সেলফ কুয়ারেন্টাইন ডায়েরী – ২

ড.মো.ইকবাল হোছাইন

পড়ছিলাম ইউনুস বিন মাত্তা (আ.) কে নিয়ে। বিশাল পরীক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর এ নবী। আল্লাহর নির্বাচিত নবীদের পরীক্ষা আমাদের জন্য সত্যিই অনুপ্রেরণা। তিনি বর্তমান ইরাকের মসুল এলাকার নিনওয়া জনপদে নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। নিনওয়া আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত একটি অঞ্চল যা বর্তমান উত্তর ইরাকের নগরী। ইরাকযুদ্ধের পূর্বে এলাকাটি পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল। শহরটি তাইগ্রীস নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস অঞ্চলের অন্তর্গত। ৬১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহরের মর্যাদায় অভিষিক্ত ছিল নিনওয়ার। ইউনুস (আ.)কে কুরআনে জুননুন ও সাহেবুল হুত নামেও সম্বোধন করা হয়েছে। সূরা ইউনূস সহ ৬টি সূরার ১৮টি আয়াতে তাঁকে নিয়ে কমবেশী আলোচনা হয়েছে।

Post MIddle

ইহুদী ধর্মে ইউনূস (আ.) কে Jonah বলা হয়। The book of Jonah ইহুদীদের স্বীকৃত ১২ বারজন নবীর কিতাবের একটি। খৃষ্টধর্মে Book of Tobit ও New Testament এর মেথিও-এ দু‘বার ইউনুস (আ.)-এর কথা এসেছে। তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠা, নবী হওয়ার বর্ণনা ও দ্বীন প্রচারের কৌশলে বিতর্ক থাকলেও নবী হিসেবে প্রেরণের স্থান, নৌকায় আরোহন ও মাছের পেটে যাওয়ার বর্ণনা খুব কাছাকাছি।

নিনওয়া জনপদের জনগণ ইউনুস (আ.)-এর অবাধ্য হলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার কথা বলে তিনি অন্যত্র চলে যান। আসন্ন গজবের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নিনওয়াবাসী তথা ইউনুস (আ.)-এর উম্মতগণ সত্যিকার অর্থে আল্লাহর কাছে তওবা করেন এবং আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ভবিষ্যতের সমূহ বিপদের আশংকা করে নবী অন্যত্র চলে যেতে চাইলেন। যাওয়ার পথে নদী থাকায় তিনি নৌকায় চড়েন। নৌকায় বুঝাই হয়ে গেলে একজন নেমে যাওয়ার প্রশ্ন আসলে লটারিতে তিনবার ইউনূস (আ.)-এর নাম ওঠায় তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন। ইতিমধ্যে আল্লাহর নির্দেশে একটি মাছ তাকে গিলে ফেলে। মাছের পেটে কত দিন কত ঘন্টা ছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে নিজের ইজতিহাদে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আল্লাহর মন:পুত ছিল না। এ বিষয়টি কোরআন শরীফে উল্লেখিত আছে সুরা আল-আম্বিয়ার ৮৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উল্লেখ করেছেন। ইউনূস (আ.) তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং কায়মানোবাক্যে দোয়া করেছিলেন “যে তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই তুমি মহান নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।”

মাছের পেটে থেকে তিনি এ দু‘য়া করলেন। আল্লাহ তাকে মুক্তি দিলেন। এ কঠিন বিপদ হতে মুক্তি পেয়ে তিনি নিজের কওমের কাছে ফিরে গেলেন এবং দ্বীনের দাওয়াতী কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তাঁর এ দু‘য়াটি দু‘য়ায়ে ইউনুস নামে পরিচিত। যে কোন মুছিবতে এ দোয়া পড়া যায়। রাসূল (স.) বলেন, বিপদগ্রস্থ কোন মুসলমান যদি উক্ত দোয়া পাঠ করেন তবে আল্লাহ তা কবুল করেন। কেননা দু‘য়ার মাধ্যমে ইউনুস (আ.)-এর জাতি নিশ্চিত বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন আবার ইউনূস (আ.) দুয়ার মাধ্যমে নিজের জন্য ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পেয়েছিলেন । আজকে সমগ্র বিশ্বের করোনা নামক যে সর্বগ্রাসী মুসিবত এসেছে মুসিবতের দিনে আমরা কি দু‘য়াটি বেশি বেশি করে পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য পানাহ চাইতে পারিনা?

অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসেইন

লেখক: ড.মো.ইকবাল হোছাইন । ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে হাতেগোনা কয়েকজন লেখকের অন্যতম। উচ্চ পর্যায়ের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আর ওয়ার্কশপ নিয়ে নিত্য ছুটে বেড়ান দেশে বিদেশে । লেখালেখি বিস্তর। করোনার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তার তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্লেষণ পাঠকদের কাছে উপাদেয় হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। ধারাবাহিক ও সংক্ষিপ্ত এ লেখাগুলো পড়তে সাথে থাকুন।

পছন্দের আরো পোস্ট