কুবির বহিঃস্থ কেন্দ্রগুলোতে ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ ভর্তি পরীক্ষা
কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ‘এ’ ও ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তর কেন্দ্রে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও বহিঃস্থ কয়েকটি কেন্দ্রে ‘অনিয়ম’ ও ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ‘এ’ ইউনিট এবং বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তিযুদ্ধ শেষ হয়। এদের মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে অংশগ্রহণের হার ছিলো প্রায় ৬৫% এবং ‘বি’ ইউনিটের হার ছিলো প্রায় ৭২%।
‘এ’ ইউনিটে ২০টি এবং ‘বি’ ইউনিটে ২১টি কেন্দ্রে আসন বিন্যাস করা হয় পরীক্ষার। এসবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে ৩টিসহ কুমিল্লার স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরের কেন্দ্রগুলোতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া না গেলেও বহিঃস্থ বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজে অনিয়ম ও অনিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠেছে।
ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল, মানিব্যাগ, সানগ্লাস, সিম/ক্রেডিট কার্ড বা ডিভাইস, ঘড়ি সঙ্গে নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় বহিঃস্থ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
সকালে ‘এ’ ইউনিট পরীক্ষা চলাকালীন কুমিল্লা নগরীর ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ (ডিগ্রি শাখা-২) কেন্দ্রে ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষার কক্ষে মোবাইল, ব্যাগসহ প্রবেশ করার অভিযোগ ওঠে। পরে কেন্দ্রটির সমন্বয়ক মেহেদী হাসান ‘প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে’ বলে জানান।
‘বি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকার কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের মোবাইল, মানিব্যাগ ও ঘড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
এসব বিষয়ে কেন্দ্রে প্রবেশে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্য জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের অসহযোগিতায় এমনটি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট লিডার ও ভর্তি পরীক্ষার শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা কমিটির মো: জিয়া উদ্দিন জানান, ‘কয়েকটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা সময়ের অনেক আগেই ঢুকে গিয়েছিলো। তাই পরবর্তীতে তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নতুনভাবে পরীক্ষা করে ঢোকানো হয়েছে। তারপরও দুএকজন নিয়ে থাকলে তা ধরা পড়েছে পরীক্ষার হলে। এটা সার্বিক ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি।’
এছাড়াও নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশনা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ‘মানবিক বিবেচনায়’ দুটি কেন্দ্রে ৩ জন শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩০ মিনিট পরে এসেও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান।
জানতে চাইলে ‘এ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক ড. সজল চন্দ্র মজুমদার জানান, ‘নির্বিঘ্নে ভর্তিপরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনও অনিয়মের সংবাদ পাইনি।’ ‘বি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, ‘ভর্তিপরীক্ষা যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও এমন কিছু হয়ে থাকলেও আমার কাছে এমন কোনো তথ্য আসেনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘কয়েকটি কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় বাহিরের কেন্দ্রগুলোতে আমাদের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই কিছু ছোটখাটো বিষয় ঘটে যায়। তবে আমরা পরবর্তীকালে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবো।’
এসব বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনায় পরে আসা কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে তাদের প্রত্যেকের খাতা যথাযথ যাচাই করা হবে। এছাড়াও দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভর্তিপরীক্ষা সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন হয়েছে সকলের সহযোগিতায়।’
উল্লেখ্য, শনিবার (৯ নভেম্বর) ব্যবসায় অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। তিন ইউনিট পরীক্ষা শেষে একত্রে ফলাফল ঘোষণা করা হবে আগামী মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর)।