শিক্ষার্থী ছাড়া পড়াচ্ছেন শিক্ষক

ইন্টারন্যাশন্যাল ডেস্ক

দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বসে আছেন ইংরেজির শিক্ষক মিস হা। ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থী নেই। ল্যাপটপে নাম ডাকছেন মিস হা। বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হাংকুক অ্যাকাডেমি অব ফরেন স্টাডিজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মিস হা বলেন, ক্লাস শুরু করার আগে ভয়ে ভয়ে ছিলাম। তবে যতটা জটিল ভেবেছিলাম, বিষয়টা এত জটিল নয়। এই পরিস্থিতিতে এ ভাবে ক্লাস নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ইংরেজি সংস্কৃতির আরেক শিক্ষক মিস ইউ মনে করিয়ে দেন, সুনামির সময়ও তাঁরা এভাবে ক্লাস নিয়েছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা বেশ জটিল। এখানে শিক্ষার্থীদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। কলেজে ভর্তির পরীক্ষাও বেশ কঠিন। একের পর এক পরীক্ষা চলতেই থাকে। দেশটিতে করোনার সংক্রমণের কারণে স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে। তাই এখন অনলাইনে শিক্ষাপদ্ধতিই ভরসা। সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও দেশটিতে এখনো ক্লাস চালু করা নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চাং সুয়ে কিউয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অনলাইনে স্কুল আমাদের কাছে একটা নতুন পথের মতো। এই পথে আমরা আগে কখনো হাঁটিনি। অনলাইনে স্কুল শুরু ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ভালো পরিকল্পনা আমাদের কাছে নেই। নিম্ন আয়ের মানুষদের ইন্টারনেট খরচ দেওয়া শুরু করেছে সরকার। তবে অনুন্নত এলাকাগুলোর শিক্ষকদের কাছে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মতো প্রযুক্তি আছে কি না, সেটিও একটি প্রশ্ন। দেশটির প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার মানুষ জানিয়েছে অনলাইন স্কুল শুরু করার মতো যথেষ্ট প্রযুক্তি তাদের নেই।’

বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এসব স্কুলে ট্যাবলেট, বহনযোগ্য ইন্টারনেট সেবা দিয়ে সহায়তা করছে। সিউলে গুড নেইবারস নামে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংস্থা নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি খাবারও দিচ্ছে। গুড নেইবারস জানায়, ‘অনেক পরিবারের মা–বাবা কাজে গেলে সন্তানকে কীভাবে বাসায় একা রেখে যাবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা এ ধরনের পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। ফোনে তাদের সন্তানদের খোঁজখবর নিচ্ছি। তাদের খাবার পাঠাচ্ছি। তাদের কোনো সাহায্য লাগবে কি না, জানতে চাইছি।’

Post MIddle

তবে অনেক মা–বাবা সন্তান এত দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে কাটাবে তা নিয়ে চিন্তিত। চোই ইয়ুন জাং নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছোট ভাই সাত ঘণ্টা ধরে মনিটরের সামনে থাকছে।’সে আমাকে বলেছে, এত দীর্ঘ সময় ধরে মনিটরের সামনে বসে কাজ করায় তাঁর চোখ ব্যথা করে।ইউ সু হা বলেন, ‘আমি আমার হাইস্কুলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের যত কষ্টই হোক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছি।’

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বলছে, পুরো ব্যবস্থাটা পরীক্ষামূলক। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁরা জনগণকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলেছেন। সরকার বলছে, যদি প্রতিদিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ৫০–এর নিচে নেমে আসে, তাহলে তাঁরা কিছু স্কুল খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করবেন।

ইউ সুহা বলেন, ‘সিউলের জীবনে এখন অনেক কিছুকেই আমরা স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি। মাস্ক দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি জায়গায় স্যানিটাইজার থাকে। এ রকম অনলাইন ক্লাসও শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।’

বিবিসির সৌজন্যে

পছন্দের আরো পোস্ট