দক্ষিণ বঙ্গের যশ খেজুরের রস

তরিকুল ইসলাম।

রসের দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ দক্ষিণ বঙ্গের যশোর – ঝিনাইদহ – কুষ্টিয়া জেলা৷ এই অন্ঞ্চলের মানুষের খেজুর গাছের সাথে তাই নিবিড় সম্পর্ক ৷ শীতের প্রারম্ভ থেকে ব্যস্ত গাছিরা যেন খেজুর গাছের সাথে প্রেমে মত্ত হয়ে পড়ে ৷ সংগ্রহ করে খেজুর রস আর সেই রস জালিয়ে প্রস্তুত করে খেজুর গুড় বা মিঠাই৷ আমার বাড়ি এই অন্ঞ্চলে হওয়ায় এসব ঐতিহ্য কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে৷ যশোর অন্ঞ্চলে অনেক আগে থেকেই গুড়ের হাট হিসেবে প্রসিদ্ধ কিছু বাজার রয়েছে৷ তার মধ্য যশোর জেলার মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, হাকিমপুর, ঝিনাইদহ জেলার কালিগন্জ, বারবাজার, মহেশপুরের পুড়াপাড়া বাজার ও যাদবপুর বাজারের নাম উল্লেখযোগ্য৷

গত বছর শীতের অবকাশ শুরু হয় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে৷ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও শীতের অবকাশের পর প্রথম ক্লাস শুরু হল ১২জানুয়ারী, ২০১৯ইং৷ ঐ দিনই সিদ্ধান্ত হল এবারের শীতে একটা রসপার্টি করা যায়৷ সেই সূত্রে আমরা পরের দিনই সিদ্ধান্ত নিলাম আগামী বৃহস্পতি বার যাওয়া হবে  কুষ্টিয়া বাইপাসে রস খেতে ৷

আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রায়ই বিভিন্ন গূরুত্বপূর্ণ স্থানে ভ্রমণ করে থাকি৷” উদ্ভাস ইন্ভেস্টিগেটর টিম ” নামে একটি টিম আছে আমাদের৷ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি বুধবার ক্যাম্পাস শেষে বন্ধুদের সাথে কুষ্টিয়া চলে গেলাম৷ থাকলাম বন্ধু রাহিতের মেসে৷ ঝিনাইদহ হতে টিমের প্রধান অবজারভার হিসেবে অতিথি হয়ে গিয়েছিলাম আমি৷

সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হল ভোর পাঁটার দিকে রওয়ানা দিতে হবে৷ দেরী হলে রস পাওয়া যাবেনা তাই৷ সবাই পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে উঠে রেডি হলাম৷ সাড়ে পাঁচটার দিকে কুষ্টিয়া জেলখানা মোড়ে একত্রিত হলাম৷ তখন ফজরের আযান চলছিল৷ আমরা ছিলাম ছয়জন৷ চাপাইয়ের আহাদ, নরসিংদীর রাহিত, নাটোরের নিজাম, মেহেরপুরের আলিমূল মামুন, কুষ্টিয়ার কুতুব আর আমি৷

আমরা জগিং করতে করতে কাস্টমস মোড়ে চলে গেলাম৷ তারপর একটা সিএনজিতে চেপে চললাম বটতৈল৷ বটতৈল থেকে এক অটোরিকসা ভাড়া করে বাইপাস রোডে চলতে লাগলাম৷ প্রায় চার কিলোমিটার পেরিয়ে বাইপাস ফিলিং স্টেশনের কাছেই একটি স্থানে পৌঁছালাম ৷ দেখলাম গাছিরা দলবেধে রস সংগ্রহ করছে আর কয়েকজন রস জালাচ্ছেন৷ এসময় কুষ্টিয়ার প্বার্শবর্তী জেলা হতে অনেকে গূড় সংগ্রহের জন্য এ জেলায় আসেন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে৷

আমরা এক ভাড় রস কিনলাম একশত ষাট টাকা দিয়ে৷ একভাড়ে রস হয় প্রায় পঁয়ত্রিশ গ্লাস৷ আর আলাদাভাবে খেলে প্রতি গ্লাস রস বিক্রি হয় দশ টাকা৷  আমরা সবাই তিন গ্লাস করে রস খেলাম৷ আলীমূল খেল পাঁচ গ্লাস, আর নিজাম সাত গ্লাস৷ বাকিটা পলিথিন ব্যাগে করে নিয়ে আসলাম পরীক্ষা করার জন্য৷ আমরা রসায়নের ছাত্র হিসাবে ল্যাব টেস্ট করার জন্য রেখে দিলাম৷

Post MIddle

খেজুরের রস সংগ্রহঃ

খেজুরের রস মূলত খেজূর গাছ থেকে সংগৃহীত রস৷ এটির স্বাদ মিষ্টি৷ খেজুরের রস শুধু মাত্র শীতকালে সংগ্রহ করা হয়৷ খেজুরের রস খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ৷

রস সংগ্রহের অনুকূল সময়ঃ

আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ ( অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি) পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়৷ ঠান্ডা আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ ও কুয়াচ্ছন্ন সকাল পর্যাপ্ত রসের জন্য উপযোগী৷ এই সময়ে প্রাপ্ত রসের স্বাদও ভাল হয়৷ পৌষ মাঘ মাসে (ডিসেম্বর ও জানুয়ারী) তাই সবচেয়ে বেশী রস পাওয়া যায়৷ তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে রসের পরিমাণ ও মান কমতে থাকে৷

রস সংগ্রহের জন্য উপযোগী খেজুর গাছঃ

ন্যূনতম পাঁচ বছর বয়সী গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়৷ গাছের রস এলাকা বা মাটির প্রকারভেদ ছাড়াও একই মৌসুমের বিভিন্ন সময় ও গাছের যত্নের উপর রসের প্রাচুর্যতা নির্ভর করে ৷ আবার পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের চেয়ে বেশী রস দেয় এবং তুলনায় বেশী মিষ্টি হয়৷

উল্লেখ, খেজুর গাছ ও রসের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা যশোর – ঝিনাইদহ- কুষ্টিয়া৷৷ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এই খ্যাতি বজায় থাকুক চিরদিন এই প্রত্যাশাই করি৷৷

পছন্দের আরো পোস্ট