ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে কেনো পড়বেন ?

মোবাশ্বরা ওহী

সাহিত্য মানেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাস্তব জীবনের বহি:প্রকাশ। যেখানে লেখক/কবি কোনো বাস্তব চিত্রের আগে পিছে পরখ করে তার সাথে কিছুটা রং মিশিয়ে কবিতা/গল্প/উপন্যাস/নাটক হিসেবে রূপ দিয়ে থাকেন। ইংরেজি সাহিত্যের বেলায় ও তার ব্যতিক্রম নয়। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়া মানে শুধু ইংরেজি জানা নয়, জানা যায় প্রত্যেক যুগের সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে।এছাড়া আত্মতৃপ্তি অর্জনের জন্য ও ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়নের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সাহিত্য নিয়ে পড়া মানে জীবন সম্পর্কে জানা, বিভিন্ন চরিত্র সম্পর্কে জানতে পারা। ইংরেজি যেহেতু আন্তর্জাতিক ভাষা সেহেতু ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়লে বিভিন্ন চরিত্র, তাদের সূত্র এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। তাছাড়া একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ইংরেজদের নিয়ে ভালো ধারণা না থাকাটা অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক দেখায়। আর তাদের শাসন ব্যবস্থা, উদ্দেশ্য এবং তাদের নিয়ে অন্যদের অনুভূতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে ইংরেজি সাহিত্য চর্চার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া ইংরেজি সাহিত্যে পাঠ্য করা বইসমূহকে পাঠ্যবই না ভেবে শেখার উদ্দেশ্য নিয়ে মনে-প্রাণে ধারণ করলে একদিকে ইংরেজি শব্দের সমৃদ্ধি ঘটানো যেমন সম্ভব তেমনি একঘেয়েমি থেকে মুক্তি নিয়ে অবসরের সঙ্গি এবং আনন্দের উৎস হিসেবে ও ধরে নেয়া সম্ভব।

ইংরেজি সাহিত্য মানে ইংরেজি ব্যাকরণের দিকে নজর দিয়ে পড়ে থাকা নয় বরং অধ্যায়নের পাশাপাশি ব্যাকরণের ভুল নিজেকেই শুধরে নেয়ার দায়িত্ব নিতে হয়। ইংরেজি সাহিত্যে পড়তে হলে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা কিংবা মানবিক বিভাগ; নির্দিষ্টভাবে কোনোটির পরোয়া করতে হয় না। বরং এইচএসসি পরীক্ষা পাশের পরবর্তী সময়ে যে কেউ এই বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা পোষণ করতে পারে।

Post MIddle

সাহিত্যে পড়া মানে লেখালেখির দ্বার কিছুটা হলেও উন্মোচিত হয়ে যাওয়া। কারো লেখালেখির অভ্যাস থাকলে তার লেখালেখিকে আরো সুশোভিত এবং মার্জিত করে দেয় সাহিত্যে অধ্যয়ন। কবিতা, গান, ছোট গল্প উপন্যাস, নাটক, অনুচ্ছেদ; সবকিছুই বাংলায় এমনকি ইংরেজিতেও লেখা সম্ভব যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে। ইংরেজি সাহিত্য মানে শুধু উইলিয়াম শেক্সপিয়র, জন মিল্টন, জিওফ্রে চসার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের লিখিত কিছু দুর্বোধ্য রচনা নয়, বরং জীবনের স্পষ্ট পরিণতি এখানেও সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। ছোট গল্প, কবিতা অনেক সময় বাধ্য হয়েই নিজ থেকে লেখা শিখতে হয়, ফলে লেখালেখির ধাপ অনেকটা এগিয়ে যায়। কাব্যিক ভাষায় দশ-পাঁচটা লাইন লিখে কিংবা ছোটগল্প লিখে নিজের মনের ভাষা যদি কোথাও নিরাপদভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখা যায়, তাহলে ক্ষতি কোথায়! পরবর্তী পাঠে এটা অতীতের আনন্দ, দুঃখ-বেদনা, সফলতা-ব্যর্থতার সাথে পরিচয় করিয়ে নতুন প্রেরণার উৎস যোগায়।

অনেকের ধারণা সাহিত্য নিয়ে পড়লে চাকরির বাজার সংকীর্ণ হয়ে যায়, এটা ঠিক নয়। কেউ নিজেকে খুব ভালো ছাত্র হিসেবে যোগ্য করে তুলতে পারলে শিক্ষকতা পেশাকে স্বাগত জানাতে পারেন। এছাড়া কর্পোরেট জগতে ইংরেজি সাহিত্যের বেশ কদর রয়েছে। কেউ চাইলে ব্যাংক, বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে নিজের পেশাকে দেখে নিতে পারেন।লেখালেখিতে দক্ষ হলে কেউ কেউ বাংলা বা ইংরেজি দৈনিক সাংবাদিক হিসেবে চাকরি করতে পারেন। কিংবা বাচনভঙ্গি সুন্দর হলে টিভি সাংবাদিক অথবা রেডিও জকি হিসেবে ও নিজেকে বেছে নিতে পারেন। এছাড়া কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে ও কাজ করতে পারেন। অতিরিক্ত এমবিএ ডিগ্রি নিয়ে কাজ করতে পারেন মার্কেটিং, ফিন্যান্স বিভাগে।

সাহিত্য হচ্ছে মনের গভীর সংলাপ। তাইতো সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দেখিয়ে রবি ঠাকুর বলেছেন, ‘অন্তরের জিনিসকে বাহিরের, ভাবের জিনিসকে ভাষায়, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের এবং ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করিয়া তোলাই সাহিত্যের কাজ।’ সাহিত্য মন-মানসিকতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে, সেটা যে ভাষায় প্রাধান্য পাক না কেনো।যেহেতু ইংরেজি ভাষার প্রতি বর্তমান চাকরি বাজারগুলোতে চরম চাহিদা রয়েছে সেহেতু সবকিছু ভেবে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখানোটা স্বাভাবিক। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকালীন সময়ে কেউ পছন্দের বিষয়টি হাতছাড়া করে ফেললে হতাশ না হয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে সঙ্গি হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন।

মোবাশ্বেরা ওহী

মোবাশ্বরা ওহী

ইংরেজি বিভাগ। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

পছন্দের আরো পোস্ট