জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক।
১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট হত্যাকা-ের দোসররা আজও সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। তিনি বলেন, “কোনভাবেই আগাছা-পরগাছাকে সুযোগ দেয়া যাবে না। কারণ ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার ঘটনা ক্ষমতার পালাবদলের জন্য হয়নি। এই ঘটনা একজন ব্যক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্যও সংঘটিত হয়নি। বাংলাদেশের অস্তিত্বের মূলে কুঠারাঘাত করার জন্যই এই হত্যাকা- সংঘটিত করা হয়েছে।”
আজ সোমবার (৩১ আগস্ট বিকাল ৩:৩০ টায়) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত জুম অ্যাপসের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সেদিন যারা আপোষ করেছিলেন তারা হয়তো বেচেঁ গেছেন। কিন্তু যারা আপোষ করেননি তাদেরকে অমানবিক নির্যাতনের মুখে পরতে হয়েছিল। জাতীয় চার নেতাকে তারা জেলেই হত্যা করে। একজন কিশোরী হিসেবে ওই সময়গুলোতে মায়ের হাত ধরে বাবাকে দেখতে জেলে যেতাম। তখন দেশে কী পরিস্থিতি ছিল সেটা হয়তো অনুধাবন করতে পারতাম। ১৫ আগস্টের পর দেশে যে ধরনের পরিবর্তন হয়েছে সেটা দেখলেই ঘাতকদের মূল উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়। যেমন- পাকিস্তান জিন্দাবাদের বদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, পাকিস্তান রেডিও এর পরিবর্তে বাংলাদেশ রেডিও- এসব করে দেশে বিরাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। সে সময়ে বছরের পর বছর প্রতিটি রাতে দেশে কারফিউ ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশে বৈষম্য থাকবে না। তিনি সমাজতন্ত্রকে পছন্দ করতেন। পুঁজিবাদ পছন্দ করতেন না। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলেছেন। বিশ্বমানবতার জায়গায় তিনি বাঙালিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন এবং দর্শন অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করে চলেছেন।”
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাঙালি একজন মহান নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন মানব সভ্যতার অবিসংবাদিত নেতা। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আদর্শসহ সবকিছু তিনি মনে প্রাণে ধারণ করেছেন। তিনি ছিলেন স্টার অরগানইজার। নিউজ ইউক বলেছিল বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘পোয়েট অফ পলিটিক্স’। তবে তিনি শুধু পোয়েট অফ পলিটিক্সই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আর্টিস্ট। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে সুনিপুণভাবে একজন দক্ষ শিল্পীর মতো তাঁর সমর পরিকল্পনা একেঁছিলেন। যা চূড়ান্ত বিজয়ে আমরা লক্ষ্য করেছি।”
উপাচার্য বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত সব বিষয়ে ছিলে সুদূরপ্রসারী। তিনি জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে নিউ ইকোনমিক অর্ডারের কথা বলেছেন, যেখানে কোন বৈষম্য নেই। আইনের শাসনের কথা তিনি শুধু মুখে বলে যাননি তাঁর ব্যক্তি জীবনে তিনি প্রাকটিস করে গেছেন।”
১৫ আগস্টের ঘটনায় দেশি-বিদেশি শক্তির মুখোশ উন্মোচনের জন্য তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, “কোন হত্যাকা-ই তামাদি হতে পারে না। যারা অপরাধী তাদের মরণোত্তর বিচার হতে পারে। এরফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত ও মাস্টারমাইন্ডদের সম্পর্কে জানতে পারবে।”
আলোচনা সভায় “১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকা-ঃ বাংলাদেশের অস্তিত্ব মূলে আঘাত” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন। এছাড়া আলোচনা সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের দপ্তর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।