করোনাকালে ইবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

তরিকুল ইসলাম, ইবি প্রতিনিধি।

বিশ্বব্যাপী সংক্রমিত করোনা ভাইরাস তথা মৃত্যুব্যাধি কোভিড -১৯ এর পীড়ায় আজ জর্জরিত সমগ্র জাতি৷ কি হবে, কবে পৃথিবী সুস্থ হবে এসব নানা কল্পনা জল্পনা বিরাজ করছে শিশু-যুবা, পৌঢ়-বৃদ্ধ সকলের মনে ৷ অর্থনীতিতে যেমন মন্দা প্রভাব ফেলছে করোনা, শিক্ষাক্ষেত্রে যেমনি বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর ৷ করোনার এই বন্দি জীবনে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম মাসুম ৷

 

এক.
তিন মাসের বেশি সময় ধরে আমরা এক কঠোর বাস্তবতার সাথে বসবাস করছি, জানিনা আর কতোদিন এভাবে পার করা লাগবে! শিক্ষার্থীদের কাছে সব থেকে আকাক্ষিত দুর্লভ বিষয় হলো ছুটি। আর আকাক্ষিত দুর্লভ বিষয়টি সব সময় মধুরই হয় কিন্তু সেটা যখন আর দুর্লভ থাকে না তখন সেটার উপর তিক্ততা আসাটাই স্বাভাবিক। তাইতো সবাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে যে, ;ছোট কাল থেকে ছুটির জন্য যতো দোয়া করেছিলাম, ২০২০ সালে যেন সব কবুল হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্ট অনেক ফার্স্ট হওয়ায় অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের তুলনায় অনেক আগেই গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে যায়। এর প্রভাব অবশ্য আমাদের উপর ই পড়ে, সকাল ৯ টা থেকে শুরু করে ৪.৩০ টা পর্যন্ত ক্লাস, ল্যাব, টিউটোরিয়াল এসব করতে করতেই আমাদের দিন শেষ হয়ে যায়। এমনও অনেক দিন আছে দুপুরে খাবারের টাইমও পাই না। আমি নিজেই মাঝে মাঝে ভাবতাম যে, ইশ যদি একটু সেশন জট থাকতো তাহলে ভার্সিটি লাইফটা আর একটু মজা করা যেতো, চাকুরির পড়াশোনা করার সময় পেতাম। এখন অঢেল সময়। কিন্তু কোনো কিছুই হয় না। সারদিন রাত রুমে থাকতে থাকতে বিরক্ত। ইচ্ছা, পরিকল্পনা অনেক কিছু থাকলেও কাজে আসে না কিছুই। সারাদিন ফিকশন, নন ফিকশন বই পড়ে আর ফেসবুক, ইউটিউব চালিয়েই দিন কেটে যাচ্ছে। এই সময়টাকে যারা কাজে লাগাতে পারবে তারা অনেক অনেক এগিয়ে থাকবে, কারণ অন্য সময়ে ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক নিজের দায়িত্ব পালন করতেই হয়। এই সময়টাতে যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের স্কিল ডেভেলপ করে নিজ নিজ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করবে তারাই অন্যদের থেকে অনেকখানি এগিয়ে থাকবে। সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে সবাই নিজ নিজ যায়গায় খুব বেশি পরিমানেই ব্যস্ত হয়ে যাবে, তাই এটাই উপযুক্ত সময় নিজেকে চেনার, নিজেকে জানার, নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে বের করে আনার এবং সেটার যথার্থ ব্যবহার করার।

মারুফ আহম্মেদ (দৌলতপুর, কুষ্টিয়া)
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ

শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৬-২০১৭ (৪র্থ বর্ষ)

 

Post MIddle

দুই.
জীবনটা প্রায় ১০৫ দিন ধরে কোথায় যেন আটকে গেছে … এই সময়ে মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খায়… বেশিরভাগই দুশ্চিন্তা।
আলহামদুলিল্লাহ ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার শুরুর দিনগুলোতে ভালো লাগতো। ভাবতাম অনেক দিন পরে নিজের পরিবারকে দেওয়ার মতো কিছু সময় পেলাম। ব্যস্ত জীবনে এমনও সময় হঠাৎ করেই পাওয়া যায় সেটা ভাবি নাই। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই আনন্দ টা কমে যেতে থাকে বাড়তে থাকে দুশ্চিন্তা। কারণ একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কত দিন এভাবে ঘরে বসে কাটাতে পারে? আর পারলেও কতটা হতাশার সেটা এখন হয়তো আমরা সবাই বুঝি।
ঐ ব্যস্ত জীবনটাই ভালো … হয়তো আবার অভিযোগ করবো … হয়তো আবার ক্লান্ত হয়ে ছুটি চাইবো … তবু জীবনটা চলতে থাকবে তো !!
স্রষ্টার কাছে মিনতি করি, আমার শত অভিযোগের ঐ ব্যস্ত জীবনটাই ফিরিয়ে দাও … এই থমকে থাকা জীবনটা আর নেয়া যাচ্ছে না … একদম নেয়া যাচ্ছে না !!

আরিফুল ইসলাম খান(বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ি)
ফার্মেসী বিভাগ, শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৭-২০১৮ (৫ম সেমিস্টার)

 

তিন.
করোনা মহামারী আমাদের জন-জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলিকে খুব মিস করতেছি। সকালে ঘুম ঘুম চোখে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া, ক্লাসের শেষে বন্ধুরা মিলে গানের আড্ডা, সবার সাথে রাতের ক্যাম্পাস ঘুরাঘুরি; সব কিছুই খুব মনে পড়ে।
এই বদ্ধ জীবনে আমরাও যেন বদ্ধ না থেকে সবাই নিজ নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাই আমাদের জীবনের লক্ষ্যে। ঘরে বসেই যতটুকু সম্ভব আমরা নিজেদের প্রস্তুত করছি নিজেদের লক্ষ্যের জন্য। বিভিন্ন সাহিত্য, ধর্ম সেবার মাধ্যমে নিজেদের আত্মিক প্রশান্তি অর্জন করি। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, ঘরে থাকি। ইনশাল্লাহ আমরা করোনাকে জয় করবোই।

মাসুদুর রহমান (সদর, পন্ঞ্চগড়)
বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৮-২০১৯ (৩য় সেমিস্টার)

 

চার.
করোনা ভাইরাসের জন্য তিন মাসের বেশি সময় হল বাসায় এসেছি। জানি না আরও কত দিন এভাবে সময় কাটাতে হবে ৷ আগে ক্যাম্পাস বন্ধ হলে মনে হতো আরও কয়দিন বেশি ছুটি থাকলে ভাল লাগবে কিন্তু করোনা ভাইরাসের এই মহামারিতে এত দিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও আর ভালো লাগছে না। এই সময়গুলো বুঝিয়ে দিলো প্রিয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নিজের বিভাগ, সম্মানিত শিক্ষকগণ, বন্ধু-বান্ধবীরা ও ক্লাসরুম গুলো এই তিন বছর পাঁচ মাসে কতটা আপন হয়েছে। এখন দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে পরিবারের সবার সাথে গল্প করে। মাঝে মাঝে বই পড়ে আর গাছের যত্ন নিয়ে।
মহান আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করি, আমাদের খুব দ্রুত করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি দিন ৷ দ্রুতআমরা আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই ৷ আগের ব্যস্ততম জীবনে ফিরতে পারলে অনেক ভালো লাগবে। আসুন সবাই স্বাথ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে শীঘ্রই মুক্তি পাব… ইনশাল্লাহ ৷

শারমিন আক্তার (সদর, মেহেরপুর)
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ
শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৬-২০১৭ (৪র্থ বর্ষ)

পছন্দের আরো পোস্ট