৪২ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতাত্তোর প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে। ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গাজীপুর বোর্ড বাজারে এবং ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অপর এক আদেশে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়।

১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩ শত ছাত্র ভর্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক যাত্রা। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮টি অনুষদের ৩৪টি বিভাগে ১৫ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ২৯১ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৯৩ জন। বর্তমানে ৩৯৭ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৫৯ জন কর্মকর্তা, ১৭৭ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৭৭ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন।

উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল (আইকিউএসি) কাজ করে যাচ্ছে।

এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

করোনা সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা ও হলসমূহ বন্ধ থাকলেও ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলা ও এর ব্যাপকতা রোধকল্পে অফিসসমূহ বন্ধ থাকলেও অতি জরুরি এবং অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু রাখা হয়েছে।

বর্তমানে পরিবহন পুলে ৪৩টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে বাস-মিনিবাস ১৬টি, এসি কোস্টার গাড়ি ৬টি, এ্যাম্বুলেন্স২টি।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট দূরীকরণে হলসংখ্যা ৮টিতে উন্নীত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি ছাত্রহল এবং ৩টি ছাত্রীহল।

Post MIddle

৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগাপ্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পাসে ৯টি দশতলা ভবন ও ১টি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ, ১২টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ, গভীর নলকূপ স্থাপন, ২টি ৫০০ কেভি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সোলার প্যানেল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।

করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর-পরই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ‘করোনা প্রতিরোধ সেল’ গঠন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি সংক্রান্ত যে কোন প্রয়োজনে ০১৭২৭-৩০০১১৯ নম্বরে ফোন করলে স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। মেডিক্যাল সেন্টারে সাধারণ ইউনিটের পাশাপাশি ডেন্টাল ইউনিটও রয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের সাথে সমন্বয় রেখে ডিজিটাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল।

৪২তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবার মুজিব শতবর্ষে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্তৃপক্ষের সংকল্পের সাক্ষর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একরের প্রতি ইঞ্চিতে দৃশ্যমান।

জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অবহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সন্নিকটে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। মুজিবীয় চেতনায় স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলফটকের সামনে গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘মুক্তির আহ্বান’ ও ‘শাশ্বত মুজিব’ উদ্বোধন করা হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিববর্ষ ডিজিটাল লাইব্রেরি একসেস সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার বই ডিজিটাল লাইব্রেরির আওতায় আনা হয়েছে। এ অটোমেশনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব সহজে সার্চ করে কাঙ্খিত বই খুঁজে পাবেন এবং বই বাসায় নিয়ে পড়তে পারবেন। বর্তমান প্রশাসন করোনা দুর্যোগ মোকাবেলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সচল এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে।

৪২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উপাচার্যের প্রত্যাশা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। ৪২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করাসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে শিক্ষা ও গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, একুশ শতকের উপযোগী করে শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদরূপে গড়ে তোলা এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনার লক্ষ্যে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলকে একনিষ্ঠ ও সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে ৷ উপাচার্য ৪২তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্যকে নিজের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ৷

পছন্দের আরো পোস্ট