আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম

স্বর্ণক শাহী

আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, বা হাটহাজারী মাদ্রাসা বাংলাদেশের একটি কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; যা বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৬ সালে (হিজরী ১৩১০ সনে)।এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দারুল উলুম দেওবন্দের পাঠ্যসূচী দ্বারা শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম শিক্ষার অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান।

২০০৯ সালের এশীয় গবেষণার জাতীয় ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ীঃ “তার অসাধারণ দেওবন্দী প্রশংসাপত্র দিয়ে, অ্যাকাডেমিক মানদণ্ড ও খ্যাতির ক্ষেত্রে উপমহাদেশের শীর্ষ দশটি মাদ্রাসার মধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসা স্থান পায়।”

ইতিহাস
ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারি মাদরাসা ১৮৯৬ সালে একটি অস্থায়ী ঠিকানায় প্রতিষ্ঠালাভ করে। পরবর্তীতে ১৯০১ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়।এই প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষাবিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়। শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরেজদের আগ্রাসনের ফলে এ অঞ্চলের তৎকালীন সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থা ইসলামী চিন্তাচেতনা ও মুসলিম আকিদা’র পরিপন্থি ছিল। মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ, সামাজিক জীবনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিরক-বিদআত এবং মুসলিম সমাজকে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, ১৮৬৬ সালে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়।

Post MIddle

এই একই লক্ষ্যে, তার চিন্তা-চেতনা ও মূলনীতির অনুসরণে বন্দর নগরীর কিছু বিখ্যাত উলামা বিদেশী সংস্কৃতি এবং শিরক-বিদআত এর কবল থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষার উদ্দেশ্যে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারি মাদরাসা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্তটি কার্যকরের জন্য হাকিমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. এর আদেশানুসারে তার প্রিয় অনুসারী ও ছাত্র শাইখুল ইসলাম মাওলানা হাবিবুল্লাহ রহ. এবং তার সাথে মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ, মাওলানা সুফী আজিজুর রহমান এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ রহ. এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।

শাইখুল ইসলাম মাওলানা হাবিবুল্লাহ রহ. কর্তৃক ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারি মাদরাসা ১২৩ বছরের সুদীর্ঘ সোনালীপথ অতিক্রম করে এসেছে। মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে এই প্রতিষ্ঠানটি এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। হাটহাজির মাদরাসা–কে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে বহু মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও খানকাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

শিক্ষাসেবা ও জাতীয়-সামাজিক পর্যায়ে অবদানের ফলে হাটহাজারী মাদ্রাসা “বিতর্কহীন ভাবে এই দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মাদ্রাসায়” পরিণত হয়েছে।
সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা
মাদ্রাসাটি বাংলাদেশের প্রধান তিনটি বৃহত্তম মাদ্রাসার মধ্যে অন্যতম। অন্য দুইটি মাদ্রাসা হল পটিয়ার আল-জামিয়াতুল ইসলামীয়া পটিয়া এবং জামিয়া আরবিয়া জীরি। এর সব কয়টি মাদ্রাসা বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত। এই তিনটি মাদ্রাসা একযোগে বাংলাদেশের ৭,০০০ এর অধিক ছোট ইসলামিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।এই তিনটি বৃহৎ মাদ্রাসা প্রায় একই পরিচালনা পর্ষদের অধীনে।

পছন্দের আরো পোস্ট