পাবিপ্রবিতে আন্তর্জাতিক ফিজিক্স ওয়েবিনার আয়োজন

পাবিপ্রবি প্রতিনিধি।

একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি হচ্ছে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। করোনা ভাইরাসের আগ্রাসনে সমগ্র পৃথিবী এখন যেন স্থবির হয়ে আছে। থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্র-ছাত্রী সকলে বাড়িতে থেকে অনলাইনে পড়াশুনা করতে বাধ্য হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা কালে বাড়িতে বসে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে তাদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বৃহৎ পরিসরে শুরু করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফিজিফিজিক্স ওয়েবিনার এর আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০টি ওয়েবিনার সফলতার সঙ্গে আয়োজন করেছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। বিভাগটি আগামীতে আরো বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফিজিফিজিক্স ওয়েবিনার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ সকল ওয়েবিনার এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, জাপান, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ইতালি, গ্রিস, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ) নামকরা পদার্থ বিজ্ঞানীগণ অংশগ্রহণ করছেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করে যাচ্ছেন। এই আন্তর্জাতিক ফিজিক্্র ওয়েবিনার গুলো সঞ্চালনা করে যাচ্ছেন পাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রীতম কুমার দাস।

বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাসায় বসে অনলাইনের মাধ্যমে নামকরা বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি দারুণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই ওয়েবিনার গুলোর মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরা সহজেই এই ওয়েবিনার গুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারছে এবং নিজের মতামতও প্রকাশ করতে পারছে। এর মাধ্যমে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ঘরে বসে বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জন করার সুযোগও তৈরি হয়েছে।

অনলাইনে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণামূলক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পদার্থ বিজ্ঞানে পড়ালেখা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। এতে শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে পারছে এবং নতুন আবিষ্কারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।

বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কল্যাণেই মানব সভ্যতা এত দ্রুত গতিতে উন্নতি লাভ করতে পেরেছে।

আধুনিক কালে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দেশ ও জাতির উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। যে জাতি যত বেশি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, সে জাতি তত বেশি উন্নতি লাভ করছে। বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করতে পেরেছে বলেই করোনা মহামারি কালে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রমসহ দেশের যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ পরিচালিত হচ্ছে, অর্থনীতির চাকা সচল থাকছে, এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মধ্য দিয়েই যে দেশ ও জাতির ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব্যতা বুঝতে পেরেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের জাতির প্রতি এই অনন্য অবদান ও কৃতিত্বের জন্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ কৃতজ্ঞতা জানায়। তিনি একজন ভিশনারি ও মেধাবী নেতা, যাঁর জীবনদর্শনের মূলে রয়েছে সততা ও প্রজ্ঞা। জীবন ও কর্মের সকল ক্ষেত্রেই সততার অনুশীলন করছেন বলেই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও রূপান্তরের পথিকৃৎ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম এবং প্রায়োগিক ও উদ্ভাবনী গবেষণায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা।

Post MIddle

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক ফিজিফিজিক্স ওয়েবিনার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম রোস্তম আলী বলেন, বিশ্বের এই করোনা মহামারি কালে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা ও গবেষণায় আগ্রহী করে তোলার জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এই সুন্দর প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আমি আয়োজনকারী বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই এবং সেই সঙ্গে আশাবাদ ব্যক্ত করি তাঁদের এই প্রচেষ্টা ও কর্ম প্রয়াস অব্যাহত থাকুক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানবিভাগের আন্তর্জাতিক ফিজিক্স ওয়েবিনার এর মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান চর্র্চার জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে। এইরূপ আয়োজনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক বাঙালির আগামীর প্রজন্ম।

এই আন্তর্জাতিক ফিজিক্স ওয়েবিনার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই মুহূর্তে ওয়েবিনার এর বিকল্প নাই। আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানীদের নিয়ে ওয়েবিনার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকসহ সকলেই উপকৃত হচ্ছেন। এরই মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞান মনস্ক জাতি হিসেবে আমাদের শির্ক্ষাথীরা নিশ্চয় সাফল্য বয়ে আনবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

এই আন্তর্জাতিক ফিজিক্স ওয়েবিনার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা পৃথিবীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এই প্যানডেমিক সিচুয়েশন কবে যাবে সেটা আমরা জানি না। এই বাস্তবতায় পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটা সম্ভব হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অভুতপূর্ব উন্নতির কারণে।

একটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করোনা কালে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কেবল তাই নয়, বিশেষত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. প্রীতম কুমার দাস যে সিরিজ ওয়েবিনারের উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এজন্য তাকে এবং স্বনামধন্য গেস্ট বক্তা, বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শ্রোতাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। এই ডিজিটাল শিক্ষার যুগে, আমি বিশ্বাস করি সকল পর্যায়ের শেখার উপকরণগুলো সহজেই বোধগম্য, উপভোগ্য এবং আনন্দদায়ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। পড়াশোনা সবসময় পরীক্ষাকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয় বরং নীতিবান, দায়িত্বশীল এবং সংবেদনশীল মানুষ গড়তে যেসব শিক্ষা দরকার তার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

করোনাকালীন বাস্তবতায় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় আজকে আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, এটি সম্ভব হতো না যদি ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন না দেখাতো। এই জন্যই যে কোনো দেশের উন্নয়নে ভিশনারি পলিটিক্যাল লিডার গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্র ভিশনারি নেতৃত্ব গুণেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে স্থির করে। দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের সাহায্যেই উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়। বর্তমান বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি প্রায় শতভাগ অফিস আদালতের কাজে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা প্রবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পলিটিক্যাল লিডার। তাঁর দূরদর্শনই বর্তমান বাংলাদেশের শক্তি। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তাঁর যে শিক্ষা ভাবনা ছিল, সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে শতভাগ তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর করা এখন সময়ের দাবি যেমনটা জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

পরিশেষে এই আন্তর্জাতিক ফিজিক্স ওয়েবিনার এর সঞ্চালক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রীতম কুমার দাস বলেন, মৌলিক বিজ্ঞানের পড়ালেখা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং এই বিশ্ব করোনা মহামারীর সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়াশোনার মধ্যে রাখার জন্য আমরা এই ওয়েবিনার গুলোর আয়োজন করে যাচ্ছি।

এই ওয়েবিনার গুলোর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক উপকৃত হচ্ছে এবং তারা নতুন নতুন গবেষণা সম্পর্কে জানতে পারছে। এই আন্তর্জাতিক ফিজিক্স ওয়েবিনার আয়োজনে সহযোগিতার জন্য স্বনামধন্য গেস্ট বক্তা, বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শ্রোতাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।#

পছন্দের আরো পোস্ট