একুশে বইমেলার কথকথা

নাজমীন মর্তুজা।

বই , এই ছোট শব্দটা বিশাল জ্ঞানসমুদ্র । এই বই জ্ঞানের মহা সমুদ্রে মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আপন স্রোতে । জ্ঞানের বাহন হিসেবে বই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মাধ্যম ।

আর বই মেলা তো একটা কমন ব্যপার যা সারা বিশ্বেই হয়ে থাকে । বইমেলা মানে বইয়ের মেলা, প্রকাশকের মেলা, পাঠকের মেলা, দর্শকের মেলা, ক্রেতার মেলা। সাংবাদিক এবং নানান সাবজেক্ট খবর , ইন্টারভিউ , বিজ্ঞাপণ , প্রাণের মেলা, জ্ঞানের মেলা, মেধা ও মননের মেলা।এই বই মেলার রকম ও ভাব বিনিময় আবেগ সারা পৃথিবীর বইমেলার একই ।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ব্যাপকভাবে পরিচিত একুশে বইমেলা, স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম। প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে ও বর্ধমান হাউজ ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনেও মেলার একটি অংশ আয়োজন করা হয়।যেটিই মূলত মূল মেলাকেন্দ্র ।

বইমেলা চলাকালীন প্রতিদিনই মেলাতে বিভিন্ন আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর বসে; প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলাতে লেখককুঞ্জ রয়েছে, যেখানে লেখকেরা উপস্থিত থাকেন এবং তাঁদের বইয়ের ব্যাপারে পাঠক ও দর্শকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এছাড়া মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন মোড়ক উন্মোচিত বইগুলোর নাম, তদীয় লেখক ও প্রকাশকের নাম ঘোষণা করা হয় ও দৈনিক প্রকাশিত বইয়ের সামগ্রিক তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল মেলার মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শক-শ্রোতাদেরকে অবহিত করে। এছাড়াও মেলার প্রবেশদ্বারের পাশেই স্টল স্থাপন করে বিভিন্ন রক্ত সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে রক্ত সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়াও থাকে ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান , ও ক্ষুদ্র পরিসরে রকমারী পণ্যের পসরা ।

২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই মেলার প্রবর্তক জনাব চিত্তরঞ্জন সাহার নামে একটি পদক প্রবর্তন করা হয়। পূর্ববর্তী বছরে প্রকাশিত বইয়ের গুণমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।পুরস্কারটি আনুষ্ঠানিক নাম ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’। এছাড়া স্টল ও অঙ্গসজ্জার জন্য দেয়া হয় ‘সরদার জয়েনউদদীন স্মৃতি পুরস্কার’। সর্বাধিক গ্রন্থ ক্রয়ের জন্য সেরা ক্রেতাকে দেয়া হয় ‘পলান সরকার পুরস্কার’।এবং নানান সেক্টরের লেখকের জন্য থাকে মূল আর্কষণ বাংলা একাডেমী পুরস্কার ।

১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই এই মাসে আয়োজিত এই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
এছাড়াও বইমেলায় স্টল সম্পাদনায় কোন কোন প্রকাশনা সংস্থার স্টল স্থান পাবে, কেমন স্টল করতে পারবে, তার জন্য বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে আলাদা কমিটি গঠিত হয়। ২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়: প্রকাশিত বইয়ের কপি জাতীয় আর্কাইভ ও জাতীয় গণগ্রন্থাগারে জমা দেওয়া হয়েছে কিনা, কর-নির্দেশক-নম্বর (TIN) ঠিক আছে কিনা যাচাই করার পাশাপাশি প্রকাশিত নতুন বইয়ের কপি বাংলা একাডেমীর তথ্যকেন্দ্রে জমা দেওয়ার বিষয়টিও বাধ্যতামূলক করা হয়।

মোটামুটি আমরা বই মেলা সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার সাহায্যে আমরা সব তথ্যই নিখুঁত ভাবে পেয়ে গেছি । “জ্ঞানের প্রসারে বইয়ের প্রয়োজনীয়তা প্রাচীনকাল থেকেই অনুভূত ছিল। তবে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে বইয়ের বিস্তার তেমনভাবে ঘটেনি। হাতে লেখা বইয়ের প্রচার কষ্টসাধ্য ছিল। পঞ্চদশ শতকে জার্মানির গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করলে বইয়ের জগতে বিপ্লব সাধিত হয়। গুটেনবার্গ নিজের আবিষ্কৃত ছাপাখানায় ছাপা বই বিক্রির জন্য ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে নিয়ে আসতেন। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য বই বিক্রেতাও তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে সেখানে বসতে শুরু করেন। সে সকল বই কিনতে বিভিন্ন শহর থেকে ক্রেতারাও আসতে শুরু করে। আর এভাবেই বিশ্বে বইমেলার প্রচলন হয়। এভাবেই বিশ্বের প্রাচীন বইমেলা শুরু হয় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে। রেনেসাঁ ও শিল্প বিপবের হাত ধরে জার্মানির দেখাদেখি ইউরোপের অন্যান্য শহরেও বইমেলার প্রচলন হয়। ১৮০২ সালে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে প্রথম বইমেলা বসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। ১৮৭৫ সালে প্রায় ১০০ জন প্রকাশক মিলে নিউইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করে বৃহৎ এক বইমেলার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে জার্মানির পুস্তক প্রকাশক সমিতি ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে আনুষ্ঠানিক বইমেলার প্রচলন করে। এ মেলা এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বইমেলা। বিশ্বে শতাধিক দেশ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। ফ্রাঙ্কফুর্টের পর লন্ডন বুক ফেয়ার বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই মেলাটি মূলত প্রকাশকদের মেলা, পাঠকরা এখানে ততোটা গুরুত্ব পায় না। প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রচারের জন্য, অন্য প্রকাশক থেকে বইয়ের স্বত্ব অথবা বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনাবেচার জন্য প্রকাশকরা এ মেলায় অংশ নেয়। ১৯৬৯ সালে আরব বিশ্বের সবচাইতে বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয় মিশরের রাজধানী কারয়োতে। কাতারের দোহা ও ইরানের রাজধানী তেহরানেও বড়সড় বইমেলা হয়। ১৯৭৭ সালে শুরু হওয়া মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বইমেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম বইমেলা কোলকাতা বইমেলা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। অনেকের মতে, এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা। ২০১৩ সালে কলকাতা বইমেলায় বাংলদেশ ছিল থিম কান্ট্রি। বাংলাদেশে বইমেলার ইতিহাস কোলকাতার থেকে প্রাচীন।

পাকিস্তান আমলে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রসারে ১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা হয়। বইমেলার চিন্তাটি এ দেশে প্রথমে মাথায় আসে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীনের। তিনি বাংলা একাডেমীতে একসময় চাকুরী করতেন বাংলা একাডেমি থেকে ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল

Post MIddle
নাজমীন মর্তুজা
লেখিকা : নাজমীন মর্তুজা

Wonderful World of Books. . এই বইটি পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ দুটি শব্দ দেখে পুলকিত বোধ করেন। শব্দ দুটি হলো : ‘ Book ’ এবং ‘ Fair’. কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন। বইটি পড়ার কিছু পরেই তিনি ইউনেসকোর শিশু-কিশোর গ্রন্থমালা উন্নয়নের একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। কাজটি শেষ হওয়ার পর তিনি ভাবছিলেন বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবেন। তখন তার মাথায় আসে, আরে প্রদর্শনী কেন? এগুলো নিয়ে তো একটি শিশু গ্রন্থমেলাই করা যায়। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তিনি একটি শিশু গ্রন্থমেলার ব্যবস্থাই করে ফেললেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি) নিচতলায়। যত দূর জানা যায়, এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলা। এটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে।” এই তথ্য গুলো মেহেদী হাসান পলাশ এর লেখা থেকে পেয়েছিলাম । আরও জানতে পারি “১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়েরও বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই বিচ্ছিন্ন বই বিক্রির উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে বাংলা একাডেমিতে একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য গ্রন্থমনস্ক মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। (শামসুজ্জামান খান, প্রথম আলো, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৪)। এ বিচারে দেখা যায়, বাংলাদেশে বইমেলার প্রাণপুরুষ কথা সাহিত্যিক সরদার জয়েনউদদীন।”

আমাদের দেশের একুশের বইমেলা যদিও জাতীয় বইমেলা কিন্তু নানা বিচারে এটি যেকোনো আন্তর্জাতিক বইমেলার সাথে পাল্লা দেবার সমকক্ষতা রাখে অনায়াসে ।

মাসজুড়ে পাঠক-লেখক-প্রকাশকের মিলনস্থলে পরিণত হওয়া বাঙালির প্রাণের অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হতে যাচ্ছে ক’ দিন পরেই । বইয়ের দোকান , নতুন বইয়ের ঘ্রাণ , রকমারী প্রচ্ছদ সব মিলে একটা সাজ সাজ রব ।

তবে আজকাল নতুন প্রজন্মের বইমেলাকে ঘিরে অনেকের অনেক প্রশ্ন । । কারণ অনেক গুলোই আছে! বইয়ের প্রতি কতটা ঝুঁকছে আজকালকার পাঠক । বই কেনার জন্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহ-ভালবাসা এবং অবসর সময় একান্ত প্রয়োজন আর সেই সময় টুকু প্রযুক্তির উন্নয়নের এই যুগে অধিকাংশ মানুষের বিশেষ করে কিশোর, তরুণ ও যুবশ্রেণীর মধ্যে কতটুকু পাচ্ছে , যেখানে বই বিষয়ের আড্ডা হচ্ছে , বই বিনিময় হচ্ছে , বুক রিভিউয়ের আলাপের বড্ড অভাব!! শুধুমাত্র এখন শ্রেণীর পাঠ্য বই ছেড়ে দিয়ে প্রযুক্তির কল্যানে সবাই পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র খোঁজার নেশায়  ফেসবুকসহ, ভাইভার ও ইমোতে ট্যাংগো হুয়াটসআপে বুঁদ হয়ে থাকে , একটু কিছু না জানলেই গুগল তো আছেই ! তাই যাদের শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তক পড়ে জ্ঞান আহরণ করার সদিচ্ছা, আগ্রহ ভালবাসা কিছু নেই তাদের কাছ থেকে অন্য গল্প বা সাহিত্য পড়ার আশা করাও যে ভুল ।

আবার যারা কম করে হলেও পড়ে তারা ঝুঁকেছে নিস্প্রান  ই-বুকের দিকে! যদিও আমি ই বুক পড়াটাকে দোষের কিছু মনে করি না , তবুও ভালো পড়ছে তো ! পড়ার অভ্যাসটা তৈরী হচ্ছে । তাছাড়া এখনকার ছেলে-মেয়ের মধ্যে দেশ প্রেম,, ভাষার জন্য মমত্ববোধেরও রয়েছে  যথেষ্ট অভাব — যার ফলে প্রতিটা ইভেন্ট  তারা এখন যথার্থ অর্থে ব্যবহার করে না , সবকিছুতেই ঠুনকো মজার ছলে জাস্ট ফান করে টাইম কাটানো তাই বই মেলা এখন বই কেনার যথার্থ স্থান না হয়ে হয়েছে আড্ডা দেয়ার একটা মহা উৎসব! এক মাসের স্থায়ী ঠিকানা া এটা কিন্তু মোটেও মিথ্যে নয় , তা না হলে প্রকাশকরা কেন অভিযোগ করবেন বই কিনছে না কেউ , যত ভিড় হয় মেলা জুড়ে তত বিক্রি হয় না বই । বই নেড়ে দেখছে কম লোকেই । ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষার চর্চ্চার কথা বলা হলেও এটা এখন অধিকাংশ মানুষের জন্যই একটি বিনোদনের মাস হিসেবেই বেশি পরিগণিত!  আমরা দেখি মাঝে মাঝে টিভি ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে কেউ কেউ থতোমতো খাচ্ছে , ভাষা শহীদের নাম গুলো বলতেই । একুশে বইমেলার নামকরণের ইতিহাস জানা তো দূর । এ তো গেল বই মেলার আমেজ ইমেজ নিয়ে কথা কিছু ভুঁই ফোর প্রকাশক শুধু মাত্র বই মেলার সময়েই উদয় হন এবং এদের মধ্যে অনেকেই পাঠকের পছন্দের বিষয়টাও ততটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা না করে অত্যন্ত হালকা সেন্টিমেন্ট ও শুরশুরি , বিষয়ক বই , অপরিপক্ক ফেসবুক কবি , সখের কবির বই মেলাতে স্থান পায় , যা আসল বই পোকা মানুষদের বই ক্রয় থেকে দূরে রাখে এবং হতাস করে ।

আর একটা বিষয় বলা যায় যে বই মেলাতে জনপ্রিয় লেখকদের উপস্থিতিও বিরল এটাও সত্যিকারের ক্রেতাদের বই কেনার আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে কিছু মাত্রায় ,এ সব কারণেই বই মেলা আর বই ক্রেতার ভিড়ে অস্থির নয় উপচে পড়া দর্শনার্থীদের ভিড়ে প্রকাশক পাগল প্রায় । শুধু দেখতে আসা মানুষেরই ভিড় , বই কেনারজন্য নয় বই মেলা এখন পরিণত হয়েছে কিছু মানুষের বিনোদনের স্থান!  হতে পারে প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে মানুষের একধরনের মানসিক পরিবর্তন লক্ষণীয় ।আগের দিনগুলোতে মেলায় প্রকৃত পাঠকদের উপস্থিতিই ছিল বেশি এবং তাদের সবার হাতেই থাকত বই কিন্তু এখন প্রকৃত পাঠক খুঁজে পাওয়া দুস্কর।। অনেকের ভাস্যমতে আজকাল ভার্চুয়াল জগত এ বন্দি মানুষ বই মেলায় যাবে ছবি আপলোড করবে বন্ধু-বান্ধব নিয়া ঘুরবে তা না হলে প্রেষ্টিজ ইস্যু হয়ে দাড়াবে , সোস্যাল মিডিয়ায় নীড় পাতা সাজাতেই যেন সব আয়োজন ! তাই তারা মেলায় যায় ঘুরে ফিরে ,শুধু জ্ঞান সাধনায় নয় সেলফি বাজিতে আর ডিপি চেন্জের মানসিকতায় । তবে সাধারণ মানুষকে বই মুখি করতে বইমেলাতেই বই প্রকাশ করতে হবে— এমন একটি মানসিকতা গড়ে উঠেছে লেখকদের মাঝে। প্রকাশকরাও বিনামূল্যে প্রচারের সুযোগে এই মানসিকতাতে সায় দিয়ে থাকেন। এতে প্রকাশক, প্রকাশিত বই ও পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে। তবে প্রকৃত পাঠকের সংখ্যা ততটা বাড়েনি।বইয়ের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপন্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়া, ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ পাইরেটেড বইয়ের অবাদে বিক্রি এই সব আর একটা কারন বই বিক্রি কমে যাওয়ার।।

তারপরেও প্রকাশকরা চান এখন প্রকাশকরা চায় সংখ্যা বাড়াতে, মান নয়। যাকে বলে কোয়ান্টিটি তে বিশ্বাসী কোয়ালিটি যায় ভাড় মে ! এখনকার বইমেলায় হুজুগের মতো করে বই বের হয়। আগে অল্প বই বের হলেও তা ছিল মানসম্পন্ন। এখন বইমেলায় অংশ নিতে নির্দিষ্টসংখ্যক বইও লাগে। তাই অনেক যাচ্ছেতাই বই বের করেন।যাচ্ছেতাই বইয়ের চেয়ে ভালো বই অল্পও ভালো। তাই দিনে দিনে বইপ্রেমিক এর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।এখনকার লেখকরা পাঠক ধরার জন্য অনেক চকচকে বই প্রকাশিত করেন। এসব বই পাঠকদের প্রলোভিত করছে ঠিকই কিন্তু এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এতে পাঠক ঠকছে, বইয়ের প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলছে। আর প্রকাশকরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ পাঠকরা ওই প্রকাশকদের বই কিনতে দ্বিতীয়বার ভাবছেন। এটা সার্বিকবাবে প্রকাশনা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।

সর্বপরি কথা হচ্ছে ভালো মানের বই বের করতে হবে সারা বছর আর আমাদের এই আগামী ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে প্রত্যেক স্কুল কলেজ এ লাইব্রেরী বাধ্যতামূলক করতে হবে। তবেই বই পড়ায় আগ্রহ বাড়বে দেশ ও জাতী উন্নতি হবে।

(তথ্যসুত্র উইকিপিডিয়া ও বই মেলা সংক্রান্ত বিভীন্ন ফিচার থেকে । )

পছন্দের আরো পোস্ট