গ্রিন ইউনিভার্সিটি
স্বর্ণক শাহীঃ
গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। শুরুটা ২০০৩ সালে হলেও অগ্রযাত্রা মূলত ২০১১ থেকে। ইউএস-বাংলা গ্রুপ দায়িত্বগ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটির নামের সঙ্গে ‘কোয়ালিটি এডুকেশন’ শব্দটি যেমন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত হয়েছে, তেমনি উন্নত ভৌত-কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিশা পেয়েছে এখানকার হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
গ্রিনই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষভাবে তাদের গ্রাজুয়েটদের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণে সহায়তা করছে। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চশিক্ষা শেষে প্রতিবছর যত সংখ্যক শিক্ষার্থী চাকরির প্রতিযোগিতায় নামছে, সে তুলনায় দেশে শূণ্যপদের সংখ্যা অনেক কম।
তাছাড়া যোগ্যতা থাকার পরও সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ নানা কারণেই শিক্ষার্থীরা তাদের কাক্সিক্ষত ক্যারিয়ার গড়তে পারে না। মূলত সেসব শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি। ইউএস-বাংলা গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সিজিপিএ (৩.৫০) পাওয়ার পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষ হলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসহ গ্রুপটির ১০টি প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকারভিত্তিতে চাকরি পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির গ্রাজুয়েটরা।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে ‘দক্ষ শিক্ষক’: মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের প্রধান শর্ত ‘দক্ষ শিক্ষক’। সেটিকে আমলে নিয়েই নতুন যোগদানকারী শিক্ষকদের জন্য সার্টিফিকেট কোর্স চালু করেছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি। গ্রিনে নতুন যোগদান করা সব শিক্ষকের জন্য এই কোর্স বাধ্যতামূলক। যে কোর্সের সার্টিফিকেট না পেলে তার চাকরি স্থায়ী করা হয় না, প্রমোশন হয় না।
এই কোর্স পরিচালনার জন্য গ্রিনে রয়েছে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর টিচিং অ্যান্ড লার্নিং। এর মাধ্যমে নতুন শিক্ষকদের প্রথমে চার দিনের ইনসেনটিভ ট্রেইনিং কোর্স করানো হয়। এরপর তারা ক্লাসে যান। পরবর্তীতে চার মাসব্যাপী এই কোর্স চলতে থাকে, যার ক্লাস সপ্তাহে একদিন ৩ ঘণ্টা ধরে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির নিজে এই কোর্স পরিচালনা করেন।
আইইবি অর্জন: সম্প্রতি নতুন অর্জন যোগ হয়েছে গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে। অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী, মানসম্মত ল্যাব, লাইব্রেরি ও শ্রেণিকক্ষ পরিচালনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) কর্তৃক অ্যাক্রেডিটেশন পেল গ্রিন ইউনিভার্সিটির ‘কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই)’ ও ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ। বাংলাদেশে যতগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে; এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আইইবি স্বীকৃতির আওতাভূক্ত।
ইংরেজিতে অধিক গুরুত্ব: ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে গ্রিন ইউনিভার্সিটির। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতি সেমিস্টারে ‘বুক রিডিং কম্পিটিশন’ আয়োজন করে থাকে ব্রিটিশ কাউন্সিল। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইংরেজির প্রতি অধিক মনযোগী হন।
প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর বাধ্যতামূলকভাবে করতে ‘ইংলিশ ফর একাডেমিক পারপাস (ইএপি)’ কোর্স। তাছাড়া কোর্স কারিকুলাম থেকে শুরু করে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, ইন্টার ডিপার্টমেন্ট ডিবেট কম্পিটিশন, প্রেজেন্টশন কম্পিটিশন, করপোরেট লেকচারসহ অধিকাংশ অনুষ্ঠানগুলো ইংরেজিতে পরিচালনা করাও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজ।
এছাড়াও ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন দুই শতাধিক ইংরেজি পত্রিকা রাখা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা পড়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই ইংরেজিতে সমৃদ্ধ করতে পারেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তার বেতনে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ফান্ড:
গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রিন ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো ‘স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ গঠন। যে ফান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তারা মাসের শুরুতে নির্দিষ্ট পরিমান (সর্বনিম্ন ১০০টাকা থেকে শুরু) টাকা প্রতি মাসে দিয়ে থাকেন। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রত্যেক সেমিস্টারে এই ফান্ড থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন। পুরো বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
স্টুডেন্ট মেন্টরশীপ প্রোগ্রাম:
মানসম্মত শিক্ষার্থী নিশ্চিত করতে ‘স্টুডেন্ট মেন্টরশীপ প্রোগ্রাম’ বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সিনিয়র শিক্ষার্থীরা উপদেশ-পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যে ধারা প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়।
এরপর ২য় সেমিস্টার থেকে শুরু হয় একাডেমিক এ্যাডভাইজিং। এর মাধ্যমে বিভাগীয় শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ যোগাযোগ করে থাকেন। যা পরবর্তী চার বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এছাড়া ৬ সেমিস্টার পর যেসব শিক্ষার্থীদের সিজিপিএ ৩.৫ বা তার অধিক, তাদের নিয়ে ৭টি মডিউল সমৃদ্ধ এবং এক বছর মেয়াদী গ্রিন ইউনিভার্সিটি ইনিশিয়েটিভ ফর ফিউচার ট্রান্সফরমার (গিফট) নামক একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে।
স্কলারশিপে বিদেশে পড়ার সুবিধা:
গ্রিন ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্র-শিক্ষক বিনিময় এবং যৌথ গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব রেজিনা, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হাডারস্ফিল্ড, চীনের বেইজিং ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচারাল ইউনিভার্সিটি (বিএলসিইউ), উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি ও মালয়েশিয়ার বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্কলারশিপে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
নান্দনিক স্থায়ী ক্যাম্পাস:
ঢাকার সন্নিকটে পূর্বাচল আমেরিকান সিটির নান্দনিক পরিবেশে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়েছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। যার শিক্ষা কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। চলছে ভর্তি কার্যক্রম, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণসহ অন্যান্য কর্মকান্ড। ক্যাম্পাসটিতে যেতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, মানসম্মত শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলাই গ্রিনের আসল উদ্দেশ্য। মূলত এ লক্ষ্যেই উন্নত ভৌত-কাঠামো ও পরিবেশ, অত্যাধুনিক ল্যাব এবং উচ্চতর ডিগ্রীধারী অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকদের সমন্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পরিচালিত হচ্ছে। এই ধারা অব্যহত থাকলে অচিরেই এই প্রতিষ্ঠান দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেবে।