পড়তে চাইলে জার্মানিতে
শুভ রহমান
ইউরোপের সবচেয়ে উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী দেশ জার্মানির কথা আমরা সবাই জানি । জার্মানিতে যাওয়ার জন্য প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা চেষ্টা করেন এবং সফলও হন । বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রতিবছর জার্মানিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং সফলও হন । অনেকের ভুল ধারণা যে জার্মানিতে শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং যারা পড়েন তারাই যেতে পারবেন বা তাদের ভবিষ্যৎ ভালো । বিষয়টা আসলে এমন নয়, বিজনেস বা আর্টস যারা পড়েন তাদের জন্যও সমান সুযোগ সুবিধা রয়েছে জার্মানিতে ।
এত দেশ থাকতে জার্মানিতে কেন যাবো?
কথা না বাড়িয়ে বলি জার্মানিতে বেশিরভাগ ভার্সিটি এখনও ফ্রি, কোনো টিউশন ফি নাই । যেইটা পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশে কল্পনাও করা যায়না । আর পড়ালেখা শেষে আপনাকে চাকুরী খোঁজার জন্য ১৮ মাস বা দেড় বছরের ভিসা বাড়িয়ে দেয়া হবে । সাবজেক্ট রিলেটেড চাকরি পেলে আপনি জার্মানিতে পি.আর নিয়ে বা BLUE কার্ড নিয়ে স্থায়ীভাবে থাকতেও পারবেন । দেখি নাই কেউ দেশে ফেরত চলে আসছে এখনো, তবে স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলে আর বিয়ার-শিয়ার খেলে তাদের হিসেব আলাদা ।
শুরুতেই বলতে চাই, জার্মানিতে বছরে দুইবার দুইটা সেমিস্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ রয়েছে । এক হচ্ছে সামার এবং আরেকটা হচ্ছে উইন্টার সেমিস্টার । সামার শুরু হয় এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে আর উইন্টারের ক্লাস শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে । সামারের আবেদন করতে হয় অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আর উইন্টার সেমিষ্টার আবেদন করতে হয় মে থেকে জুলাইয়ের ১৫ তারিখের মধ্যে ।
Summer 2020:
Application deadline (October to January 15)
Class Start: April 1
Winter 2020:
Application deadline (May to July 15)
Class Start: September 1
আপনারা জানেন আবেদন প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করে অফার লেটার পাওয়া থেকে। ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে পাসপোর্ট, IELTS সার্টিফিকেট, সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট, চাকরির অভিজ্ঞতার সনদপত্র, রেকোমেন্ডেশন লেটার, মোটিভেশন লেটার লাগবে । ভার্সিটি থেকে অফার লেটার পাওয়ার পর অন্যান্য কাগজপত্র লাগবে তার আগে নয় ।
ভার্সিটিতে আবেদনের জন্য ২ টা সিস্টেম ফলো করা হয়ে থাকে একটাকে বলে ইউনি-এসিস্ট এটা একটা থার্ড পার্টি কোম্পানি যারা আপনার কাগজপত্র মূল্যায়ন করে ইউনিভার্সিটিকে পাঠায়।এদেরকে একটা নিদৃষ্ট পরিমান ফিস দিতে হয়, প্রথম আবেদনটার জন্য ৭৫ ইউরো আর পরে তাদের মাদ্ধমে আবেদন করা প্রতিটা আবেদনের জন্য ৩০ ইউরো করে । অনেক ইউনিভার্সিটিই তাদের মাদ্ধমে আবেদন গ্রহণ করে থাকে, সরাসরি আবেদন নেয় না । তাদের সাইটে সব কাগজের স্ক্যানড কপি আপলোড করতে হয় আবার সরাসরি কুরিয়ার করে কাগজপত্র পাঠাতে হয় ।
আর বাকি কিছু ইউনিভার্সিটি নিজেদের ওয়েবসাইটের মাদ্ধমে আবেদন জমা নিয়ে থাকে এক্ষেত্রে তারা কিছু পরিমান ফি নিয়ে থাকে বা একবারে বিনামূল্যেও আবেদন নিয়ে থাকে । সরাসরি আবেদনের ক্ষেতে ভার্সিটির ওয়েব সাইটের মাদ্ধমে আবেদন করে সব কাগজের স্ক্যানড কপি আপলোড করতে হয় আবার অনেক ভার্সিটিকে সরাসরি কাগজপত্র কুরিয়ার করে পাঠাতে হয় ।
IELTS স্কোর কত লাগবে?
বিভিন্ন সাবজেক্ট ও ভার্সিটি ভেদে স্কোর ৫.৫ থেকে ৭ চাওয়া হয়ে থাকে তবে ৬.৫ পেলে ভালো কারণ অনেক জায়গায় আবেদন করতে পারবেন ।
টাকা কত লাগবে?
জার্মানিতে টাকা দেখাইলেই চলেনা, আগেই পাঠায়া দিতে হয় । ঠিকই শুনছেন, আপনার অফার লেটার আসার পর আপনি টাকা জার্মানির অনুমোদিত ব্যাংকে পাঠিয়ে দিতে হবে । ১০২৩৬ ইউরো বা ১০ লক্ষ টাকার মত আপনাকে জার্মান সরকার অনুমোদিত ব্যাংকে আগেই পাঠিয়ে দিতে হবে এবং কনফারমেশন লেটার নিয়ে এম্বাসি ফেস করতে হবে । এই টাকা পাঠানোর কারণ হচ্ছে এই জমানো টাকা থেকেই আপনাকে প্রতি মাসে ৮৩৫ ইউরো করে ফেরত দেয়া হবে, যাতে আপনার সকল খরচ মেটাতে পারেন । একবারে টাকাটা উঠানু যাবে না । আর আপনার ভিসা না হলে এই টাকাটা ফেরত পেয়ে যাবেন ।
আরও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে আরও ২/৩ লক্ষ টাকার মতো চলে যাবে । ভার্সিটিতে আবেদনের খরচ, বিমান ভাড়া শপিং, ইন্সুরেন্স, যাতায়াত, কাগজপত্র নোটারি করা, স্টোডেন্ট ফাইল ওপেন করা । স্টোডেন্ট ফাইল হলো আপনি বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের নিদৃষ্ট একাউন্ট করবেন এবং ওই একাউন্টের মাদ্ধমে জার্মানিতে টাকা পাঠাবেন । আবার ভিসা রিজেক্ট হলে এই একাউন্টেই টাকা ফেরত পাবেন ।
আর সাথে নিয়ে যাবেন ২ লক্ষ টাকার মতো ক্যাশ যা দিয়ে আপনি শুরুতে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনবেন ও বাসা ভাড়ার অ্যাডভান্স দিবেন । মানে এই টোটাল ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হবে ।
পার্ট–টাইম কাজ করে টেকা–টুকা কামানো যাবে?
জার্মানিতে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা পার্ট-টাইম কাজ করতে পারবেন এবং এই কাজ করেই আপনার খরচ চালাতে পারবেন । তবে এর বেশি কাজ করতে পারবেন না ও দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন না । পড়ালেখা অনেক কঠিন, পড়ালেখা করে ২০ ঘন্টা কাজ করে আর বেশি কাজ করে দেশে টাকা পাঠানো ছাত্র অবস্থায় অসম্বব ।
ভিসা আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
- Passport
- IELTS Certificate (Overall 6 or above)
- Proof of financial means (10,236 Euros)
- All academic transcripts and certificates
- Offer Letter
- Photo
- Visa application Form
- Work experience certificate
এই কাজটা অনেকেই নিজে নিজে করে ভিসা নিয়ে জার্মানিতে যায়, এইটাই বেস্ট অপসন । কোথাও কোনো কনফিউশন থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন আমি উত্তর দিব ।