রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শিক্ষক দিবস পালিত

রাবি প্রতিনিধি।

আজ (১৮ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার মহান শিক্ষক দিবস। ঊনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানকালে এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। দিনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়।

দিবসের কর্মসূচিতে আজ ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টায় উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এম এ বারী, ছাত্র-উপদেষ্টা প্রফেসর লায়লা আরজুমান বানু, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রভাষ কুমার কর্মকার, প্রক্টর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান, অনুষদ অধিকর্তা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন ইত্যাদি প্রভাতফেরিসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।

এদিন সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন রাবির সাবেক উপাচার্য এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার প্রফেসর এম সাইদুর রহমান খান। রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মো. বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান এবং পৃষ্ঠপোষক উপ-উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়াও বক্তৃতা করেন ।

স্মারক বক্তৃতায় প্রফেসর এম সাইদুর রহমান খান বলেন “তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন, যা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার একটি দেশকে দারিদ্রমুক্ত, কর্মসংস্থান ও জাতীয় উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। বিরাট এক পরিবর্তন ও ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে। একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন।

Post MIddle

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণই ছিল তাঁর প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করে যে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ পরিণত হবে। একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিটিজাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদনব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্নই দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বস্তত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করবে।

তথ্যপ্রযুক্তির অবদানকে সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’ ১৭ থেকে ২২ নভেম্বর ২০০৯-এ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ নামক এ বিষয়ে প্রথম শীর্ষসম্মেলনের আয়োজন করে, যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়। আর এভাবেই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ এ পরিণত হবার পথে এগিয়ে চলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ।”

তিনি আরো বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সমাজ বা দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক হল সবার হাতের নাগালে তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া এবং সকল শ্রেণির জনগণের তথ্যপ্রযুক্তি সেবাই মানুষের অভিজ্ঞতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবাধ তথ্য প্রবাহের যে ভূমিকা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা তবে একটি দিক খেয়াল রাখতে হবে যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, উদ্ভাবন এবং সুফলটুকু শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে চলবে না। এই সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিকে সুদূরপ্রসারী করতে পৌঁছে দিতে হবে গণমানুষের আঙিনায়। একে সহজলভ্য করতে ভূমিকা রাখতে হবে সরকারের নীতি নির্ধারক মহলকে, এগিয়ে আসতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকেও। মনে রাখতে হবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিই পারে দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে দেশের চেহারা পাল্টে দিতে, পৌঁছে দিতে পারে উন্নয়নের শীর্ষ চূঁড়ায়।”

স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে শহীদ জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। সেখানে শহীদের জীবনালেখ্যও উপস্থাপন করা হয়। সেখানে অন্যদের মধ্যে ছাত্র-উপদেষ্টা প্রফেসর লায়লা আরজুমান বানু, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রভাষ কুমার কর্মকার, প্রক্টর প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান, অনুষদ অধিকর্তা, রসায়ন বিভাগসহ অন্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দিবসের কর্মসূচিতে আরো ছিল সকাল ৮.৩০ মিনিটে অফিসার সমিতি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে দোয়া মাহফিল, প্রদীপ প্রজ্বালন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। এ দিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা ছিল।

বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।

পছন্দের আরো পোস্ট