সম্পর্ক বজায় রেখে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান করা উচিত
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
সমাজ গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। আদর্শ শিক্ষকের হাত ধরেই তৈরি হয় আদর্শ ছাত্রছাত্রী। একজন মানুষের সফতার পেছনে শিক্ষকের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ওই ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারেন। একজন আদর্শ শিক্ষক কেবলমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, তিনি ছাত্রকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেন, সাফল্যের দিনেও নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেন। তিনি শুধুমাত্র জীবনে সফল হওয়া নয়, কিভাবে একজন ভাল মানুষ হতে হয় তাও শেখান, গড়ে তুলেন মানুষের মতো মানুষ।
বাবা মায়ের পর সন্তান যাঁদের কাছে সব থেকে বেশি সময় কাটায় তাঁরাই শিক্ষক। শুধু বইয়ের শিক্ষায় নয় জীবনের পাঠেও দীক্ষিত করেন। শিক্ষকতা মহান পেশা, পাশাপাশি জটিলও বটে। এই পেশার উন্নয়নে জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হয় সর্বাগ্রে। আর প্রয়োজন হয় ইতিবাচক মনোভাবেরও। একজন শিক্ষক তাঁর পেশার উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিনিয়ত নব নব জ্ঞান ও নতুন নতুন কৌশলের সন্ধান করে থাকেন। পাঠদানকে শতভাগ সফল করতে নতুন নতুন পদ্ধতি/কৌশল, প্রযুক্তি ও আধুনিক জ্ঞান-গবেষণার সন্ধানে নিরলস প্রচেষ্টায় নিজেকে সর্বদা সচেষ্ট রাখেন। আর তাকে এসব পদ্ধতি ও কৌশলকে আয়ত্ত করতে প্রতিনিয়ত জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন সাধন এবং যথাসময়ে যথোপযুক্ত জায়গায় প্রয়োগ করার প্রতি ইতিবাচক নজরও দিতে হয়।
একজন শিক্ষক তার পেশাগত মূল্যবোধ, আত্মপ্রত্যয় ও বোধগম্যতার সমন্বয় ঘটিয়ে শ্রেণি-পাঠদান সার্থক ও ফলপ্রসূ করেন। শুধু পাঠদানই থেমে থাকেন না বরং একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মনে স্বপ্ন বুনে দেন। তাদের উন্নত জীবনের স্বপ্নও দেখান। একজন শিক্ষক শুধু কাঙ্ক্ষিত বিষয়বস্তুর পাঠদানই করেন না, পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীর মনে দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, নৈতিকতাবোধ, মূল্যবোধ সৃষ্টিতেও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।
অধিকন্তু কায়িক শ্রমের মর্যাদা, নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ, সৃজনশীলতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো, সামাজিক অগ্রগতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে অপরিহার্য কূশলী হিসেবে শিক্ষক সম্পৃক্ত থাকেন। আমাদের গড়ে তোলার কারিগর হিসাবে ছিলেন শিক্ষকরা। স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক একজন অন্যজনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাঠদান ও গ্রহনই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নয়। বরং বন্ধুত্বসুলভ আচরণ ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠলেই প্রকৃত পাঠদান সম্পন্ন হবে।
পাঠদানকালে শিক্ষক কখনও ভুল ধরিয়ে দেন, কখনও নতুন জিনিস শিখিয়ে দেন, কখনও বকুনি দেন, কখনও আবার স্নেহের সঙ্গে নিজের কাছে টেনে নেন। প্রতিনিয়তই তাঁরা নিরলস পরিশ্রম দিয়ে তাঁদের বিরামহীন জ্ঞান উজাড় করে গড়ে তুলছেন একের পর এক ছাত্রছাত্রী। দেশের জন্য তৈরি করছেন মেধাসম্পদ। যে সম্পদ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সহায়ক। তাই শিক্ষকদের প্রতি সকলের উপযুক্ত শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। এই শ্রদ্ধাবোধের মাত্রা আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন উঠে যাচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্ক বজায় রেখে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে শিক্ষকদের সর্বদা শ্রদ্ধা ও সম্মান করা উচিত