রাবির সমাবর্তনে কম নিবন্ধনের নেপথ্যে

তানভীর অর্ণব,রাবি প্রতিনিধিঃ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ নভেম্বর। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের পিএইচডি, এমফিল, স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা এ সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। এই দুই শিক্ষাবর্ষে মোট ৮ হাজার ৮১৪ জন ডিগ্রি অর্জনকারী থাকলেও সমাবর্তনে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৩ হাজার ৪৩৮ জন গ্র্যাজুয়েট।

গ্র্যাজুয়েটদের দাবি, অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি হওয়ার কারণে সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েটরা। তবে ব্যক্তিগত সমস্যা ও নিবন্ধনের সময় কম হওয়ার কারণেও অনেকে অংশ নিতে পারছেন না। নিবন্ধন ফি কমালে ও নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করলে সমাবর্তনে অংশ নিতে আগ্রহী বলেও জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ নভেম্বর রাবির একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। এবারের সমাবর্তনে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পিএইচডি, এমফিল, স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারী ৩ হাজার ৪৩৮ জনগ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ, গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের মাত্র ৪০ ভাগ সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন। সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩ হাজার ৫৭০ টাকা দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী জানান, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সালে পিএইচডি, এমফিল, স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারীরা গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা আট হাজার ৮১৪জন। এর মধ্যে কলা অনুষদে ১৪০২ জন, আইন অনুষদে ১৬১, বিজ্ঞান অনুষদে ৬৮৫ জন, বিজনেজ স্ট্যাডিজ অনুষদে ৭৭৬, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৬২২, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ৬১০, কৃষি অনুষদে ১১৫, প্রকৌশল অনুষদে ২৪৬ জন, চিকিৎসা থেকে ৩৫৯৭ জন পিএইচডি, এমফিল, ¯œাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার জানান, এবারের সমাবর্তনে তিন হাজার ৪৩৮ জন গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন। শিক্ষকরা অনলাইন ও অফলাইনে নিবন্ধন করেছে। মঙ্গলবার শিক্ষকদের মোট নিবন্ধন সংখ্যা পাওয়া যাবে। যারা সমাবর্তনের জন্য নিবন্ধন করেননি তার কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত সমস্যা, নিবন্ধন ফি ‘অতিরিক্ত’সহ বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেন।

Post MIddle

অর্থনীতি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, ব্যস্ততার কারণে সমাবর্তনের নিবন্ধন করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এখন নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করে তাহলে সমাবর্তনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবো।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৈকত রহিম জানান, তিনি কোন এক প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ায় সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না।

ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পড়াশুনা শেষে এখনো চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ হয়নি যার ফলে নিবন্ধন বাবদ এতো টাকা খরচ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশাসন থেকে যদি নিবন্ধন ফি কমানো হয় এবং নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয় তাহলে সমাবর্তনে অংশ নেয়া সম্ভব হবে।’

সমাবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘গতবার কয়েক বছর পর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেক গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছিলো। কিন্তু এবার ২০১৫ ও ১৬ সালের গ্র্যাজুয়েটদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যাদের অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েটরাই হয়তো এখনো চাকরি পায়নি। সমাবর্তনে নিবন্ধন না করার এটাও একটা কারণ হতে পারে।’

‘অতিরিক্ত’ নিবন্ধন ফি’র বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, এবার নিবন্ধন ফি আরও বৃদ্ধির কথা চলছিলো, পরবর্তীতে উপাচার্যকে ফি না বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন। এ জন্য পূর্বের ন্যায় নিবন্ধন ফি অপরিবর্তিত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান প্রত্যেক বছর সমাবর্তন আয়োজনের ঘোষণা দেন। ওই সমাবর্তনে ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা ৬ হাজার ১৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।

পছন্দের আরো পোস্ট