের মন খারাপের সাথে যুদ্ধ করে হলেও বেঁচে থাকতে হবে । কাউন্সিলিংয়ের আশ্রয় নিতে হবে , মেন্টাল হেলথ এর ইম্প্রুভমেন্টের জন্যে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাতে হবে ।
আমাদের দেশের ৮০% মানুষেরা ভাবেন সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যাওয়া মানেই ঐ ছেলেমেয়ে পাগল হয়ে গেছে । এই একটা কারনে মানুষ আরো ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যায় , সমাজের লোকে কি বলবে তা ভেবে সঠিকসময়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়না যা একটা মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষকে নীরবে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় । এই দেশের মানুষের মেন্টালিটি বদলাতে হবে, কেউ কিন্তু ইচ্ছা করে অসুস্থ হয়না কিছু পরিস্থিতি একটা মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে । আপনি যদি কাউকে কষ্টের সময়ে সাহায্য করতে না পারেন , পাশে থেকে ভরসার হাত বাড়িয়ে দিতে না পারেন তবে হাজারমাইল দূরে থাকেন তবুও ধনুকের তীর হয়ে কাউকে তীব্রভাবে আঘাত করবেন না অনুরোধ ।
অনেকসময় কিন্তু মানুষ অন্যের দেয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরেও দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে । যাইহোক, প্রত্যেকদিন অল্প কিছু সময় বের করে হলেও আশেপাশের চুপচাপ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর মনের খবর জানতে চেষ্টা করুন । কেমন আছে জিজ্ঞেস করলেও কিন্তু একটা মানুষ ভীষণ খুশি হয় এই ভেবে যে ঐ মানুষটার খবর নেয়ার কেউ আছে । কাউকে তার খারাপ সময়ে দূরে ঠেলে দিবেন না লাইনটি দুইবার পড়ুন ।
আপনার একটু আন্তরিকতাই পারে একটা মানুষকে আস্তেআস্তে কঠিন সময় থেকে মুক্তি দিতে । আরেকটা রিকোয়েস্ট খুববেশি মন খারাপ লাগলে নিঃস্বার্থভাবে যারা ভালোবাসে “মা-বাবা তাদের সাথে ভালো সময় কাটান দেখবেন আপনাআপনি হতাশ মনে প্রশান্তি চলে আসবে ।
ইয়াসিন সূরার পাওয়ারফুল আয়াতটি বেশিবেশি পড়ুন প্রতিদিন “সালামুন কাওলাম মীর”রাব্বীর রাহীম” এই আয়াতটি বেশি বেশি জিকির করলে জীবনের ছোটবড় সকল সমস্যা দূর হয়ে যায় ।
পত্রিকা বা ফেইসবুকের নিউজফিড ঘাটলেই দেখতে পাবেন যে “এই দশ মাসে করোনার মৃত্যু থেকে আত্মহত্যা বেড়েছে খুববেশি” ।তাই বিপদে ধৈর্য্য ধরুন হেরে গেলে চলবেনা । এই দোয়াটিও বেশি করে পড়ুন “হাসবুনাল্লাহ ওয়া নিয়ামাল ওয়াকিল” অর্থ আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ।