হাওরের ‘ভাসমান’ বিদ্যালয়

দূর থেকে দেখলে মনে হবে বানভাসিদের দুর্যোগকালীন কোনো আশ্রয়শিবির। চারদিকে থৈথৈ পানি। এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি তিনতলা ভবন। যেন পানিতে ভাসছে ভবনটি। এই ভবনে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। দূর থেকে আশ্রয়শিবির মনে হলেও এটি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

এখানে নিয়মিতই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাজিরাও অন্য যে কোনো বিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। এটি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের বাহেরবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। বছরের ৯ মাস এ বিদ্যালয়ের চারপাশে জমে থাকে পানি। যাতায়াতের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই একটি নৌকার ব্যবস্থা রেখেছে। এভাবেই এই হাওর এলাকায়  শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে বিদ্যালয়টি। ভবনটি দেখতেও দৃষ্টিনন্দন।

জানা গেছে, ২০১১ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (এসইএমডিপি) আওতায় সরকারি অর্থায়নে তিনতলা ভবনের এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর ২০১৩ সালে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ভবনের নিচতলা পুরোটাই খালি, যা বছরের অধিকাংশ সময় হাওরের পানিতে তলিয়ে থাকে। একমাত্র দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

হাওরঘেঁষা এই প্রত্যন্ত জনপদে আর কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য এটিই হয়ে ওঠে শিক্ষার নির্ভরযোগ্য পাদপীঠ। দুটি তলায় ১৪টি সুপরিসর শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ভবনের ছাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শ্রমে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফুলের অসাধারণ বাগান। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সবুজের সমারোহ।

ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের অবসরে বিদ্যালয়ের এই ছাদবাগানে পড়াশোনা করে থাকে। নিবিড় পাঠাদানের জন্য এখানে রয়েছেন ৯ জন অভিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল শিক্ষক। বছর শেষে বিদ্যালয়ের ফলও অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। হাওরবেষ্টিত বাহেরবালি, পুড়াকান্দা, আয়নারগোপ, শিবপুর ও বোয়ালী গ্রামের তিন শতাধিক ছেলেমেয়ে এখানে পড়াশোনা করছে।

Post MIddle

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম জানান, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য আরও অন্তত দুটি নৌকার ব্যবস্থা করা গেলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটা কমানো যেত। শিক্ষার্থীও বাড়ত। এ ছাড়া ছাদবাগানের চারপাশে রেলিং না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ছাদবাগানের চারপাশে রেলিং স্থাপনের ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাহমিনা ঐশীসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, এ রকম একটি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পেরে তারা আনন্দিত। শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে আন্তরিক এবং যত্ন সহকারে পড়ান ও প্রতিদিনের পড়া বুঝে নেন।

বাজিতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান সিরাজ জানান, বিদ্যালয়টির বার্ষিক ফল সব সময়ই অনেক ভালো হয়। প্রতি বছর জেএসসিতে শতভাগ পাস করে থাকে। এসএসসিতে পাসের হার ৮০ শতাংশ। প্রত্যন্ত হাওরের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের এমন ফল তিনি যথেষ্ট ইতিবাচক মনে করেন।

বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. যুবায়ের বলেন, বাহেরবালি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হলেও এখানকার শিক্ষার মান খুবই ভালো। বিদ্যালয়টি দিন দিন সুনাম অর্জন করছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. জুলফিকার হোসেন বলেন, দেশে এমন একটি ভাসমান বিদ্যালয় আছে তা জানা ছিল না। বিদ্যালয়টি দেখে আমি বিস্মিত। এর উন্নয়নে আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। বিদ্যালয়টির উন্নয়নে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।

সুত্রঃ সমকাল

পছন্দের আরো পোস্ট