ইবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে ক্ষোভ

তরিকুল ইসলাম, ইবি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর বিরুদ্ধে ‘অযৌক্তিক’ মানববন্ধন করে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে অপসারণ ও শাস্তির দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাদের একটি অংশ ৷ তবে এই কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ ছাত্রসমাজ ৷

গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় কুষ্টিয়া পৌরসভার এন এস রোডে এ দাবিতে যৌথভাবে পৃথক ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করে ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কর্মকর্তা সমিতি ও শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসকারী, নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডার বাণিজ্যের হোতা এবং প্রগতিশীল রাজনীতি ধ্বংসকারী হিসেবে উল্লেখ করেন তাঁরা।

 সকলের চোখে সফল উপাচার্য হিসেবে খ্যাতি লাভের পরও মেয়াদের শেষ মূহূর্তে একটি চক্র ভিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ৷ অসংখ্য শিক্ষার্থী উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এবং অনেকেই দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসিকে পাবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ৷

শিক্ষার্থীদর মধ্যে ফোকলোর বিভাগের ২০১৬ -২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী স্ট্যাটাসে লেখেন, “একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপকার, আন্তর্জাতিকীকরণে পথে  যার অনন্য অস্বীকৃত অবদান রয়েছে তিনি হচ্ছে আমাদের গর্ব যার নাম হারুনুর রাশিদ আসকারী স্যার, মাননীয় ভিসি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ৷

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যিনি ৪ বৎসর তার মেয়াদকাল শেষ করতে চলেছেন ৷  ইবির একাডেমিক, অবকাঠামো উন্নয়ন অন্যন্য ভুমিকা রেখেছেন তিনি আবারো তাকে সেই মহান দায়িত্বটি তার হাতে হস্তান্তর করলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এক অনন্য উচ্চতায় পৌছে যাবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ৷  আমি চাই আবারো মাননীয় আসকারী স্যার আবার আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে অভিভূত হউক।”

হিসাব ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫ -২০১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নবীরুল ইসলাম নবী মন্তব্য করেন, “কিছু কুচক্রী মহল আছে যারা ভালো মানুষের কাজগুলোকে অবমূল্যায়ন করে। এই কুচক্রী মহলের কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবেনা। আমাদের দেখা সেরা এবং সৎ উপাচার্য আশকারী স্যার। ১৮০০০ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবী আশকারী স্যারকে পুনরায় পাওয়া ভিসি হিসেবে ৷

Post MIddle

আর স্যার যদি দুর্নীতি করেও থাকে সেটা গোয়েন্দা সংস্থা, সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তারা খুঁজে বের করে ফেলতো এতোদিনে ৷ সুতরাং যারা এসব ভুয়া নিউজ করে স্যারের ইমেজ নষ্ট করতে চাচ্ছে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করতে চাচ্ছে । আশা করি ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে স্যারকে পুনরায় চাইবে এবং সরকারও এইদিকে সুদৃষ্টি রাখবেন ।  কুচক্রী মহল গুলো ক্যাম্পাস কে লুটে পুটে খাওয়ার ধান্দাবাজি করবে এবং দুপুর ২ টার আগেই কাজ বাদ দিয়ে বাড়ি ফিরার জন্য আগের শিডিউল করতে চাইছে। বর্তমান ভিসি তো আর এসব অযৌক্তিক দাবী মেনে নিতে চায় না, তাই এসব কুৎসা রটনা শুরু করছে এখন ৷ ইনশাআল্লাহ, ষড়যন্ত্র নিপাত যাবে, ভিসি স্যার আবার আসবে ৷”

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১২ – ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী মোঃ জহিরুল ইসলাম মন্তব্য করেন, “এগুলো চুরি চামারি করতে চায়, এগুলো স্রেফ ময়লা-আবর্জনার মত ডাস্টবিন আটকে রাখে। এদের মধ্যে ভালো কোন মানুষ দেখলাম না ৷ এই আসকারীকেই আবার ইবিতে আনতে হবে নইলে ইবি লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যাবে ওই হিংস্রদের লোলুপ দৃষ্টিতে। আমরা আবার ড. আসকারীকে ভিসি হিসাবে ইবিতে দেখতে চাই ৷”

এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ‘অফিসার ইউনট’ কর্মকর্তা সমিতি ও শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিবৃত প্রদান করে মানব বন্ধনের নিন্দা জানানো হয়েছে ৷ পাশাপাশি এই কাজের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করা হয়েছে ৷

আজ রবিবার ২৬ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ রকিবুল ইসলামের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে অছাত্র এবং শিবির কর্মী দিয়ে ব্যানার প্রদর্শন করা হয়েছে ৷’ পাশাপাশি ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীকে এই ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহবান করা হয় ৷

ইবি শিক্ষক সমিতির বঙ্গবন্ধু পরিষদ এর সভাপতির অনুমতিক্রমে সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামালের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত এবং নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ এই বিতর্কিত মানব বন্ধনের সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নয় ৷’

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সফল ভিসি হিসাবে পরিচিতি পাওয়া উপাচার্য ড. আসকারী আগামী ২১ আগস্ট মেয়াদ পূর্ণ করতে যাচ্ছেন ৷ দ্বিতীয় মেয়াদেও ভিসি হিসেবে ড. আসকারীকে পাবার প্রত্যাশায় ইবিয়ানরা ৷

পছন্দের আরো পোস্ট