সফলতার জন্য প্রয়োজন টাইম ম্যানেজমেন্ট

সৈয়দা মুনিয়া জান্নাত |

তরুণ প্রজন্মের উজ্জ্বল মেধাবী এক নক্ষত্রের সাথে পরিচিত করিয়ে দিবো আজ সবাইকে | সৈয়দ নাজমুস জাওয়াদ | লেখাপড়া ২৪.নেটের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে সৈয়দা মুনিয়া জান্নাত |

ছোটবেলা

আলাপনের শুরুতেই আমি lekhapora24.net এর প্রিয় “সৈয়দা মুনিয়া জান্নাত” আপুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে ইন্টারভিউ পর্বে স্বাগত জানানোর জন্য | ছোটবেলা থেকে যদি বলতে হয় আমি প্রচন্ড চঞ্চল একটা ছেলে ছিলাম | আমার শ্রদ্ধেয় বাবা সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন সেই সুবাদে আমরা বাংলাদেশের প্রায় অনেক অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছি | সেই জায়গাগুলোতে আমরা বাংলো স্টাইলের বাড়িগুলোতে উঠতাম ঘুরতে গেলে নয়তো উঠা হতো ক্যান্টনমেন্টের বিরাট বাসায় |

মজার স্মৃতি

আমি একজায়গায় স্থির থাকতামনা | এমনও ঘটনা আছে মা বা বাসার কেউ আমায় এক দরজা দিয়ে টেনে নিয়ে এসেছে তোহ আমি আবার অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতাম খেলার উদ্দেশ্যে | খেলার প্রতি শৈশবে আমার প্রচন্ডরকমের ঝোঁক কাজ করতো | তাই বলে পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়েছি ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় ! পড়াশোনার ব্যাপারে আমি ছিলাম খুব সিরিয়াস |

খেলাধুলা

বেশিরভাগ সময় আমি স্কুল থেকে ফিরে ইউনিফর্ম চেইঞ্জ না করেই দেখা যেত পড়ার টেবিলে বসে পড়তাম স্কুলের সব পড়া শেষ করে উঠতাম তারপর আবার সেই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতাম | খেলাধুলার প্রায়োরিটি ছিল আমার কাছে সবার আগে |

 

পড়ালেখা

আমি বর্তমানে পড়াশোনা করছি বাংলাদেশের টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে,যেটা পুরা দক্ষিণ এশিয়ার মাঝে প্রেস্টিজিয়াস সরকারি গভ. ইউনিভার্সিটি হিসেবে খ্যাত | এখানে আমি Yarn Engineering ডিপার্টমেন্টে পড়ছি | ভর্তি পরীক্ষার পর চান্স হয়ে যাওয়ার পর খোঁজখবর নিয়ে জেনেছিলাম এটা এমন একটা জায়গা যেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি জব সেক্টরটাও অনেকবেশি নিরাপদ এবং ব্যবসা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ও খুব ভালোভাবে জানা যায় |

এই ডিপার্টমেন্টে পড়ার জন্যে আমার প্রাণের নটরডেম কলেজের সিনিয়ররা আমাকে শুরু থেকেই খুব বেশি অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে তাদের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন যারা এ বিষয়ে পারদর্শী তারাও অনেক আইডিয়া দিয়েছে |

তারা বলতো , তুমি যেই বিষয়ে পড়তে পছন্দ করো ঐদিকেই অগ্রসর হও এতে রেজাল্ট ও ভালো করবে | অতঃপর সবার উৎসাহে আমি এ ডিপার্টমেন্টকে নিয়ে আগানোর যাত্রা শুরু করলাম | পড়ালেখাটা আমি উপভোগ করি এখানে দেখা যাচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাশাপাশি বিজনেস রিলেটেড অনেককিছুই সহজে জানতে পারছি |

শিষ্টাচার

আমি কিন্তু মোটেও এতটা ভদ্র না আপু | হয়তোবা বাইরে যখন কাজ করি তখন আমি একরকম অনেকের কাছে ভদ্র মনে হয় আবার বাসায় আমি প্রচন্ড চঞ্চল , খুববেশি দুস্টামি করি | বন্ধুবান্ধব ও খুব কাছের মানুষেরা আমায় চিনে ভালোমতো ও দুস্টামির গোপন বিষয়গুলো জানেন | তারপরেও আমি যেহেতু আর্মি ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি তাই কোনো একটা জায়গায় গেলে ঐ জায়গার নিয়মশৃঙ্খলাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা,মানুষকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা সহকারে কথা বলা,একটা মানুষের মনের ভিতর কি চলছে তা পড়তে পারা,মানুষ কখন কোন মুডে আছে তা বুঝতে পারা ঐ অনুযায়ী নিজেকে সামলে রাখা এসব পরিবার থেকেই শিখেছি |

প্রতিদিন আমি নির্দিষ্ট কিছু সময় বের করে পরিবারের সাথে গুড কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে ভালোবাসি | এতে দেখা যায় পারিবারিক সম্পর্ক মধুর হয় অন্যদিকে পরিবারের মানুষের মনের অবস্থাটাও জানা যায় | একসাথে সবাই মিলে খাবার টেবিলে বসে আড্ডা দেই,সুখ-দুঃখের গল্প ভাগাভাগি করি | এইগুলা কিন্তু খুব বড় একটা শিক্ষা আমার কাছে মনে হয় যা আমি পরিবার থেকেই পেয়েছি শুকরিয়া | তোহ বলতে পারেন , আমার শিষ্টাচার শেখানোর কেন্দ্রবিন্দু পরিবার | আমরা কমবেশি সবাই জানি , “Charity begins at home” G.

পরিবারকে নিয়ে স্বপ্ন

আমার সমস্ত সুখের আশ্রয়স্থল হচ্ছে পরিবার | পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে নিয়ে বিশ্বের নানা দেশে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা আছে ! আমি ভীষণ ঘুরতে ভালোবাসি আমার পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষও সেইম | তাছাড়া পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে তাদের সকল মনের আশা পূরণের ও প্রবল ইচ্ছা আছে | আমার সংগ্রামী মায়ের পছন্দের জায়গা হচ্ছে ভারতের আগ্রা | সেইখানে মাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো সময় হলে ইনশাআল্লাহ তাছাড়া বড় দুই ভাইকেও তাদের পছন্দের জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবো এমন প্রত্যাশা আছে | আমার পার্সোনালি পছন্দের জায়গা হচ্ছে জার্মানি তোহ সেখানে যাবো ভবিষ্যতে আশা রাখি |

দেশের বাইরে যাওয়া

আমার মতে নিজ দেশে থেকেই স্বাবলম্বী হওয়া যায় খুব সহজে | বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে লেগে থাকতে হবে মূলত কঠোর পরিশ্রম করতে হবে তবেই আশানুরূপ গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব | কোনো কাজকেই ছোট মনে করা যাবেনা | সকল কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে | অহংকার ঝেড়ে ফেলতে হবে মন থেকে |

বর্তমানে অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছে এরা কিন্তু মারাত্মক সফল ও হচ্ছে অক্লান্ত পরিশ্রম করে | যার যেই পেশা ভালো লাগে সেই পেশাতেই মনোযোগের সাথে লেগে থাকা উচিত | দেশের প্রতি যেই একটা স্বর্গীয় টান কাজ করে তা আসলে বিদেশের প্রতি আসেনা |

নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে শিখতে হবে ঐজন্যে প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও আত্মচেষ্টা থাকতে হবে | নিজেকে একজন কর্মউদ্যোক্তা হিসেবে কল্পনা করে সেই রাস্তায় আগানো যেতে পারে বা যেকোনো কাজে টিমপ্লেয়ার হিসেবে থাকা যেতে পারে | যেকোনো কাজে সফল হওয়ার জন্যে বস হওয়ার মানসিকতা দূর করে লিডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে তবেই কিছু না কিছু করা সম্ভব | তবে বড় ডিগ্রি আনতে চাইলে বাইরের দেশে যাওয়া যেতে পারে কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ নিজেদের দেশেই আছে কিন্তু আমরা তা অনুসন্ধানে নামিনা আরকি |

কর্মক্ষেত্র ও সাফল্য

আমি আসলে কলেজ লাইফ থেকেই বিভিন্ন কাজের সাথে সংযুক্ত | নটরডেম কলেজে বিভিন্ন ফেস্ট হতো তোহ ঐখানে আমার সবসময় কাজ করা হতো | এরমাঝে আমরা দলীয়ভাবে একটা প্রজেক্ট করেছিলাম ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের প্রজেক্ট ঐটা আমেরিকান এম্বাসি থেকে হয়েছিলো , সেইখানে দলগতভাবে physics এ আমরা ফার্স্ট হয়েছিলাম তারপর ICT তে সেকেন্ড | এরপর থেকেই পার্সোনালি ভলেন্টিয়ারিং দিয়ে আমার কাজ করার যাত্রা শুরু হয় | BBLT এর টিম যেটা BYLC নামে পরিচিত সেখানে ও আমি কাজ করেছি social action project এ LIA বলা হয় Leadership In Action সতেরোদিন লেগেছিলো আমাদের সংশপ্তক দলের এ কাজে | আমার প্রিয় সংশপ্তক দল নিয়ে গর্ববোধ করি কারন অনেক কর্মঠ মানুষগুলোর সাথে ছিলাম ও এদের সাথে কাজ করতে পেরেছিলাম |

আমাদের সেখানে মূল কাজ ছিল Transgender Community কে সাধারণ মানুষের সাথে মিল করিয়ে দেয়া | তাদের প্রথাগত আর্নিং সোর্স আছে বা টাকা চেয়ে তোলা তারপর তারা যেসব কাজ পারে যেমন : ব্লক , বাটিক এগুলা যারা শিখতে চায় তাদেরকে শেখানো | সেই প্রজেক্ট অতঃপর নেদারল্যান্ডের যিনি রাষ্ট্রদূত “লিয়নি মার্গারাথা ” তার সামনে উপস্থাপন করে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম | বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছিল |

এরপর আমি ভাবলাম এতবড় পর্যায়ে কাজ না করে একদম শুরু থেকে কাজ করা উচিত | তোহ সেখানে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটা প্রোগ্রাম হয় Democracy Watch থেকে , প্রোগ্রামটার নাম Active Cityzens এটা পুরো পৃথিবীর অনেকগুলো দেশকে নিয়ে হয় | দেখা যায় যে 80/85 টা দেশ একসাথে হয় | তো সেক্ষেত্রে Democracy Watch এ কাজ করতে গিয়ে আমার অনেক বাচ্চাদের সাথে পরিচয় হয় | আমাদের প্রজেক্টের নাম ছিল “আশা” Anti Smoking to Anti Addiction মানে এখানে বাচ্চাদেরকে বোঝানো যে সিগারেট জিনিসটা খারাপ , সিগারেট থেকেই আস্তেআস্তে নেশার জগতে প্রবেশ করা হয় তোহ স্মোকিং থেকে কিভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি এসব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল |

এইখানে অলমোস্ট আড়াইহাজার স্টুডেন্টের সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম |সেসময় তাদের সাথে পরিচয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় যে কিভাবে তারা কি করছে , কিভাবে তারা নেশার জগৎ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারে এসব নিয়ে সচেতনতা তৈরী করেছিলাম |

যেহেতু আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্টুডেন্ট সেই সুবাদে কিছু মেশিন বানিয়েছিলাম যে একটা সিগারেট মানুষের কি পরিমান ক্ষতিসাধন করে এসব রিলেটেড | এখানে প্রায় আটমাসের মতো আমরা একটা ভলেন্টিয়ারিং ওয়ার্ক করেছিলাম | ফাইনালি সফল হওয়ার পর সেই Democracy Watch থেকে সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম |

আসলে কাজটা আমি ভীষণ উপভোগ করেছিলাম খুববেশি ভালো লেগেছিলো | তারপর শুরু হয়েছিল ব্র্যাকের সাথে কাজ করা | ব্র্যাকের একটা প্রজেক্ট “আমরা নতুন নেটওয়ার্ক” সেখানে প্রথম ব্যাচে প্রথম কাজ করেছি আমি | সেখানে মূলত দরিদ্র ও বস্তিবাসীকে নিয়ে কাজ করা হয় | বস্তির অনেক ছেলেমেয়ের প্রতিভা আছে দেখা যায় ওরা ইলেক্ট্রনিক্স এর কাজ পারে কিন্তু জায়গামতো এগিয়ে যেতে পারেনা আবার এদের অনেকের মা বাবা বা অন্যরা ব্লক,বাটিকের কাজ পারে বা রান্নাবান্নাতে পারদর্শী কিন্তু তারা বাইরে কাজের প্রসার করতে পারেনা | তো আমাদের গ্রূপের নাম ছিল “বুনন” | আমি গর্বিত এ গ্রূপে এদের নিয়ে কাজ করতে পেরে |

এখানে বয়স্ক মানুষকে কাজ শিখিয়েছিলাম আবার বাচ্চাদের একটা Digital Device কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় এবং পরবর্তীতে এ নিয়ে ব্যবসা করতে হয় সে বিষয়ে জানিয়েছিলাম | আমরা প্রায় তিনমাসের উপরে এ প্রজেক্টে কাজ করেছিলাম “বনানী কড়াইল বস্তিতে” |

মোটামোটি সাফল্য পেয়েছিলাম খুববেশি যে সাফল্য পেয়েছি ব্যাপারটা এমন না কিন্তু অনেক কাজ শিখতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ , যে কিভাবে সবধরণের মানুষের সাথে মেশা যায় , Communicate করা যায় , মূল কাজ তাদেরকে শেখানো যে কিভাবে একটা জায়গা থেকে তারা তাদের ব্যবসা শুরু করতে পারে বাসায় বসেই |

যাইহোক পরে একটা আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রাম করে আমাদেরকে ব্র্যাক এ ডাকা হয় | সেখানে নেপাল থেকে একজন judge ছিলেন ও আমেরিকা থেকে সম্মানিত একজন ছিলেন | তারা পরে সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করেছিলেন | ব্র্যাক থেকে এ কাজ করার পর আমাকে ” কো ফ্যাসিলেটর” পদে যোগ দেয়ার জন্যে অফার করা হয়েছিল | কিন্তু পড়াশোনা আর অন্যান্য কাজের প্রেশারের চাপে আর সে পদে জয়েন করা হয়নি |

Post MIddle

কিন্তু আমি এখনো তাদের সাথে Alumni বা অন্যান্য কাজের সাথে যুক্ত আছি | আমার আসলে এধরণের কাজ করতে খুব ভালো লাগে | ভলেন্টিয়ারিংএ এ পর্যন্ত আমার এসকল কাজই করা হয়েছিল | তারপর আমি আমার পরিচিত মহলে এ ভালো কাজগুলোতে অংশগ্রহণ করার জন্যে লিঙ্ক দিতাম |

তারপর আমার আবার Campus Ambassador হওয়ার ইচ্ছা ছিল মানুষকে বোঝানোর জন্য | আমি পরে BYLC এর ক্যাম্পাস এম্বাসেডর ছিলাম প্রায় একবছরের কাছাকাছি | আলহামদুলিল্লাহ এখন সবার সাথে সম্পর্ক ভালো | এখানে কোনো প্রোগ্রামে যদি 25 জনও নেয়া হয় তাহলে কম করে হলেও 5/6 জন বুটেক্সের থাকে | এজন্য সিনিয়র , জুনিয়র ও বন্ধুদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ |ধন্যবাদ জানালেও কম হবে কারন তারা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে | আর BYLC এর যারা কর্মকর্তা তারাও চমৎকার কিছু মানুষ , তারা আমাকে সম্পর্কের যে একটা চেইন আছে তা বজায় রাখার জন্যে ব্যাপক সহায়তা করেছে |

তারপর যখন দেশীয় পর্যায়ে কাজ করা হলো তখন একবছর কাজ করার পর আমি Hult Prize সম্পর্কে জানলাম | প্রথম যখন আমাদের ইউনিভার্সিটিতে Hult Prize আসে তখন ক্যাম্পাসের যিনি ডিরেক্টর ছিলেন তিনি আমাকে approach করেন যে তুমি চাইলে এখানে কাজ করতে পারো |এখানে প্রথমত দুই তিন স্তরের পরীক্ষা দিতে হয় | প্রথমে একটা written পরে ফর্মের মতো অনেককিছু লিখতে হয় |

তারপর বিদেশ থেকে ফোন দিয়ে ইন্টারভিউ নেয়া হয় তোহ ইন্টারভিউয়ে টিকে গেলে ফাইনালি আরো অনেককিছু দেখে তারা নিয়ে নেন আরকি | তখন আমি Campus Director ছিলাম সবচেয়ে জুনিয়র ব্যাচের আরকি | যদিও বাকিরা সবাই সিনিয়র ছিলেন তবুও আমার কাজটা করা পসিবল হয়েছে |

আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ছিলেন তার কথা না বললেই না ড. শায়েখ স্যার তিনি আমাকে প্রচন্ড সহায়তা করেছেন , ইসমাইল স্যার ও প্রচুর সাহায্য করেছেন | তাছাড়া সিনিয়র , জুনিয়র সবাই ভীষণ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন |আমিও চেষ্টা করেছি ফিক্সড কিছু প্রটোকল মেনে চলতে , যেনো সবাই সবকাজ বুঝে উঠতে পারে , কারো কোনোরকম কষ্ট না হয় , মনখুলে সবাই যেন কথা বলতে পারে | আমরা একটা ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টের মতোই কাজটা করতে পেরেছিলাম |আমি আত্মকেন্দ্রিক না নিজের ভালো হউক শুধু এটা চাইনা,আমি চাই পরবর্তীতে যারা এখানে কাজ করবে সবাই সমষ্টিগতভাবে যেনো ভালো করতে পারে |

দুর্বলতা

আমার দুর্বলতা হচ্ছে আমি সবকিছুতে প্রচুর পরিমানে সিরিয়াস | এটা আমার খুববড় একটা সমস্যা কারন,ছোটোখাটো কাজগুলো করতে খুববেশি সময় নিয়ে ফেলি | আমি খুববেশি সময়নিষ্ঠ | সময়মতো সবকাজ করতে পছন্দ করি | তাই কেউ যদি টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে না পারে বা সময়মতো কাজ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমি খুববেশি মন খারাপ করে ফেলি | এটা আমার জন্য হয়তো খারাপ |

কিছুকিছু ক্ষেত্রে একটু ঢিলেঢালা বা শান্ত জীবনযাপন করা উচিত | আমি আবার ঘুমপ্রিয় হা হা প্রচুর পরিমানে ঘুমাতে ভালোবাসি |

বড় সাফল্য

সাফল্যের ব্যাপারে আমি এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন রিলেটেড কোনোকিছু নিয়ে বলতে চাইনা | কারন পড়ালেখাটা নিজের কাছে | যেকেউ একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করলে ভালো রেজাল্ট করবেই | আমার কাছে মনে হয় , আমার আসল সাফল্য ছিল ভলেন্টিয়ারিং রিলেটেড কাজগুলো করা |

এই সেক্টরে আসলে টাকার চাইতেও অনেকবেশি কিছু পাওয়া যায় সেইটা একটা মানুষের হাসি হউক বা সেটা হতে পারে কারো কর্ম অভিজ্ঞতা,তাছাড়া অনেকজন মানুষের সাথে কানেক্টেড থাকা এটা সত্যি বলতে অসাধারণ একটা অনুভূতি আমার কাছে |

কোন অবস্থানে দেখতে চাই ?

আগামী পাঁচ/দশ বছরের মাঝে আমি যে খুব একটা কিছু করতে পারবো ব্যাপারটা আসলে এরকম না | আমি এই কয়েকবছরে নিজেকে আরো ভালোভাবে চিনতে চাই , যাতে আমি অন্যমানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করতে পারি | আগামী বছরগুলোতে আমি যেই সেক্টরে আছি সেই সেক্টরে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষাখাত নিয়ে ভাবার প্রবল ইচ্ছা আছে |

ভালো মানুষ হওয়ার জন্যে যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন

আসলে ভালো বা খারাপ বিষয়টা খুব আপেক্ষিক | এই দুনিয়ায় কেউই পরিপূর্ণরূপে ভালোনা , আবার কেউই খুববেশি খারাপ না | পরিবেশ/পরিস্থিতির প্রভাবে একজন মানুষ ভালো কিংবা খারাপ হতে পারে | কিন্তু পার্সোনালি বলতে গেলে , একটা মানুষ যে অপর একটা মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেয় , সকল কাজকর্মে সৎ নিয়তে কাজ করে,হাসিমুখে সকলের সাথে ভালোভাবে কথা বলে,মন থেকে অহংকার দূর করে ফেলে বিশেষভাবে এ সকল বিষয়গুলো যদি কোনো মানুষের মাঝে পরিলক্ষিত হয় তবে সে নিঃস্বন্দেহে ভালো মানুষের দলভুক্ত |

এছাড়া পরিবারের ছোটবড় প্রতিটা কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করে,দেশের প্রতি মনে একটা ভালোবাসার জায়গা তৈরী করে তবেই সে মহৎ একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত হয় |

সফলতার উচ্চশিখরে পৌঁছাতে হলে

আসলে জীবনে সফলতার ব্যাপারটাও ভালো খারাপের মতো আপেক্ষিক | কে আসলে কোন বিষয়টিকে সাফল্য বলে তা একবারে বলা যায়না | যেমন : কেউ যদি অর্থ উপার্জনকে সাফল্য ধরে তবে তার জন্যে অর্থ উপার্জন করা সাফল্য , কেউ যদি জনপ্রিয়তা পছন্দ করে সবার সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসে তবে তার জন্যে এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য |

কিন্তু আমার কাছে সাফল্য বলতে অন্য কোনো কাজ করাকে বোঝায় যা পরিবার,দেশ ও আশেপাশের মানুষের মাঝে একটা দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে | সেটা পরিবার থেকে শুরু হয়ে সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়লে সার্বিকভাবে সবার মঙ্গল কামনা করাও হয় | আর সকলের মঙ্গল কামনা করাটাই হচ্ছে আসল সাফল্য |

ব্যাক্তিগত অভিমত থেকে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম | তাই , সাফল্যের উচ্চশিখর বলতে আসলে কিছু নেই | আমি যেটা পার্সোনালি ট্রাস্ট করি , ” You can never give your best all you can simply do is give better day by day ” . অর্থাৎ , নিজেকে প্রত্যেকদিন continuous progress যেটাকে বলে সেভাবে একটু একটু করে ধীরেধীরে ভালো করে তুলতে হবে | এই ব্যাপারটাতে গুরুত্ব দিলে নিজের মতো করে নিজেকে আরো ভালোভাবে গড়ে তোলা যায় |

করোনা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ

কোয়ারেন্টাইনে সময় কিভাবে কাটছে ? সত্যিকার অর্থে করোনা নিয়ে বলতে হয় , করোনা আমাদের চরম বাস্তবতার সম্মুখীন করেছে | জীবনে নানা সময় আমরা বিভিন্নধরনের পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী আগাই | অনেক আপন মানুষকে হারিয়েছি যা বেদনাদায়ক || কিন্তু আমাদের সেই শোক কাটিয়ে উঠার যথেষ্ট ক্ষমতা থাকতে হবে | করোনা আমাকে আরেকটা জিনিস শিখিয়েছে যে , নিজেকে আপডেট হতে হবে,সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে নয়তো প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে হাজারগুন পিছিয়ে যেতে হবে |

আমার ক্ষেত্রে বলতে গেলে,আমার ক্লাসিকাল কাজগুলো যেমন কোনো একটা কিছু প্রেজেন্ট করা , কোনো বিষয় নিয়ে ভালোভাবে কথা বলা , টিমপ্লেয়ার হিসেবে মানুষের সাথে ভালোভাবে কাজ করা সেগুলো ভালো পারতাম বাট আমার কিছুটা দুর্বলতা ছিল দেখা যেত টেকনিক্যাল সাইডে | সো দেখা গিয়েছে এই বিষয়টা নিয়ে কম্পিউটারে বসে আমি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কাজ করেছি , সফ্ওয়্যার রিলেটেড যেগুলো বর্তমান জীবনে অতীব জরুরি বা চাকরিজীবনে যা যা শেখা দরকার এই সময়টাতে সেই বিষয়গুলো শিখছি |

আর একইসাথে নিজের খরচ নিজে চালাবার জন্য আমি ‘উদ্ভাস’ , “উন্মেষ” ফ্যামিলির সাথে যুক্ত আছি |সেখানেও আমাকে আসলে অনেকবেশি সহায়তা করা হচ্ছে |”উদ্ভাস” “উন্মেষ” এডুকেশনাল ফ্যামিলিতে আমি ফিজিক্স এর একজন ইন্সট্রাক্টর হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছি |

আমি বাচ্চাদেরকে পড়াতে পছন্দ করি | আমি এখানে বিভিন্ন প্রেজেন্টেশনে তৈরী করে এনিমেশন বা গ্রাফিক্সের ব্যবহার করে প্রেজেন্ট করে টপিকগুলো বোঝাতে চেষ্টা করি আগ্রহ সৃষ্টির জন্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে |

এখন আপাতত বাসায় বসে বসে এদের ক্লাস নেই ও বিভিন্ন জিনিস শিখি | তাছাড়া অনলাইনে একটি এপভিত্তিক জায়গা ক্লাসরুম আমি সেখানেও অনেকদিন ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলাম | আর করোনার শুরু থেকে আমি যেহেতু নানা জিনিস শিখছি তাই আমার বিশেষভাবে “হিস্ট্রি” , “হিউম্যান সাইকোলজি “,”ফিলোসোফি” এসব ভালো লাগে |

এইগুলোর জন্য মনে হয় নতুন ভাষা শেখা ও আমার জন্যে সুবিধাজনক তাই আমি নতুন ভাষা শেখার ও চেষ্টা করছি বিশেষভাবে “সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ” এর দিকে ফোকাস করছি | যারা মুখে কথা বলতে পারেনা তাদের এই ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করে নানাকিছু শেখাবার চেষ্টা করবো !

এছাড়া আমার যেহেতু জার্মান দেশটা ভালো লাগে তাই আমি জার্মান ভাষাটাও এপ ব্যবহার করে বা বিভিন্ন ইউটিউব টিউটোরিয়াল থেকে শেখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি | তো আপাতত এসব বিষয় নিয়েই ব্যস্ত আছি।

তাছাড়া নিজেকে একটু ব্রেকের মাঝেও রাখি নতুন কিছু শেখবার জন্যে,আশা করি সামনের মাস থেকে আবার নতুন কোনো কাজে অগ্রসর হবো ইনশাআল্লাহ |

পরিশেষে বলতে হয়,করোনা আশীর্বাদই | দোয়া রাখবেন যেন সামনে আরো ভালো কাজকে সাথী করে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারি |

পছন্দের আরো পোস্ট