জবি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় চান শিক্ষক-ছাত্রনেতারা
জবি প্রতিনিধি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সকল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালেয়র শিক্ষক নেতৃনৃন্দ ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার সিদ্ধান্তের পর জবি শিক্ষার্থীদেরও স্বাস্থ্যবিমায় আনার পক্ষে কথা বলেছেন শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিরা।
শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের মতে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে মেসবাড়িতে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। একেতো মেসভাড়ার অতিরিক্ত খরচ ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত সম্ভব হয় না।তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই কোনো চিকিৎসার সুযোগ। বিশ্ববিদ্যলয়ে যে নামমাত্র মেডিকেল সেন্টার আছে সেখানে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা মেলে। সবমিলিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ন্যূনতম প্রিমিয়ামে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা মিললে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা সমস্যা সমাধান হবে।
ছাত্র নেতারা বলছেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারটি অপ্রতুল, সে বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিমা জরুরী। তবে স্বাস্থ্যবিমার ব্যয়ভার অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা করতে হবে।
জবির ৭দফা আন্দোলনের সংগঠক তৌসিব মাহামুদ সোহান বলেন, আমাদের বাসাভাড়া দিতেই বড় খরচ হয়ে যায়। ডাক্তার ফি, ডায়গনস্টিক সেবা, ওষুধ খরচ, চাইলে সব রোগের চিকিৎসা সব শিক্ষার্থী করাতে পারে না। স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবার চাহিদাটা পূরণ হবে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিমার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে।
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি কে.এম মুত্তাকী বলেন, স্বাস্থ্যবিমার ব্যয়টা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করবে না শিক্ষার্থীদের ব্যয় করতে হবে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার অপ্রতুল সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যয়টা বহন করতে হবে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি, রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, ঢাবি, জাবি বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারগুলোর সাথে তুলনা করলে বোঝা যায় জবির মেডিকেল সেন্টার কতটা অপ্রতুল আর শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে কতটা বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিমাটা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী কেননা শিক্ষার্থীরা যেকোনে রোগের চিকিৎসা সহজে পাবে।
জবির মেডিকেল সেন্টারের অপ্রতুল অবস্থা স্বীকার করে স্বাস্থ্যবিমা প্রয়োজন মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মিতা শবনম। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিমা হলে শিক্ষার্থীদের ভালো হয়। আমাদের মেডিকেল সেন্টার অপ্রতুল, একটা রুম-একটা বেড এভাবেতো হয় না। স্বাস্থ্যবিমা হলে শিক্ষার্থীর অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে যেকোনো রোগেরই সহজে চিকিৎসা পাবে। তাছাড়া ডায়াগনস্টিক যে সেবাটা ওটাও তারা সহজে নিতে পারবে।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করছেন শিক্ষক নেতারাও। তারা বলছেন, সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা দরকার।
নীলদলের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড.জাকারিয়া মিয়া বলেন, বাংলাদেশের অন্য যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আগেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থবিমা জরুরী। আমাদের মেডিকেল সেন্টারকে প্রকৃতপক্ষে মেডিকেল সেন্টার বলা যায় না। আমাদের শিক্ষার্থীদের আবাসনের যে ব্যবস্থা, যাতায়াতের ব্যবস্থা বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিমাটা হওয়া দরকার।
নীলদলের অপর অংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, অন্য সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জবি পিছিয়ে থাকে, কারণ আমরা নতুন। বিমার একটা সিস্টেম আছে, তবে সেটা অসম্ভব না। তবে স্বাস্থ্যবিমার বিষয়টা নিয়ে আমরা কথা বলবো। শুধু শিক্ষার্থীদের নয় সবারই এটা দরকার।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর আলম আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যবিমা থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য খুব ভালো হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য উপকার হবে। আমাদের আবাসন আছে বা নেই সেটা বিষয় না, স্বাস্থ্যবিমাটা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, এটা দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় আসলে আমরা দেখবো। স্বাস্থ্যবিমা যখন করা হবে, হয় শিক্ষার্থীদের টাকা দিবে না হলে সরকার থেকে টাকা পেতে হবে। তবে বেশকিছু বিমা কোম্পানি আমাদের সাথে যোগাযোগ করছিলো, আমরা সবকিছু বিবেচনা করে একটা ব্যবস্থা নিবো।