শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের রং তুলিতে আঁকা প্রিয় বাংলার মুখ
মোঃ শাদমান শাবাব,শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
হাজার শব্দের লেখনীতে যে কথাটি ফুটিয়ে তোলা যায় না, অনেকসময় একটি ছবিই সেই ভাবটি ফুটিয়ে তোলে সম্পূর্ণরূপে। সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চিত্রিত হয়েছে তেমনই এক ম্যুরাল চিত্র। ম্যুরালটিতে শোভা পেয়েছে ভাষা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণের চিত্র এবং বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রসমাজের কাছে কৃষক,শ্রমিক,কুলি,মজুরসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশার চিত্র। এ যেন রংতুলিতে আঁকা অখন্ড বাংলার মুখ। শিক্ষার্থীদের দাবি, এটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে হাতে আঁকা সবচেয়ে বড় ম্যুরাল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা একাত্তর সংলগ্ন হাসনরাজা মিলনায়তনের পশ্চিমমুখী দেওয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে ম্যুরালটি। শিক্ষার্থীরা জানায়, ম্যুরালটিতে দেখা যায় কৃষকেরা কাজ করছে।তার মধ্য থেকে একজন কৃষক এসে রংতুলি তুলে দিচ্ছে ছাত্রদের হাতে, যেন তারা সমাজের চিত্র প্রতিফলিত করে। চা শ্রমিক,পরিবহন শ্রমিক গিটার তুলে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের হাতে, তাদের গান গাওয়ার জন্য। তাদের গল্প লিখার জন্য হাতে তুলে দিচ্ছে বই ও কলম। ম্যুরালটির উপরের দিকে মাঝ ববরাবর দেখা যায়, সমাবর্তনে শিক্ষা সনদ গ্রহণ করছে ছাত্ররা। তারপাশেই শান্তির প্রতীক কবুতরের ছবি বোঝাচ্ছে উচ্চশিক্ষা শেষে তারা দেশের জন্য শান্তি বয়ে আনবে। বাউল সংগীতকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাউল তুলে দিচ্ছে তার হাতের একতারা। একজন টোকাই শহরের ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে পরিষ্কারের পর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে একটি সুন্দর ফুল,যেন তারা দেশটাকে সুন্দর রাখে। ম্যুরালটিতে অঙ্কিত হয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ও পাটকল শ্রমিকদের জীবনচিত্র। ম্যুরালটির নিচ দিকে ডান পার্শ্বে স্থান পেয়েছে ছাত্র আন্দোলন। দেখানো হয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত গণআন্দোলনে তৎকালীন ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ। ম্যুরালটির মাঝ বরারর বাম পার্শ্বে দেখা যায়, নূর হোসেন তাঁর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মূল উদ্দীপক সেই মশাল তুলে দিচ্ছেন ছাত্রদের হাতে। তারা যেন এই আগুন জ্বলন্ত রাখে এবং যখনই কোন স্বৈরাচারের আবির্ভাব ঘটবে তারা যেন এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। ম্যুরালটির মাঝখানে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধারা শিক্ষার্থীদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিচ্ছেন যেন শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতাকে বাঁচিয়ে রাখে, স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার কথা সবসময় বলতে পারার পরিস্থিতি বজায় রাখে।
ম্যুরাল চিত্রের নকশা অঙ্কন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ধ্রুব চন্দ্র রায়। ম্যুরাল চিত্র আঁকার কাজ করেছেন ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই। ধ্রুব চন্দ্র রায় জানান, ম্যুরালটিতে রয়েছে ভারতীয় এবং দেশীয় চিত্রকলার আলাদা পরিপ্রেক্ষিত।প্রথাগত পাশ্চাত্য রীতির রৈখিক পরিপ্রেক্ষিত ভেঙে বৃত্তীয় পরিপ্রেক্ষিতের ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের কাঠামোতে এস এম সুলতানের চিত্ররীতির ছাপ এবং ছাত্রদের কাঠামোতে ভারতীয় অজন্তার চিত্ররীতির ছাপ ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে ভূলে যান তারা যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তাদের রশদগুলো কোথা
থেকে আসছে। একজন শ্রমজীবী মানুষের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত সেটিও তারা প্রায় ভূলে যান। এই দেশের,এই সমাজের মানুষের ঘামের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ দিয়েই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। তাই তাদের দেশ ও সমাজকে কিছু দিতে হবে। জনগণের পক্ষে থাকতে হবে এবং মানুষের পক্ষে কাজ করতে হবে। এই বিষয়টি তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্যই ম্যুরালটি অঙ্কন করা হয়েছে।