করোনা পরবর্তী সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গত ১৬ মার্চ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এরপর থেকে এখনও তা বন্ধ রয়েছে। এর আগে গত ৮ মার্চ প্রথম ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। গত ২৩ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর তা বাড়িয়ে ১৬ মে করা হলো এবং সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। সাধারণ ছুটির সাথে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ও বাড়তে থাকে। সাধারণ ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১৫ জুন থেকে বাড়িয়ে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অচল হয়ে পড়েছে দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা। এত দীর্ঘ ছুটিতে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শ্রেণী পাঠদান, পরীক্ষা, ল্যাব ওয়ার্ক সহ সকল শিক্ষা কার্যক্রম সম্পুর্ন বন্ধ। মন্থর গতিতে চলতে থাকা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এসএসসির ফলাফল তৈরির কাজও খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত করোনার প্রাদুর্ভাব দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। নিয়মিত পাঠদান বন্ধ থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে সিলেবাস শেষ করার কোন সুযোগ নেই। এসব কারণে পেছাতে হবে শিক্ষাবর্ষের সকল পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিলম্বিত হওয়ায় বিঘ্নিত হয়েছে কলেজে ভর্তি এবং এইচএসসি পরীক্ষা কারনে পেছাতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। এসব কারণে উচ্চ শিক্ষাস্তরে সেশন জট সৃষ্টি হবে এটা প্রায় নিশ্চিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টিভিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস দেখানো শুরু করে সরকার৷ আর প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল থেকে৷ এই ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেওয়া হচ্ছে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে এসব বাড়ির কাজ দেখাতে হবে৷ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের উপর প্রাপ্ত নম্বর তাদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে৷ এছাড়া, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু করেছে৷

করোনা মহামারীর এ সময়টা নিশ্চয়ই কেটে যাবে একদিন। আমাদের বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুখর হয়ে উঠবে প্রতিটি ক্যাম্পাস। কিন্তু সময়টা আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে? করোনার কারণে তৈরি হওয়া অনলাইন আর অফলাইনের শিক্ষার এই বৈষম্য আমরা কি সমাধান করতে পারবো? সমাধান করতে গেলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষায় উদ্ভাবনীয় ব্যক্তিদের ভূমিকা অথবা শিক্ষায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের ভূমিকাই বা কী হবে? “করোনা পরবর্তী সময়ে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই?” এই প্রতিপাদ্যে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন মেধাবী শিক্ষার্থীর সম্মিলিত, সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

“সময়োপযোগী পদক্ষেপই করোনা পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থার মুখ্য বিষয়”

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী পুরো পৃথিবীব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করেছে। তাই বলা বাহুল্য, কোভিড সংকট কাটিয়ে উঠার পর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে শিক্ষাখাতকে যথাসম্ভব পুরোনো ছন্দে ফিরিয়ে আনা। উন্নত দেশগুলো এক্ষেত্রে কি কি সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে তা দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশ এর মত উন্নয়নশীল দেশে এধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবেনা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এইচএসসি ও সমমানের পরিক্ষার্থী ও চাকুরী প্রত্যাশী পরিক্ষার্থীদের বর্তমান সময় কাটছে ব্যাপক অনিশ্চয়তায়। এক্ষেত্রে, শিক্ষাব্যবস্থায় কৌশলগত ও কারিকুলাম ভিত্তিক কিছু পরিবর্তন কি আমাদের প্রয়োজন? নাকি যথাতথাই ভোগান্তির মাধ্যমে অনিশ্চিত হবে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ?
গতবছরের ন্যায় এবারও দেশের ১০টি শিক্ষাবোর্ড এর অধীনে ২ এপ্রিল উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। এছাড়াও, সরকারি চাকুরির নির্দিষ্ট বয়সসীমা এর কারনে পরিক্ষার্থী এখনও অনিশ্চিতায় আছেন তারা আগামীবছর আবেদন করতে পারবেন কিনা। বিশেষ করে এই দুটি ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন এবং কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরিক্ষা অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিক্ষা। এক্ষেত্রে প্রতিটি পরিক্ষার মধ্যকার বন্ধ কমিয়ে আনা উচিত কি অনুচিত তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে শিক্ষার্থীদের উপর পরিক্ষার রুটিন কোনোরকম মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরিক্ষার পূর্বের সময় কমিয়ে আনাটাই শ্রেয় হবে। এবার আসছে চাকুরী প্রত্যাশীদের পরিক্ষার বিষয়টি। নীতিনির্ধারকদের পরিস্থিতি মাথায় রেখে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানো ব্যতিত অন্য কোনো উপায় রয়েছে বলে মনে হয়না। তবে এক্ষেত্রে চাকুরির বাজারে সৃষ্টি হবে অপ্রত্যাশিত চাপ। আর ঠিক সেই কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কর্মসূচি যথা বেগে চালিয়ে যাওয়াই হবে এই চাপ নিয়ন্ত্রণ এর সময় উপযোগী পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তাড়াহুড়ো করে স্নাতক পরিক্ষা শেষ করবার বিশেষ প্রয়োজন নেই বলেই আশা করা যাচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার এসকল পরিবর্তন হতে পারে মহামারী পরবর্তী বিচক্ষণ কিছু পদক্ষেপ যা অস্থিতিকর পরিস্থিতি সামলাতে ভুমিকা রাখবে।

“করোনা পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া উচিত পরিকল্পনামাফিক”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ এর শিক্ষার্থী এম. এইচ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে মহামারি করোনা যেন জনজীবনকে থমকে দিয়েছে সেইসাথে শিক্ষাক্ষেত্রকে করেছে নিষ্প্রাণ। ১৭ই মার্চ থেকে সকল ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণায় শিক্ষাব্যবস্থা যেন এখন হুমকি সরূপ হয়ে পড়েছে। বিশ্বের সবদেশেই এর প্রভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব যেন দৃষ্টান্ত। করোনার পরবর্তী সময়ে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা বলাটা যতটা সহজ তা বাস্তবায়ন যেন শত থেকে হাজার গুণ কঠিন। তবে সেটি সরকার শুধু একার পক্ষে না আমাদেরও সচেষ্ট থাকতে হবে তাহলেই এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Post MIddle

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী স্কুলে ভর্তির দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও শিক্ষার মানের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। ৯৮ ভাগ শিশুই এখন স্কুলে যায় সেক্ষেত্রে মেয়েদের হার তুলনামূলক ভাবে যেমন বেশি সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেশি। তার উদাহরণ আমাদের স্কুলের বাথরুম দিকে তাকালেই স্পষ্ট। অধিকাংশ বিদ্যালয় যেন স্বাস্থ্যসম্মত বাথরুম নেই। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে সুস্বাস্থ্য কতটা জরুরি তা কারোও অজানা নয়। যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাথরুম তৈরি করা না হয় তাহলে করোনা পরবর্তী সময়েও আমাদের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

তারপর আসি ক্লাসরুমে, ক্লাসরুম যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হয় তাহলে পড়ায় মনোযোগ বসবার কথা নয়। উন্নতদেশের ক্লাসরুমের দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যার পাশাপাশি পরিবেশ যেন শিক্ষার উপযোগী তুলনামূলক ভাবে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর কোনটির যেমন অবকাঠামো ঠিক নেই, নেই তেমন পরিবেশও। পাশেই লেখা আছে “এখনে হর্ণ বাজাবেন না” তবুও যেন কোলাহল পূর্ণ। তারপর শিক্ষার উদ্দেশ্য, একজন শিক্ষক তার একার পক্ষে এতগুলো শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ঠিক মত করেছে কিনা তা এই ছোট্ট সময়টুকুতে নেওয়া যেন খুবই দুষ্কর। তাই জনসংখ্যার দিকেও তাকাতে হবে, নয়তো ক্লাসরুমে শিক্ষক শিক্ষার্থী থাকবে তবে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যের ব্যঘাত ঘটবেই।

এরপর আসি সিলেবাসে, কথায় আছে-
” আগে ঘর, তবে তো পর ”
আমাদের সিলেবাস টুকুতে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় পড়া ই যেন বেশি। যখন যেটুকু জ্ঞান দরকার সেটা যদি নেওয়া না হয় সেটা ভালোর চেয়ে খারাপ দিকই বেশি। এক জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের প্রায় ১১ বছরের স্কুল জীবনের সাড়ে ৪ বছরই নষ্ট, ৩য় শ্রেণির বেশির ভাগ শিশুই বাংলা পড়তে পারে না, আর ৫ম শ্রেণির ক্ষেত্রে সাধারণ অঙ্কের কোনো ধারনায় নেই। আর আরও বেশি সমস্যা হলো পাঠ্যবই ব্যতীত অন্যকোনো বইয়ের প্রতি আগ্রহ নেই বললেই চলে, আসলে থাকবেই বা কেন যত বড় সিলেবাস তা শেষ করতেই তারা হিমসিম খেয়ে পড়ছে। তাই পাঠ্যবই ছাড়া অনান্য বই পড়ার অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে। তাই সিলেবাসের দিকে নজর না দিলে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে সমস্যা হয়ে পড়বে।

এরপর প্রযুক্তি, যেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব বেশি প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হলেও তথ্য প্রযুক্তি জানার ক্ষেত্রে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি। বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নাকি বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ কম,তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তা অস্বীকার করে বলেন না যথেষ্ট বরাদ্দ রয়েছে। ধরে নিলাম তা যথেষ্ট তবে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়টিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে? আর থাকলেও কয়টিই বা কার্যকরী। বর্তমানে এই সময়ে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই দরকার নয়তো সেশনজট এর মত ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা। আমাদের প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর জীবন এখন শঙ্কায়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা শুরু হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সহ স্কুল কলেজেও শুরু করতে হবে নয়তো আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বীকার হতে যাচ্ছি। তাই বাজেট যথেষ্ট বললাম তবে এটি যদি শিক্ষার্থীর শিক্ষার চাহিদা মেটাতে না পারে তাহলে অবশ্যই বলতে হবে কিছু সংকট রয়েছে নয়তো প্রয়োগের সঠিক দৃষ্টান্ত নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে এই করোনা থেকে উওরণ পেতে নাকি আরো ১ দশক সময় লাগতে পারে। তাই এইসময়ে এসে আমরা যদি এই মহামারি থেকে কিছু শিক্ষা না নিতে পারি তাহলে হয়তো আমরা ভবিষ্যতে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো না। তাই আমাদের সকলের সাহায্য সহোযোগিতায় ই পারে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি রুখে দিতে।

“করোনা পরবর্তী সময়ে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে শিক্ষাব্যবস্থায়”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী কামারুজ্জামান শানিল বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সারাবিশ্ব প্রায় সকল কার্যক্রমেই অনেকাংশে পিছিয়ে পড়েছে। তবে ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা তুঙ্গে অবস্থান করলেও, ভয়াবহতা বেশিদিন স্থায়ী ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কম হলেও স্থায়িত্ব অনেকটা হিন্দি সিরিয়ালের ন্যায়, সহজে ইতি টানবে না। যার দরুন সকল খাতেই ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়বে উন্নয়নশীল এ দেশ। তার মধ্যে ভয়াবহতা বেশি হানা দিবে অর্থনৈতিক খাতে আর শিক্ষা খাতে। করোনা সংক্রমনের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা আবশ্যক বলে আমার ধারনা। তবে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারন আমাদের এমন কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যার মুখোমুখি তারা হয় নি। এই ব্যাপারে আমার অভিমতটি একটু ব্যতিক্রম।

প্রাথমিক আর নিম্নমাধ্যমিকে আহামরি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বলে আশা করা যায়। তাদেরকে সরকারি টেলিভিশন আর সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাসের মাধ্যমে কিছুটা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ইতোমধ্যেই চলছে। এই ব্যাপারে সরকারিভাবে আরো জোরদার হতে হবে। খুব সাধারন একটা পরিক্ষা কিংবা পরিক্ষা ব্যতীত তাদেরকে পরবর্তী শ্রেনিতে উন্নীত করলে তেমন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কারন, বৃহৎ স্বার্থে এই ক্ষুদ্র ব্যাপারটি মেনে নেয়াই যায়। এবার আসি মাধ্যমিকে আর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রসংগে। একটা ব্যাপার দেশের সকল শিক্ষিত নাগরিকই জানেন যে, উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনেকটা দৌড়ের উপর চলতে থাকে। পড়াশোনার জন্য খুব কম সময়ই পেয়ে থাকে তারা। আর করোনা পরবর্তী সময়ে সেই সময়টা যদি আরো সংকীর্ণ হয় তবে তাদের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য তারা সময় পাবে না বললেই চলে। হয়ত এর জন্য অনেক ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়বে। তাই যদি মাধ্যমিকের সময়টা কমিয়ে আনা যায় তবে কিছুটা উপকার হতে পারে। ব্যাপারটা বিস্তারিত বলছি। মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচি সময় বিবেচনায় খুবই ছোট। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নবম শ্রেনিতে সিলেবাস শেষ করে দেয়, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দশম শ্রেণির প্রথম দুই-এক মাসে সিলেবাস শেষ করে দেয়। এরপর প্রায় এক বছরের ন্যায় সময় কাটে শুধু রিভিশন করে আর মডেল টেস্ট দিয়ে। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বললে বলব, শেষের এই এক বছর বই রিভিশন করতে করতে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এমতাবস্থায় যদি তাদের এসএসসি পরীক্ষা ওই বছরের শেষের দিকে নিয়ে নেওয়া হয়, তবে সবচেয়ে উত্তম হয়। হতে পারে সেটা জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষারও পূর্বে। তাতে করে ওই বছর শেষ হতে হতে তাদের কলেজ ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে জানুয়ারি মাসে উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস শুরু করা যাবে। এরকম করা সম্ভব হলে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ দুটি বছর পেয়ে যাবে এবং তার পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে এইচএসসি পরীক্ষা হলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য অনেকটা সময় হাতে পাবে। এটা সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পরের বছরের একদম শুরুতেই ক্লাস শুরু করতে পারবে, সম্ভব হলে তার পূর্বেও শুরু করতে পারে। যাতে করে শিক্ষার্থীদেরকে একদিনের জন্যও সেশন জটে পড়তে হবে না। এবার শেষ প্রসংগে আসি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে। মোটামুটি ধারনা করা যায়, প্রায় এক বছর সেশন জটে পড়তে হবে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এজন্য যদি বিভিন্ন ভ্যাকেশন কমিয়া আনা যায় এবং সাপ্তাহিক ছুটি শুধুমাত্র একদিন করা যায়, তবে কিছুটা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। যেমন ঈদে সর্বোচ্চ পাঁচদিন আর পূজোতে তিনদিন। এভাবে বড় ভ্যাকেশন কমিয়া আনা গেলে দুই-তিন বর্ষ পরে হয়ত সেশন জট থাকবে না। আর শিক্ষার্থীদের উপর বাড়তি চাপ হয়ে গেলেও ব্যাপারটা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। এবার আসি আমার প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসংগে। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারনে আমাদের সবগুলো বর্ষ একত্রে ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। এজন্য যদি বিবিএ ভবনের উপরের তলা নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হয়, তবে সেখানকার শ্রেনিকক্ষগুলো ব্যবহার করে ক্লাস নেওয়া যাবে। তাহলে হয়ত একসাথে সকল বর্ষ ক্লাস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

পছন্দের আরো পোস্ট