ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন গতকাল (৯ ডিসেম্বর ২০১৯) সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তন উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও ভবন ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। কালো গাউন পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস জুড়ে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে। দিনভর ছবি তোলা, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, হৈ চৈ ও কোলাহলে মেতে থাকে সবাই।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাইটেশন পাঠ করেন ও ভাষণ দেন। জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে সম্মানসূচক Doctor of Science (Honoris Causa) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এসময় প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীনসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৭৯জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭জনকে পিএইচডি, ৬জনকে ডিবিএ এবং ১৪জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সমাবর্তনে ২০ হাজার ৭শ’ ৯৬জন গ্র্যাজুয়েটকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনগণ অনুষদভুক্ত বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ডিগ্রিপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটদের নাম উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো: এনামউজ্জামান সমাবর্তন অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

Post MIddle

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য জ্ঞানার্জন হলেও তা একমাত্র লক্ষ্য নয়। কারণ কর্মবিমুখ শিক্ষা মূল্যহীন। শিক্ষাকে কার্যকর করতে হলে এর সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটাতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, বিজ্ঞানের নব নব আবিস্কার বিশ্বকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যে জাতি যত বেশি খাপ খাইয়ে নিতে পারছে, সে জাতি তত বেশি উন্নতি করছে। এই পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রাখে যুব সমাজ। তারাই জাতির ‘চেঞ্জমেকার’। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু জ্ঞান দান করা নয়, বরং অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানোই হচ্ছে আসল কাজ। গবেষণা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কাজ। তাই গবেষণার মান বাড়াতে হবে। ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরিকল্পিতভাবে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তাদের এমন কোন কাজ করা উচিত নয়, যাতে পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুন্ন হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গবেষণা ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। যুগের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। বহির্বিশ্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং উন্নয়নেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বৃত্তি হিসেবে পুনরায় ‘বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ’ চালু করেছে। ২০২০ সালে মুজিববর্ষ, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিক উৎসবকে সামনে রেখে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য তিনি প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে নতুন প্রজন্মের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান হচ্ছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাই তরুণ প্রজন্মকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আরও বেশি সম্পৃক্ত ও মনোযোগী হতে হবে।

পছন্দের আরো পোস্ট