শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিমুখী সংকট
লেখাপড়া ডেস্ক।
করোনার কারণে অভিভাবকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানের বেতন দিতে পারছেন না আবার টিউশন ফি না পাওয়ায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকের বেতন না দিতে পেরে মহাসংকটে। দ্বিমুখী এ সংকটের সমাধান কী?
বাংলাদেশে করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অনলাইনে ক্লাস চললেও কোথাও কোথাও তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে টিউশন ফি না পাওয়ায়। বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন বন্ধই করে দিতে হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ছুটি’ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বলেছে, এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে শিক্ষকরা বড় ধরনের সংকটে পড়বেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। তবে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অমানবিকভাবে টিউশন ফি আদায়ের পাঁয়তারা করছে। তারা টিউশন ফি আদায়ের জন্য এ করোনার মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ২০টি কিন্ডারগার্টেন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলগুলো আর চালু হবে না। আরও ১০০-এর মতো স্কুল বন্ধের পথে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় এবং আয়ের একমাত্র উৎস টিউশন ফি। করোনায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় সম্ভব হয়নি। ফলে তারা শিক্ষকের বেতন দিতে পারেনি। ভাড়া বাড়িতে যেসব স্কুল, ওই সবের ভাড়াও দিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেন, এই টিউশন ফি আর পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ, অনেকে কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। এখন যদি অটো প্রমোশন দেওয়া হয়, তাহলে কেউ স্কুলের বেতন দেবে বলে মনে হয় না। অভিভাবকরা অন্য স্কুলে নিয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাবেন। মিজানুর রহমানের নিজের মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম রোজ গার্ডেন হাইস্কুল। এটি যাত্রাবাড়ী এলাকায়। ওই স্কুলটি তার নিজের বাড়িতে। এ কারণে তিনি এখনও স্কুলটি বন্ধ করেননি বলে জানান। কিন্তু শিক্ষকের বেতন দিতে পারছেন না। অন্যদিকে এমপিওভুক্ত এবং উচ্চ টিউশন ফি’র ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকরা টিউশন ফি কমানোর জন্য আন্দোলন করছেন। তাদের কথা এ সময়ে টিউশন ফি অর্ধেক নেওয়া হোক। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। এমনকি বেতন না দেওয়ায় অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে নাম কেটে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ঢাকার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের অভিভাবকরা এ নিয়ে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা অভিযোগ করেন, টিউশন ফি বকেয়া থাকায় অনলাইন
ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই মাসের টিউশন ফি পরিশোধ না করলে অনলাইনে প্রবেশ বন্ধসহ রেজিস্টার থেকে নাম বাদ দেওয়ার নোটিশও দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের পক্ষে উপস্থিত সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা জানান, এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছে। সেখানে ১৪ দিন সময় দিতে বলা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তা-ও মানছে না। এ নিয়ে মাস্টরমাইন্ড স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
জামিউল আহসান নামের একজন অভিভাবকের সন্তান পড়ে ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলে। তিনি বলেন, করোনার জন্য আমরা সন্তানদের টিউশন ফি দিতে পারছি না। কিন্তু আমাদের প্রায় প্রত্যেক দিন এর জন্য ফোন করা হয়। আমরা টিউশন ফি অর্ধেক করার জন্য আন্দোলন করছি।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় টিউশন ফি’র ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় দুই পক্ষকেই মানবিক আচরণ করতে বলেছে বলে জানান অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু। তার কথা, করোনায় সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই টিউশন ফি‘র ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত আমরা আশা করছি।
মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক বলেন, আমার জানা মতে, টিউশন ফি নিয়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে বেশ কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সমস্যা হচ্ছে।
তবে ইংরেজি বা বাংলা যে মাধ্যমই হোক না কেন, টিউশন ফি না দিতে পারার কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাশ থেকে বিরত রাখা যাবে না, তাদের ভর্তি বাতিল করা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আর বেতন নিয়ে যে সমস্যা তা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা মিলে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের কেস টু কেস দেখতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর বাইরে কোনো ভূমিকা নেবে না। ডয়চে ভেলে।