ঘরে ডেঙ্গু, বাহিরে করোনা: আতংক নয়, সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি!

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

দেশজুড়ে করোনার ভয়াবহতা, এর মধ্যেই অনেকটা নিরবে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে ডেঙ্গুর মৌসুম। এই অবস্থায় ঘরবন্দী মানুষকে মশা কামড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে বেশি। করোনাকাল দীর্ঘ হলে এই সুযোগ আরো বাড়বে, সেইসাথে ডেঙ্গুর ঝুঁকিও। গেল বছরের ভয় এবং এবার মশার বেপারোয়া উপদ্রবে দেশের মানুষের মাঝে আশঙ্কা জেগে ওঠেছে ডেঙ্গু প্রকোপের। করোনাভাইরাসের ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক হাজার ভবনের নির্মাণকাজ আকস্মিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সীমিত পরিসরে খুললেও এখনো বন্ধ রয়েছে অনেক অফিস ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মার্কেট-শপিংমল ও স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় জনশূন্য এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা নানা পাত্র, ওয়াটার রিজার্ভার ও ছাদে বৃষ্টির পানি জমছে। যা পরিষ্কার করার কেউ না থাকায় সেখানে নির্বিঘ্নে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। এ অবস্থায় করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেলে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে পুরো দেশে। তাই যে কোনো মূল্যে কর্তপক্ষকে মশা নিধন কার্যক্রম গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণের জন্য সকলের সচেতনতা ও সহযোগীতা প্রয়োজন। যেহেতু বিপদটা আমাদের সবার। সুতরাং নিজেদেরকেই সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে। সবাই মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালালে ডেঙ্গু প্রকোপ রোধ করা সম্ভব হবে। আমাদের সকলকে জানতে হবে এবং জানাতে হবে, জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। তাই ঘরে সাজানো ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, যেকোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি জমে থাকতে দেয়া যাবে না। এডিস মশা সাধারণত সূর্যোদয়ের আধা ঘণ্টার মধ্যে ও সূর্যাস্তের আধা ঘণ্টা আগে কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে বিশেষভাবে সাবধানে থাকতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। এটা ডেঙ্গু প্রতিরোধের সর্বোত্তম পন্থা। এ কাজগুলো যার যার অবস্থানে থেকে সবাইকেই করতে হবে।

এছাড়া কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য কয়েকটি উপসর্গের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রচন্ড জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পেটে ব্যথা, মাংশপেশী ও হাড়ে ব্যথা, বমি-বমি ভাব, শরীরে হামের মতো লাল দানা দেখা দেয়ার মধ্য দিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়। এ রোগের মূল চিকিৎসা হচ্ছে বিশ্রাম এবং জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসেটামল, মাথা ধোয়া, শরীর মুছে দেয়া, প্রচুর পানি ও তরল পানীয় সেবন করাতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গু ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ডেঙ্গু জ্বর সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে হবে। আমরা আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও সচেতনতায় মুক্তি মিলবে ভয়াবহ ডেঙ্গু প্রকোপ থেকে। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজ নিজ বাসা, বাড়ি ও তার আশপাশে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ডেঙ্গু সৃষ্টিকারি মশার জন্মস্থল ধ্বংস করতে হবে। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু মফস্বল শহর ও গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে এই যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি জনগণ সচেতন হলে মানুষের অবশ্যই জয় হবে, নিরাপদে থাকবে ঘরে।

Post MIddle

অন্যদিকে করোনায় থমকে গেছে বিশ্ব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে পুরো বাংলাদেশ করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ডে মানুষের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত হচ্ছে, লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। তাই করোনার বিস্তার রোধে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ও উদ্যোগের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। দেশবাসীর উচিত এসব নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকের চলাচলের পরিধি নিয়ন্ত্রণ করা। যেকোনো ভাবেই হোক নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রাখা এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যেকোনো ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম উপায় হচ্ছে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সেলফ কোয়ারেন্টাইন, হোম কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা জরুরি। কারণ এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে ব্যক্তি ও সমষ্টির মঙ্গল ও কল্যাণ। কোয়ারেন্টাইন কোনো সাজা নয়, নিজের ও পরিবারের, সর্বোপরি দেশবাসীর কল্যাণে নিরাপত্তা ও সুরক্ষামূলক একটি মহৎ প্রচেষ্টা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, একটু সুযোগ পেলেই মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে আসছে। কোনো বিধিনিষেধের তোয়াক্কাই করছে না। এতে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি অন্যকেও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই বোধ তাদের কবে জাগ্রত হবে তা একমাত্র স্রষ্টাই জানেন। করোনাভাইরাসের কারণে যেসব এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেশি, সেসব এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে লকডাউন করা হয়েছে। জরুরি কোনো কাজ ছাড়া মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। দেশের বাইরে যাওয়া বা আসার পথও বন্ধ। তারপরও এক পথে যখন চলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, তখন অন্য পথে প্রতিদিনই এক শ্রেণির মানুষ নানা অজুহাতে চলাফেরা করছে। কঠোর নির্দেশনার পরও নিয়ম ভাঙার আত্মঘাতী খেলায় মানুষ মেতে উঠেছে। এর ফলে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সরকারের পদক্ষেপগুলো সঠিকমাত্রায় কার্যকর হতে পারছে না। যা গোটা জাতিকেই ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

তবে সংক্রামক মহামারীর ইতিহাস বলে, সচেতনতা বজায় রেখেই শুধুমাত্র দ্রুতগতিতে সংক্রমণ রোধ করা যায়। সে হিসেবে আমাদের এখনও সময় আছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে যা মেনে চলা জরুরি- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করা এবং পানি পান করা, যা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে মানুষ থেকে মানুষে। ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান কারণ মানুষের সংস্পর্শে আসা। তাই সকলের উচিত জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত বাইরে না যাওয়া।

পছন্দের আরো পোস্ট