বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জবি শিক্ষার্থীর ক্ষুদ্র অভিব্যক্তি

রিদুয়ান ইসলাম।

এইতো ক’টা দিন আগে ইন্টারমিডিয়েট থাকাকালীন সময়ে মনে স্বপ্ন বুনেছিলাম একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার। আর সেই রঙমাখানো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সম্মুখীন হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়। আল্লাহর রহমতে, শুভাকাঙ্ক্ষীদের দোয়ায়, মা- বাবার অনুপ্রেরণায়, নিজের প্রচেষ্টায় আজ আমি একজন পাবলিকিয়ান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হতে পারাটা ছিলো আমার পরম সৌভাগ্য।

জানুয়ারি মাসে প্রথম যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করি, মনের মধ্যে কী যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিলো। সবাই আমার অপরিচিত। ক্লাসে ঢুকে আরো একঝাঁক অপরিচিত মুখের মেলা দেখতে পেলাম। এক এক করে সবার সাথে পরিচয় হতে থাকি। তেমনই পর্যায়ক্রমিকভাবে বড় ভাই-আপুরা এসে আমাদের সাথে খুবই বন্ধুসুলভ ভাবে পরিচিতি নেয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ইমিডিয়েট সিনিয়ররা নবীনবরণের মাধ্যমে জাঁকজমক করে আমাদের সবাইকে বরণ করে নেয়। এত অল্প সময়ে অচেনা মানুষগুলোর সাথে যে পরিচিত হওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হলে হয়তো কখনো জানতামই না। তারপর ডিপার্টমেন্টের নবীনবরণে স্যার ম্যাডামদের বক্তব্য শুনে আমাদের স্বপ্নের পথের সাড়তি বেয়ে চলার সাহসটা যেন বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

মাত্র ১১.১১ একর (প্রায়) জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্পাসটিতে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৭০০ শিক্ষক শিক্ষিকার মধ্যে যে আন্তরিকতা আর মিলবন্ধন তা খুবই বিরল। ক্লাস করে বের হলেই কোনো না কোনো শিক্ষকের সাথে দেখা হয়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে ছাত্র শিক্ষকের দূরত্ব খুব অল্প সময়েই কমে যায়। শিক্ষা, ঈমান, শৃঙ্খলা এই তিনটি নীতিমালা নিয়ে চলমান আছে জবি।

যদিও মহামারী করোনা’র জন্য বেশিদিন ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া হয়নি। তারপরও সবার মধ্যকার আন্তরিকতা সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করছে। চলমান মহামারীর মধ্যেও প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ‘ করোনা মোকাবিলায় জবিয়ানের পাশে জবিয়ান ‘ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপটি প্রায় তিন লক্ষ টাকা সাহায্য করেছে বিপদগ্রস্ত জবিয়ানদের পরিবারকে। এমন মহৎ কাজটি আমাদের ই বড় ভাই আপুরা করেছে। তাদের নিয়ে সত্যি ই আমরা গর্বিত। এখানে আমরা সবাই যেন একটা পরিবারের মত। আর এই পরিবারের একজন সদস্যের বিপদের কথা শুনে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করে পরিবারটি।

Post MIddle

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকাকালীন সময়ে সকালটা শুরু হতো লাল বাসে যাত্রা আর কিছু বেসুরা কণ্ঠের গান নিয়ে। ভার্সিটির যেকোনো অনুষ্ঠান যেমনঃ পয়লা বৈশাখ, বসন্তোৎসব, ডিপার্টমেন্টের নবীনবরণ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, শান্ত চত্বরে আড্ডা, টিএসসিতে চা এর আড্ডা, ক্যাফেটেরিয়াতে বন্ধুরা মিলে খাবার খাওয়া, পুরান ঢাকার বিরিয়ানি খাওয়া এখন অনেক স্মৃতি বিজড়িত আছে জগন্নাথকে ঘিরে।

পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এর অবস্থান ঢাকার সদরঘাটে। ১৮৫৮ সালে জগন্নাথ রায় চৌধুরীর হাতেখড়ির মধ্যে দিয়েই পারি জমায় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ। পরে তা ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ২৮ সংখ্যক আইনের মাধ্যমে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ এ রূপান্তরিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় (জবি) ১৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এসে পা রাখল।প্রতি বছর ২০অক্টোবর মহাধুমধামে পালন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি। এবার মহামারী করোনার জন্য তা আর হয়ে উঠলো না! তবে আগামীতে পূর্বের ন্যায় দিবসটি উৎযাপিত করা হবে সেই প্রত্যাশা রইলো।

এই ক্ষুদ্র জীবনে এটিই আমার প্রথম পরিচয়। আজ বুক ভরা গর্ব নিয়ে বলতে পারি আমি জবিয়ান। পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, এই জবি আমাকে দিয়েছে একঝাঁক স্বার্থহীন ভালোবাসার বন্ধু। যাদের নিয়ে পারি দিতে চাই ঐ সুদীর্ঘ পথ। প্রতিটি মূহুর্তে টিকে থাকুক আমাদের বন্ধুত্ব।

রিদুয়ান ইসলাম
প্রথম বর্ষ।বাংলা বিভাগ।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পছন্দের আরো পোস্ট