দুই জবি শিক্ষার্থীর করোনা জয়ের গল্প

জবি প্রতিনিধি।

বর্তমান সময়ে এক আতঙ্কের নাম করোনা। করোনার কারণে পৃথিবীজুড়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটছে সববয়সী মানুষের। কিন্তু করোনার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আজ শুনবো তেমনই দুই করোনাজয়ী জবি শিক্ষার্থীর গল্প।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটি বিভাগের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী শরীফ ইবনে ফুয়াদ। গত মে মাসে তার মা ও বাবার সাথে কোভিড-১৯ পজেটিভ সে। ফুয়াদ জানিয়েছেন তার করোনা জয়ের গল্প। ফুয়াদ লিখেছেন, ‘রোজার প্রথম দিন। আম্মুর কিছুটা জ্বর আসে ৯৯ ডিগ্রির মত। এরকম ২ দিন যায় জ্বর ৯৯ থেকে ১০১ এর ভিতরেই থাকে। তার পরের দিন আমার জ্বর আসে ১০৪ এর মত।প্রথমে ভেবেছিলাম মৌসুমি জ্বর কিন্তু জ্বর আর যায় না বরঞ্চ বাড়ে। পরে চিন্তিত হয়ে আইইডিসিআর এ ফোন দেই। কিন্তু ওরা নমুনা সংগ্রহের জন্য আসার কথা জানালেও পরে আসেনি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের সহযোগিতায় ১ তারিখ বাসায় আইইডিসিআর থেকে লোক আসে এবং নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ৬ তারিখ বিকাল ৪ টার সময় রিপোর্ট আসে। আমার এবং আমার মায়ের পজিটিভ এবং বাবার নেগেটিভ। সেই মুহুর্তে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে যায় গোটা পরিবার। কিন্তু মনোবল ধরে রাখি। পরে আমার বড় ভাই তার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় এসে আম্মুকে ঢাকা সিএমএইচ এ ভর্তি করিয়ে দেন। কিছুদিন পর তারও পজিটিভ আসে। প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি হব ভাবলেও, পরে বুজতে পারলাম বাসায় চিকিৎসা নেওয়াই ভাল হবে। আমি আর আম্মু বাসায় থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে থাকি। বিভিন্ন ধরনের মসলা মিস্রিত গরম পানি খেতে থাকি। ভিটামিন সি ও ডি যুক্ত খাবার খেতে থাকি। এভাবেই অনেক দিন চলতে থাকি। ১৮ তারিখ রাত ৯ টার সময় ২য় টেস্ট এর রিপোর্ট আসে। সকলের দোয়ায় আমার ও আম্মুর নেগেটিভ আসে। এই খবর শুনে পরিবারের সবাই খুশি হয়। এর কিছুদিন পর আব্বুরও নেগেটিভ আসে। এখন আমার পরিবারের সবাই সুস্থ যার জন্য আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করি। করোনা কোনো আতঙ্কের নাম নয়। মনোবল ধরে রেখে, নিয়ম মেনে চললেই সহজেই জয় করা যাবে করোনা।

Post MIddle

পরিবারের ৭ সদস্যসহ করোনা পজিটিভ হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুশফিকুর সালেহীন ভূইয়া। সালেহীন জানিয়েছেন তাদের গোটা পরিবারের একসাথে করোনা জয়ের গল্প। সালেহীন লিখেছেন, গত ১৬ মে, ২০২০ তারিখে আমার জ্বর সহ, পুরো শরীর ব্যাথা শুরু হয়, এছাড়া শরীর খুব দূর্বল হয়ে পড়ে। সে সাথে আমার পরিবারের আরও সাতজনের একই সমস্যা দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে করোনা হয়েছে এমন সন্দেহর উপর ভিত্তি করে গত ২১ মে করোনা টেস্ট করাই। টেস্টের রেজাল্ট এলো পরিবারের সবার করোনা পজিটিভ। প্রথমে সবাই ভয় পেলও, সামলে নিই, সবাই ছিলাম মানসিক ভাবে খুবই দৃঢ় । এছাড়া করোনাকে আমরা একটা সাধারণ রোগ বলে মানসিকভাবে স্থির করি। আমাদের পরিচিত কয়েকজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ঔষধ সম্পর্কে জেনে নেই। সাথে গরম পানির ভাপ, আদা চা এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার নেওয়া শুরু করি। এরই মধ্যে অনলাইনে আমি একটি বিজনেস কেস কম্পিটেশনে যোগদান করি এবং এটিই আমাকে করোনা যে পজিটিভ এসেছিল সেটি ভুলে থাকতে সহায়তা করে। অবশেষে আল্লাহর রহমতে গত ১২ জুন, ২০২০ তারিখে সেকেন্ড করোনা টেস্টে আমাদের সবার নেগেটিভ রেজাল্ট আসে।আর আমরা পরিবারের সকলেই করোনা জয় করি। আমাদের গোটা পরিবারের করোনা জয়ের পেছনে ছিলো আমাদের তীব্র মানসিক শক্তি। আর এর জন্যে মারাত্মক ভাবে কোন অসুস্থ হওয়া ছাড়া সবাই সেরে উঠি।

আমার যে সকল উপদেশ থাকবে করোনা আক্রান্তদের জন্যঃ
১। কোন ভাবেই মানসিক দিক থেকে ভেঙ্গে পড়া যাবে না। আর যাদের বয়স ৫০ বছরে নিছে তারা আমি মনে করি কোন দ্বিধা ছাড়াই করোনা কে জয় করতে পারবেন ইনশাল্লাহ।
২। সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে।
৩। মানসিক চাপ তৈরি হয় না, এমন কোন কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে হবে।
৪। নিয়মিত ঔষধ নেওয়া সহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
৫। আক্রান্ত রোগী আবশ্যই অন্যদের থেকে আলাদা থাকবে।
আশা করি সবাই এই জিনিস মেনে চললে খুব সহজেই করোনা কে জয় করতে পারবেন। সুতরাং ভয় না পেয়ে সাবধান থাকুন। সবাই বাসায় থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

পছন্দের আরো পোস্ট