শিক্ষা কার্যক্রম ও সমসাময়িক বিষয়ে জবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রভাবে পুরো বিশ্ব এখন ভীত-সন্ত্রস্ত, ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। সংকটকালীন এই মুহূর্তে শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে আছে।

 

এ সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিভাবে সময় কাটাচ্ছে? অনলাইন ক্লাস, সেশন জট নিয়ে ভাবনা, করোনাকালীন ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবে শিক্ষার্থীরা, ফেলে আসা প্রিয় ক্যাম্পাস স্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আশা করছি খুব শীঘ্রই করোনা মহামারী কেটে যাবে, তখন শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে আমাদের প্রাণের জগন্নাথ। তবে মহামারী কেটে গেলেও আমাদের শিক্ষাক্ষেত্র সহ সব জায়গায়ই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রয়োজন পড়বে। এখন যেমন সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমে একে অপরের পাশে এসে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, ঠিক তেমনি করোনা পরবর্তী সময়ের জন্যেও নতুন করে ভাবার সময় এসে গেছে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সময়ের সাথে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের দক্ষতায় দক্ষ করে তুলতে হবে।

 

Post MIddle

করোনা কালীন এই সময়ে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসার প্রয়োজন খুব বেশি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়ানোর সুযোগগুলো আরও বাড়ানো। করোনা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের শিখনের জন্য যুগোপযোগী এডুকেশনাল রিসোর্স প্রয়োজন। জীবনমুখী ও প্রাকৃতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে অনেক। দক্ষতাভিত্তিক কারিকুলামের পাশাপাশি বাস্তবমুখী নানা কার্যক্রমও কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আমাদের কোর্সগুলো আরও যুগোপযোগী এবং বিস্তৃত করে তৈরি করতে হবে। প্রতিটি কোর্সের সাথে একটা করে ওয়ার্কবুক তৈরি করে দিলে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে বাড়ির কাজগুলো নিজেরাই সম্পূর্ণ করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের পড়া মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আনতে হবে পরিবর্তন। সহজে কিভাবে শিক্ষার্থীদের পড়া মূল্যায়নে পরিবর্তন আনা যায়, তা নিয়ে আরও চিন্তা করতে হবে। প্রয়োজনে সামাজিক মাধ্যম যেমন- হোয়াটসআপ, ইমো, ভাইভার, ফেইসবুক, ইউটিউব এবং জুম ব্যবহার করতে হবে। উৎসাহী করতে হবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের, তাহলে ভবিষ্যতে যদি আবারো করোনার মতন কোনো মহামারী আসেও তাহলে আমরা অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবো। তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে এবার যেমন ক্ষতি সাধন হচ্ছে তা আর হবে না।

 

তবে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ইন্টারনেট, কম্পিউটার, রেডিও, টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার আরও সহজলভ্য করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রদানের জন্য ফিচার ফোন এবং বাইটস সাইজ এডুকেশন চালু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের সহায়তাও জরুরি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া আহমেদ জানান, বতর্মানের এই মহামারীর সময়ে আমাদের সবাইকেই বন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। এই সময়টা আসলেই অনেক কষ্টের। কারণ সবসময় ব‍্যস্ততায় কাটানো মানুষগুলো কখনো এই ভাবে অলস জীবনযাপনে অভ‍্যস্ত হতে পারেনা। এই সময়টাতে যেহেতু ঘরে থাকা উচিত তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বের হই না, আর প্রয়োজনে বের হলেও সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখি। যে কাজগুলো ব‍্যস্ততার জন‍্য মন মতন করতে পারতাম না সেগুলো এখন করা চেষ্টা করি । টুক টাক রান্না – বান্না করি, প্রচুর মুভি দেখি, বই পড়ার চেষ্টা করছি। পুরো সময়টাই এখন পরিবারের সাথে কাটাচ্ছি।
লকডাউনে লেখা পড়ার কিছুটা ক্ষতিতো হচ্ছেই। তাছাড়া সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই ক্ষতিটা সম্পূর্ণভাবে পুষিয়ে উঠা হয়তো শীঘ্রই সম্ভব হবে না। তাছাড়া সকল শিক্ষার্থীদের সুবিধা – অসুবিধা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে । আমি মনে করি একটি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকলে এবং শিক্ষক – শিক্ষার্থী উভয়ের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবই কেবল এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে। সে ব‍্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞ কোর্সটিচাররা রয়েছেন সিলেবাসের সংশোধন পরিমার্জন কিংবা সংযোজনের জন‍্য।
যেটাই হোক আশা করি শিক্ষার্থীদের জন‍্য চাপের হবে না। তবে আমার এই বিশ্বাসটুকু রয়েছে আমাদের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন যাতে সেশনজট না হয়। প্রার্থনা করছি এই মহামারীর সময়টা যেন অতি দ্রুত শেষ হয়।

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আহাদ মোহাম্মদ তাহমিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ধর্মগ্রন্থের ন্যায় পবিত্র। উপাগত ক্ষণে করোনা ভাইরাস এর কারনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত। সরকার ধাপে ধাপে সাধারন ছুটির মেয়াদ বাড়াচ্ছে৷ হয়ত দ্রুতই এই অন্ধকার থেকে আমরা ভোরের রক্তিম আলো দেখব। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই প্রথম প্রশ্নটি আসবে শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় থেমেছিল আর কোথায় শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা করোনা ভাইরাস আসার পূর্বে একটি শিক্ষাবর্ষের মাঝ বরাবর ছিল, কারো পরিক্ষা সন্নিকটে আবার কারো পরিক্ষা চলছিল। হঠাৎ করোনা ভাইরাস জনিত কারনে সব বন্ধ হওয়ায় এবং নির্দিষ্ট কতদিন পর সব স্বাভাবিক হবে তার নিশ্চয়তা না থাকায় সবাই নিয়মিত জ্ঞানচর্চা থেকে দুরে সরে গেছে৷ এর প্রভাবে, হঠাৎ ঝড় আসলে যেমন সুরক্ষা নেওয়া কষ্টসাধ্য ; ঠিক তেমনই হঠাৎ ওইস্থান থেকে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হবে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর এর কারনে ফলাফল খারাপ হতে পারে। আমি নিজে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে স্বজ্ঞান এ কক্ষনো চাইব না আমার ফলাফল খারাপ হোক, বা আমি অপ্রস্তুত হয়ে কোন পরিক্ষায় অংশ নিই। অদক্ষ বা আধাদক্ষ যোদ্ধা কখনই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে না। তাই নতুনভাবে নতুন করে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করানোই উত্তম। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত রাখার উদ্দেশ্য করে অনলাইন ক্লাস এর আয়জনের কথা উঠেছে। দেখের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ইতিমধ্যে শুরু করেছে। আমি এর পক্ষে এবং বিপক্ষে দুদিকেই আছি। বাংলাদেশ মধ্যমমানের দেশ। এদেশের এখনও সর্বত্র বিদুৎ পৌছে নি সেখানে ইন্টারনেট সেবা পৌছাবে এটা ভাবাই মস্ত ভুল। তারপরও সবার কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নাও থাকতে পারে৷ আবার ইন্টারনেট ক্রয় করে চালানোটাও অনেক ব্যয়বহুল। যেখানে মানুষ খাবার জোটাতে ব্যর্থ, সেখানে অনেক পরিবার ই আছেন তারা এটাতে অংশ নিতে পারবেন। তাই সরকার যদি তাদের উপহার হিসেবে বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডিভাইস এবং সবার জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয় তাহলে এটা একটা ভালো উপায় হবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাচর্চা করানোর।

পছন্দের আরো পোস্ট