খুবিতে থ্রিএমটি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ
খুবি প্রতিনিধিঃ
গত (২৮ অক্টোবর ২০১৯) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে জীববিজ্ঞান স্কুলের উদ্যোগে থ্রিএমটি (থ্রি মিনিট থিসিস) এর চূড়ান্তপর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জুলিয়া নিব্লেট।
তিনি বলেন বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে অস্ট্রেলিয়া সরকার সহায়তা করে আসছে। এই সহায়তা বৃদ্ধিতে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাবারেটিভ প্রোগ্রামের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম এবং ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন এখানে থ্রিএমটি প্রতিযোগিতা বিশ্বমানের হয়েছে এবং এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভালো গবেষক তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় থিসিসের যে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছে তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের বাইরেও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এই গবেষণার উৎকর্ষ সাধন, উচ্চতর পর্যায়ে আরও গবেষণার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন তা থেকে ভালো ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে যা মানবকল্যাণে প্রভূত উপকারে আসবে। তিনি কলাগাছের অব্যবহৃত অংশ দিয়ে কাগজসহ কয়েকটি উদ্ভাবনা এবং এধরনের নতুন নতুন ধারণা উপস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান। অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ সুসম্পর্ক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ পর্যায়ে এগিয়ে নিতে তাঁর দেশ নানাভাবেই সহযোগিতা করছে। বর্তমানে দুইদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং তা আরও অটুট ও জোরদার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশ ব্লু ইকোনোমি থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারে সে বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা নিতে পারে। বাংলাদেশের উন্নয়নে শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ ও মানোন্নয়নের বিষয়েও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি বলেন থ্রিএমটি প্রতিযোগিতা একটি অনন্য উদ্যোগ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপস্থাপনা কৌশলসহ গবেষণায় নতুন দিক-নির্দেশনা পাবে। তিনি এই কার্যক্রম অব্যহত রাখার জন্য আহবান জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের আশ্বাস দেন। তিনি আরও বলেন জীববিজ্ঞান স্কুলের গবেষণা কার্যক্রম দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং এই স্কুলে স্কলার তৈরি হচ্ছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ শিক্ষা-গবেষণার জোরদারে উদ্যোগের কথা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ রায়হান আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন থ্রিএমটি প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির আহবায়ক এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দিন খান। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করেন আয়োজন কমিটির সদস্য-সচিব বিজিই ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ড. আহসান হাবীব। এর আগে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিদের উপস্থাপনা উপভোগ করেন। এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্তপর্বে ১২ জন অশগ্রহণ করে তার মধ্যে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করে বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিংয়ারিং ডিসিপ্লিনের রাহাগীর সালেকিন। যৌথভাবে রানার আপ হন বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিংয়ারিং ডিসিপ্লিনের ফাবলিয়া রোদশী এবং ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের আইনুন নিশাত ফরাবী। পিপলস চয়েসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের অসিত কুমার দত্ত।
এ সময় ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক এবং জীববিজ্ঞান স্কুলের অধীন বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে এই থ্রিএমটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাংলাদেশে ২০১৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে নিয়মিতভাবে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে উপাচার্য তাঁকে স্বাগত জানান এবং পরে উপাচার্যের কার্যালয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটান। এ সময় তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অবহিত হন।
উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম এবং বিশেষ দিক সম্পর্কে অবহিত করেন। পরে উপাচার্য তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মনোগ্রাম খচিত একটি ক্রেস্ট উপহার দেন। এ সময় অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন। চূড়ান্তপর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের থিসিসের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধক ভাইরাস ব্যবহার, মুরগী ও গো খাদ্যে প্রবায়োটিক ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষতিকর হরমন ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধ, তেলাপিয়ার মাছের পর্দা ব্যবহার করে দগ্ধ রোগীর ক্ষতের উপশম, চিংড়ি মাছের খোলস ব্যবহার করে ন্যানোফাইবার তৈরিসহ নতুন নতুন গবেষণার বিষয়ে এই পর্বে তুলে ধরা হয়।