পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফারুক হোসেন চৌধুরী।

একসময় পুরাতন জেলা শহর পাবনাকে আমরা ‘অবহেলিত’ জেলা বলে আফসোস করতাম। বিশেষ করে যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর অনেকেই বলতেন পাবনা এখন থেকে পকেট জেলা হয়ে গেল। একসময় পাবনা দিয়ে পুরো উত্তরবঙ্গের ঢাকার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ‘পাবনা প্রেমিক’ মানুষের কপালে দুঃচিন্তার ভাজ পড়েছিল। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পাবনার মানুষের সেই দুঃচিন্তা লাঘবে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।

ক্ষমতার প্রথম মেয়াদেই পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করলেন। কিন্তু পরবর্তী সরকার সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি। অবশেষে ২০০৮ সালে চালু হলো পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পাবনা আবার সচল হয়ে গেল। পকেট জেলা শহর আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠল। সাথে যোগ হলো মেডিকেল কলেজ। ফলে পাবনা হয়ে উঠল শিক্ষার নগরী। আমরা যারা পাবনাকে ভালবাসি তারা শুধু খুশিই হইনি আহলাদিতও হয়েছি এই ভেবে যে প্রিয় পাবনা আবার তার মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। এখন সারা দেশ থেকে পাবনায় অনেকেই আসছেন শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজকে কেন্দ্র করে । সাথে রয়েছে শত বছরের প্রাচীন এডওয়ার্ড কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বিএসসি-তে উন্নীত), পাবনা ক্যাডেট কলেজ। আমাদের অহংকার করার মতো আরো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে আমরা স্বপ্ন দেখেছি অনেক বেশি।

এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় হবে। দেশ বিদেশের শিক্ষকরা এখানে আসবেন। জ্ঞানী আর পন্ডিতদের পদচারণায় আমরা পাবনাবাসী ধন্য হব। আমাদের সন্তানরা নিজ বাড়ি থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষা লাভ করবে। পাবনাবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আবারো উদার হস্তে এগিয়ে এসেছেন জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ৪৮০ কোটি টাকার প্রকল্প পাশ করে দিয়েছেন। এই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞান চর্চার অন্যতম তীর্থকেন্দ্র। শিক্ষা ও গবেষণার সকল সুযোগ সুবিধা থাকবে এখানে। এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে শিক্ষানুরাগী মানুষ, শিক্ষার্থীদের আকর্ষনের জায়গা হবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমরা সময়ের অপেক্ষায় আছি প্রজেক্ট সমাপ্তের। আমাদের তথা পাবনাবাসীর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে আর কয়টা দিন পরে। ইতোমধ্যে বর্তমান প্রশাসন তথা মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কাজে নিজেকে পুরোদমে মনোনিবেশ করেছেন। শিক্ষার সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক থাকে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক স্বল্পতার কারণে ছাত্রছাত্রীরা কষ্ট করছিলেন। সেই কষ্ট লাঘবে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বর্তমান প্রশাসন।

জাতি হিসেবে আমরা মনে হয় একটু প্রতিহিংসা পরায়ণ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও বিশেষ কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে দিনরাত পরিশ্রম করছেন যখন তখন বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা অপপ্রচারে লিপ্ত হন। ষড়যন্ত্রকারীরা শেষ পর্যন্ত জাতির পিতাকে হত্যা করে। কিছু মানুষ সেই ঘৃণ্য বৈশিষ্ট্য থেকে কি বের হতে পেরেছে? জননেত্রী শেখ হাসিনার লাখো উন্নয়ন এক শ্রেণীর মানুষের চোখে পড়ে না। কিছু মানুষের সবকিছুতেই আপত্তি-বাকা চোখ। ঠিক এই আপত্তিওয়ালাদের চোখ পড়েছে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে- কিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থমকে দেয়া যায়। যার সর্বশেষ সংস্করণ দেখছি আমরা। এরা বিশ্ববিদ্যালয় তথা শেখ হাসিনার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে চায় । বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে চায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল অনিয়ম, বাধা, অপপ্রচার দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে চায়। সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী।

Post MIddle

বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া তথা জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। মাত্র দশ বছরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় সময়ের বিবেচনায় খুবই অল্প। শিশুকাল পার করছে। একটি শিশুকে ঠিকমতো দাঁড়াতে দেয়া প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের অন্যতম দায়িত্ব। কারণ সুস্থ শিশুই একদিন জাতির দায়িত্ব কাধে নিয়ে নতুন দিনে নিয়ে যায় সমগ্র জাতিকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ও আর কিছুদিন পরে সারাদেশের মধ্যে তথা বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হবে। বর্তমানে এখানে ২১টি বিভাগে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। দুইশত শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বাত্মক কাজ করছেন। আর এই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী। তাই উপাচার্য মহোদয়ের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের সবার উচিত একসাথে- একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করা। ঠিক পাবনাবাসীরও দায়িত্ব পাবনার সুনাম তথা সারাদেশের সুনাম, সরকারের সুনাম, জননেত্রী শেখ হাসিনার সুনাম বৃদ্ধির জন্য বর্তমান উপাচার্যের হাতকে শক্তিশালী করা।

পাবনা শহরের পূর্বে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। আমরা জানি পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে। সূর্য ওঠার সাথে সাথে সমস্ত অন্ধকার কেটে আলোকিত হয় দেশ জাতি-সভ্যতা আমাদের জীবনাচারন। আমি মনে করি আর বেশিদিন সেই দিন দূরে নয় যেদিন পাবনার সূর্য ওঠবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হব পাবনাবাসী তথা সমগ্র দেশ জাতি। আমাদের তথা পাবনাবাসীর সকল অপূর্ণতা- অপ্রাপ্তি- অবহেলার যন্ত্রনা গ্লানি মুছে দেবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার আলো। সকল অন্ধকার, কুসংস্কার-কেটে যাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের আলোয়। আমরা সারাদেশের মানুষের কাছে আলোকিত হয়ে উঠব। আমাদের পথ দেখাবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা কায়মনবাক্যে সেইদিনের অপেক্ষায় রইলাম। আমাদের যোগ্য অভিভাবক প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী সেই আলোর ঝান্ডা হাতে বসে আছেন। এখন কেবল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটার অপেক্ষা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন ছাত্র-ছাত্রীর পদচারণায় নতুন সভ্যতা নতুন আলোর নতুন দিনের সূচনা হয়। প্রতি বছর আমরা পাবনাবাসী অপেক্ষা করি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কবে হবে। সারাদেশের মানুষ বিশেষ করে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী আর তাদের অভিভাবকদের পদচারনায় মনে হবে এ যেন উৎসবের আনন্দ। এত মানুষ এত তরুন এত আলো আমার শহরে জড়ো হয়েছে। সেই বিশেষ কাংঙ্খিত দিন আগামী ১৫ নভেম্বর শুক্রবার-২০১৯। এদিন দুই শিফটে ২৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী তথা নতুন আলোর দিশারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। এই ২৫ হাজারকে কেন্দ্র করে আরো জড়ো হবেন অসংখ্য অভিভাবক। পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা। মানুষের কোলাহলে মুখরিত হবে পাবনা। সবাই আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি নতুন নতুন মানুষকে বরণ করে নেয়ার। নবীণদের পদভারে গর্বিত হবে পাবনা। আর এই সবকিছুই হবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। বছরে একদিন নয় সারাবছরই এমন কোলাহল মুখর পাবনা হবে সেই দিন আর বেশি দুরে নয়।

স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলে প্রতিদিনই আমরা নুতন দিন পাবো। নতুন নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হব। আসুন আমরা সবাই পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার কাজে যার যার অবস্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশে দাড়াই। সবাই সহযোগিতা করি। #

 

মোঃ ফারুক হোসেন চৌধুরী, উপ-পরিচালক, জনসংযোগ দপ্তর ,পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

পছন্দের আরো পোস্ট