যৌন হয়রানি রোধে করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারনে যৌন হয়রানির মতো অপরাধ প্রবনতা ক্রমেই বেড়ে চলছে। “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, যেখানে অপরাধ সেখানেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এগিয়ে আসা উচিত।
তবে ঘটনার আগেই যদি প্রতিরোধ করা যায় তাহলে অপরাধ কমে যাবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, পরিচালনা কমিটি, প্রশাসন-এর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে। ঢাকা কলেজ শিক্ষক লাউঞ্জে “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিলে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডুকেশন ওয়াচ-এর সম্পাদক মোঃ খলিলুর রহমান।
এডুকেশন ওয়াচ-এর উদ্যোগে এবং ঢাকা কলেজের সহযোগিতায় এ সভায় আলোচনাকারী হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির প্রধান/সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষের শিক্ষাগ্রহনের জায়গা, সেখানে আজ কিছু অমানুষের কারনে নোংরা হচ্ছে। তারা বলেন, রক্ষকরাই যদি ভক্ষক হয় তাহলে মানুষ আশ্রয় নেবে কোথায়? সোনাগাজীর বহুল আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডের বিবরণ তুলে ধরে বক্তারা বলেন, এই বর্বরোচিত ঘটনা থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেয়ার আছে। যেখানে অপরাধিকে বাঁচাতে অসাধু ব্যক্তিরা একজোট হয়ে গেছেন, যা খুবই ভয়ানক।
স্বাগত বক্তব্যে এডুকেশন ওয়াচ-এর সম্পাদক মোঃ খলিলুর রহমান বলেছেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারনে যৌন হয়রানির মতো অপরাধ প্রবনতা ক্রমেই বেড়ে চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। যা জনগনের মাঝে উদ্বেগের কারণ। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সবারই নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। মূলত এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে ঢাকা কলেজ-এ আয়োজন করেছে।
তিনি অংশগ্রহনকারি সকল বিশিষ্টজনকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেছেন, যখনি অন্যায় হবে তখনি প্রতিবাদ করা উচিত। সেক্ষেত্রে কে কোন ধর্মের, কে কোন বর্ণের সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। সব পরিচয়ের উর্ধ্বে সে অপরাধী। তিনি বলেন, অপরাধ কমাতে অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। নিজ সন্তান কি করে, কোথায় যায় নজর রাখতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। অপরাধের আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উন্নত দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন শিক্ষা দেয়া হয়। আমাদের দেশেও এ শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষকদের আচরন এমন হওয়া উচিত যেন শিক্ষার্থীদের তারা সন্তান মনে করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন অপরাধ সংগঠিত হলে তাৎক্ষনিক বিচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষকদের নিয়োগের সময় তার আচরন সম্পর্কে জানতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন এ অধ্যক্ষ।
বক্তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধ সমূহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত হওয়ায় বেশি আলোচিত হচ্ছে। আমরা দেখছি- শিক্ষার্থীরা পরিবার থেকে যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছেনা। এটা খুবই উদ্বেগের ব্যাপার। তিনি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের মোবাইল ফোন বন্ধে কঠোর হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি অনুরোধ জানান।
বক্তারা বলেছেন, শুধু শিক্ষাঙ্গনই নয় পরিবার থেকে শিখে আসতে হবে। যার-তার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবেনা। তিনি বলেন, ফেসবুক ব্যবহার বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য কাল হচ্ছে। আবেগে গা ভাসিয়ে দিয়ে অনেকে বিপদের সম্মুখিন হচ্ছে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ছাত্রীরাও সচেতন হওয়া দরকার। যেহেতু নারীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শতভাগ নারী শিক্ষক দেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে মেয়েদের আচরনেও সতর্কতা থাকতে হবে। এ আয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুর জন্য নিরাপদ সহিংসতামুক্ত পরিবেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আলোচকগণ মনে করেন।