গবিত সেমিস্টার ফি’র জন্য চাপ, উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থীরা
মোঃ বরাতুজ্জামান স্পন্দন, গবি প্রতিনিধি:
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) সেমিস্টার ফি এবং যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ না করলে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হবে না এবং এভাবে কারো জীবন নষ্ট হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেনা মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেমিস্টার ফাইনালের ঠিক আগমুহূর্তে এমন ঘোষণায় চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১লা জুলাই থেকে অনুষ্ঠিতব্য সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
চলমান পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কটে পড়ায় উৎকণ্ঠিত শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংসদের মাধ্যমে যোগাযোগ করার জন্য কিছু ছাত্র প্রতিনিধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন। এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেমিস্টার ফি ছাড়া বা বকেয়া রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি সম্বলিত চটকদার কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এ জাতীয় প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত না হয়ে শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অন্যথায় নিজের জীবন নিজেই নষ্ট করবেন এবং এতে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন ঘোষণায় সমালোচনার ঝড় বইছে। ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা কড়া ভাষায় এই নোটিশের সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘ইউজিসি যেখানে বলছে সেমিস্টার ফির ব্যাপারে চাপ দেয়া যাবেনা, সেখানে আমাদের প্রশাসন বলছে টাকা শোধ না করলে পরীক্ষায় বসতে দেবে না। প্রথমে মনে হয়েছিল তাঁরা অামাদের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই চিন্তিত। এখন দেখছি সব টাকা আদায়ের ধান্দা। তারা শুধু টাকা চিনে।’
আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ বাপ্পি বলেন, ‘এমন দুর্যোগকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে না দাড়িয়ে প্রশাসন সেমিস্টার ফির বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। যারা বিগত সময়ে বকেয়া পরিশোধ করতে পারে নাই, তাদের জরিমানা ধরা হয়েছে। এখানে অধ্যয়নরত বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের কথা চিন্তা না করে, ইউজিসি গৃহীত পদক্ষেপ না মেনে জোরপূর্বক সেমিস্টার ফি ও জরিমানা আদায় করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বকেয়া পরিশোধ করতে আসা শিক্ষার্থীদের থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। সদ্য জরিমানা দেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, এটা একদম অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। মানুষ না খেয়ে মরছে আর এরা আছে জরিমানা নিয়ে। এই অবস্থায় সেমিস্টার ফি দেয়াই অমানবিক, সেখানে জরিমানা আদায় রীতিমত জুলুম।
সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. নজরুল ইসলাম রলিফ ফেসবুক পোস্টে জানান, ‘ভাষা প্রয়োগেই আপনাদের সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা ধারনা পেয়ে যাবে। যেখানে ইউজিসি থেকে নির্দেশনা আছে সেমিস্টার ফি এর জন্য কোন শিক্ষার্থীদের চাপ দেয়া যাবে না সেখানে কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে এই ধরনের চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন?
তিনি অারও বলেন, ‘বিপদে স্বাভাবিকভাবেই আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো, এটাই নিয়ম। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি বানায় যাতে তাদের বিপদে প্রশাসনের কাছে কেউ গিয়ে কথা বলতে পারি। এই প্রক্রিয়া তো আপনারাই (প্রশাসন) তৈরি করেছেন। তাহলে কেন ছাত্র প্রতিনিধিদের টুটি চেপে ধরছেন? যদি কথাই বলতে না দেন তবে এই প্রতিনিধি নামক পুতুল বানানোর ধান্দা বাদ দেন।’
এদিকে নোটিশের ভাষা প্রয়োগ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। ‘নিজের জীবন নিজেই নষ্ট করবেন এবং এতে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না’ নোটিশের এই অংশের সমালোচনা করে সাবেক কিছু শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় কি এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারে? পূর্বেও তারা শিক্ষার্থীদের কথা ভাবার চেয়ে নিজেদের স্বার্থের কথাই বেশি ভেবেছে। অবিলম্বে এমন শব্দের প্রত্যাহার এবং ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।