পরমানু আতুর ঘরে
স্বর্ণক শাহীঃ
প্রবাদে আছে,জ্ঞান অর্জনের জন্য পূর্বদেশে যাও। আর এখন জ্ঞান অর্জনের জন্য বিদেশীরা বাংলাদেশে আসছে। রাশিয়ার রাষ্টায়ত্ব প্রতিষ্ঠান রোসাতমের স্টুডেন্ট কন্সট্রাকসন ব্রিগেডের এক দল উদ্দিপ্ত তরুন ছাত্র-ছাত্রী এসেছে বাস্তবিক জ্ঞান অর্জনের জন্য এখন নির্মানাধীন রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
এই মেগা প্রজেক্টের সুপার কন্সট্রাকশনের বিভিন্ন খুটি নাটি দিক জানতে, বুঝতে ও হাতে কলমে শিক্ষা অর্জনের জন্য ২১ জন মেধাবী শিক্ষার্থী প্রায় দুই মাসের শিক্ষা ছফরে এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সমস্ত রাশিয়া থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নরত এসকল তরুন-তরুনীরা গত ৯ ই জুলাই বাংলাদেশে এসেছে পৌঁছিয়েছে।
কেওবা সূদুর সাইবেরিয়া থেকে আবার কেওবা উরাল মাউন্টেন এলাকা থেকে বহুদুর পারিদিয়ে অতিথি পাখির মত ২ মাসের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে কাজের নিমিত্তে। এসকল স্বপ্নবাজ তরুনেরা আগামি দিনে রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্টির ভবিষ্যৎ কান্ডারি।
তাদের মাঝে একজন বাংলাদেশি। রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থিত জাতীয় পারমানবিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশালিস্ট কোর্সে অধ্যায়নরত মোহাম্মদ হামিদুল হক।
তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাদের সমস্ত কর্মকান্ড সম্পর্কে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট: ডিজাইন, কন্সট্রাকশন ও অপারেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পঞ্চম বর্ষের ছাত্র ময়মনসিংহের ছেলে মোহাম্মদ হামিদুল হক বলছিলেন- স্টুডেন্ট কন্সট্রাকসন ব্রিগেড একটি অনন্য বিশেষ কন্সট্রাকশন ব্রিগেড, যারা রাশিয়ায় ও রাশিয়ার বাইরে বিভিন্ন নিউক্লিয়ার সাইটে গ্রীষ্মকালীন সময়ে কাজকরে হাতে কলমে বাস্তবিক জ্ঞানলাভ করে। যা একটি অসাধারণ সুযোগ। যেখানে ভবিষ্যৎ কর্ম জীবনের পূর্ণ অভিগ্যতা পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ছাত্রছাত্রীরা সহপাঠ কাযর্য়ক্রমের অংশ হিসাবে কন্সট্রাকশন ব্রিগেডে যোগদানকরে। সংখ্যাটি শুনে অবাগ হওয়ার মতোই, প্রায় ২ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ছাত্রছাত্রী এই সংঘঠনের অন্তর্ভুক্ত। এবার আসি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে। প্রতিবছরই গ্রীষ্মের ছুটিতে দুই মাস ব্যবহারিক জ্ঞান লাভের জন্য কাজকরার সুযোগ আসে।
এজন্য প্রতিটি ছাত্রছাত্রী কে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্বক্রিয় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা প্রমান করতে হয়। তাছাড়া ভলেন্টিরিয়ানগ কাজের আগ্রহী হতে হয়। রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে নানা বিদ কাজে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে হয়।
রাশিয়ার বাইরে যেমন বাংলাদেশ , তুরস্ক ইত্যাদি দেশের জন্য কন্সট্রাকশন ব্রিগ্রেডের আবেদনের জন্য নূন্যতম রাশিয়ার ভেতরে দুই বছর কাজে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আবেদন করার সময় নিজের সম্পর্কে ০৭ পৃষ্ঠার প্রজেন্টেশেন, যেখানে নিজের অর্জন, দক্ষ ও প্রাপ্ত বিভিন্ন সার্টিফিকেট উল্লেখ করতে হয়। তাছাড়া নিজের জীবনবৃত্তান্ত ও মোটিভেশনাল লেটার লিখতে হয়। তারপর রোসাতম প্রোফাইল দেখে ছাত্রছাত্রীদের নিার্চন করে থাকে।
এখন বলি কাজের পরিধি সর্ম্পক। রিয়েল টাইম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কন্সট্রাকশন কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর এর মূল কনটেইনমেট বিল্ডিং, কোর ক্যাচার, টারবাইন হল, কুলিং টাওয়ার সহ সকল অক্সিলারি কাজের সাইটে ঘুরে ঘুরে চুখ্য-কর্নে বিবাধ ভাজন করে জ্ঞান লাভ করা যায়।
এমনকি সয়ং নিজেকে নির্মান কাজে অংশ গ্রহন করতে হয়। যা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার কন্টোলিং, সমীক্ষা ও নিরিক্ষা, দাপ্তরিক কাজ কর্ম কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পাওয়া যায়। প্রতিদিন বিভিন্ন সেকশনের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে মতবিনিময় ও আলোচনা, প্রশ্ন উত্তর পর্ব থেকে উক্ত প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
উত্তরকালে অনেকে শিক্ষানবিশ শেষে অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসাবে যোগদানকরে থাকে। এমন কি বর্তমানে অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিরা একসময় এই স্টুডেন্ট কন্সট্রাকসন ব্রিগেডে কাজ করেছেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতেপারে নির্মাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎকেন্দের ডিরেক্টে , প্রধান প্রকৌশলী, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধানসহ অনেকে পূর্বে এই ব্রিগেডে কাজ করেছেন।বস্তুত, এই ব্রিগেড ছাত্রদের কর্পোরেট কর্মী হিসাবে তৈরি করে, নেতৃত্বের গুণাবলী সৃষ্টি করে।
হামিদুল হক তাদের মাঝে একমাত্র বাংলাদেশী। তার নিজের সম্পর্কে জানতে চাইলে, সে বলেন যে আমি একমাত্র বিদেশী যে কিনা এই স্টুডেন্ট কন্সট্রাকসন ব্রিগেডের সর্বপ্রথম সুযোগ পেয়েছি একজন বিদেশী ছাত্র হিসাবে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোভাবে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টসদের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজকরে থাকি। অনেক গুলো আন্তর্জাতিক সেমিনার ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করার অভিগ্যতা রয়েছে। অসংখ্য ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য রয়েছে ডজন খানেক সার্টিফিকেট।
উল্লেখ্যযোগ্য, গত বছর রোসাটমের নিজেস্ব পত্রিকায় “Страна РОСАТОМ” এ আমাকে নিয়ে একটি ফিচার ছাপা হয়েছিল। আমার ইচ্ছা ও স্বপ্ন হলো রাশিয়া থেকে অর্জিত জ্ঞান ভবিষতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজে লাগাতে চাই।
শুধু যে কাজের মাধ্যমে সমগ্র ব্যায় করতে হয় তা কিন্তু না। কাজের বাইরে নতুন একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও খাবার সম্পর্কে বিস্তর ধারনা পাচ্ছে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা। তারই অংশ হিসাবে সপ্তাহান্তে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন, বাংলা সংস্কৃতির সাথে পরিচিতি ও দেশীয় খাবার এর স্বাদ গ্রহনের ব্যবস্থা।
নিজ দেশ হতে বৈরি পরিবেশে টিকে থাকা ও জীবন যাপনের কষ্টের অভিজ্ঞতা অর্জন। পরিশেষে আগামী দুই মাস এ সকল ছাত্র-ছাত্রীরা রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণে কজ করে, অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করে ফিরে যাবে নিজ দেশে।