খুবিতে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সেমিনারে কৃষি মন্ত্রী
খুবি প্রতিনিধি।
কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর গৃহীত কৃষি নীতির পথ ধরেই বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত করেছে। দেশ আজ খাদ্যশস্য, মৎস্য, দুগ্ধ, মাংসসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করছে। এখন আমাদের কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং কৃষির বহুমুখীকরণে শিক্ষিত যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি কৃষিবিদ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতি উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে একাধিক ফসল উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবনের তাগিদ দিয়ে বলেন তাহলে কৃষি উৎপাদনে আরেকটি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
মন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু উৎপাদন বৃদ্ধিতে উন্নত চাষ, সেচ, বীজের ব্যবহারে পদক্ষেপ নেন। বিদেশ থেকে ট্রাক্টর, সেচযন্ত্র আনার ব্যবস্থা নেন। বঙ্গবন্ধুই কৃষিবিদদের প্রথমশ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদা দেন এবং ব্রি, বারি, বিএআরসি প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের আজকের কৃষির যে সমৃদ্ধি, যে সাফল্য বঙ্গবন্ধুই তার ভিত্তি রচনা করেন। তিনি বিদেশ সফরে যেয়ে কৃষির বিষয়ে খোঁজ নিতেন। তার রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ও প্রজ্ঞায় কৃষির অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিলো। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিক ও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে সুস্পষ্ট ও তথ্যবহুল ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন বাংলাদেশের কৃষির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্বর্ণ অক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। তিনি আজ রাত ৮ টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর অবদান’.শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ রায়হান আলী এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পংকজ কুমার মজুমদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মোঃ সারওয়ার জাহান এবং শুরুতে পাওয়ার পয়েন্টে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মোঃ ইয়ামিন কবির।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে খাদ্যশস্যর উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে ‘ রোল মডেলে’ পরিণত হয়েছে। এছাড়াও শাক-সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় এবং মাছ উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্দীপনামূলক আকর্ষণীয় উন্নয়ন নীতিমালা গ্রহণ করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিগত বছরগুলোতে সেই নীতিমালা অনুসরণ করে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। স্বাধীনতার পরে ৪৫ বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ আবাদি ভূমি কমে যাওয়া সত্ত্বেও ধানসহ খাদ্যশস্য উৎপাদন ১৯৭২ সালের ১ দশমিক ১০ কোটি মেট্রিক টন থেকে বেড়ে প্রায় ৪ কোটি ৩০লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, কৃষিখাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল বিস্ময়কর। তখনকার প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতির ক্ষেত্রে কৃষির আধুনিকায়নে জাতির পিতা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে সময়ে কৃষকদের খাদ্যশস্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু কিছু দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যাতে কৃষকরা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে। বঙ্গবন্ধু কৃষিখাতের মাঠ কর্মী, সরকারি কর্মকর্তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। তিনি আরও বলেছিলেন, যদি আমরা একই জমিতে দু’বার শস্য উৎপাদন করতে পারি তাহলে দেশে খাদ্যশস্যের কোন ঘাটতি থাকবে না। মন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু উন্নত এবং স্বল্প মেয়াদী চাষাবাদ পদ্ধতি, মানসম্মত বীজ সরবরাহ, সেচ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহযোগিতার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রান্তিক চাষীদের কৃষি ঋণ মওকুফ, তাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার এবং ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বণ্টন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি খাতের পুনরুজ্জীবন ঘটান। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন কৃষিখাত এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর গৃহীত নীতিমালা অনুযায়ী কৃষিখাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি দেশে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের সুযোগ প্রসারিত না করতেন তাহলে বাংলাদেশ আজও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারতো না। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নানাবিধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং এটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিজমি কমে যাওয়ায় সরকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে সারের একাধিকবার মূল্য হ্রাসে করেছে। একইসঙ্গে কৃষি ঋণ বিতরণ, গবেষণায় অগ্রাধিকার ও প্রণোদনা দেওয়ার ফলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা। দেশের ৪০ শতাংশ লোক কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ভবিষ্যৎ মেধাবী জাতি গঠনে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত জরুরি। তিনি বলেন, উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বাড়ছে। তবে লাগসই প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত করা যায়। সে কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে জীববৈচিত্রে রয়েছে অস্তিত্বের সম্পর্ক। দেশের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত অনেক নদীর গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছে। কোথাও নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পানিসেচ বিঘিœত হচ্ছে। অনাবৃষ্টি ও খরার প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষির উৎপাদন। বাংলাদেশের শস্যখাতে অভিযোজন কর্মসূচি মোটামুটিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। খরা, বন্যা, তাপ, লবণাক্ত জলমগ্নতা ও পরিবেশ সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষিকে আধুনিকীকরণ, যান্ত্রিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে টেকসই ও লাভজনক করার কাজ করছে সরকার।
তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আখ্যায়িত করে কৃষিবিদ,বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি গবেষণার মাধ্যমে উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবনের আহবান জানান। আর বিশাল উপকূলীয় অঞ্চলে একাধিক ফসল উৎপাদন করতে পারলে কৃষি ক্ষেত্রে আরেকটি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে। মন্ত্রী মুজিব বর্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি চমৎকার ও সময়োপযোগী সেমিনার আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা ও এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।