ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল

ড. মোঃ মাহমুদুল হাছানঃ

কোন দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি সে দেশের শিক্ষা ও শিক্ষা কার্যক্রম। দেশের শিক্ষা কার্যক্রম উন্নত হলে সে দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত ও গতিময় হয়। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহন করার পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করা হয়ে থাকে।

এদিক থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও দিনদিন বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকাতে এর সংখ্যা আরো বেশি হলেও গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশ নগণ্য। গুটি কয়েক যে সকল প্রতিষ্ঠান শিক্ষার মান নিশ্চিত করে তন্মদ্ধে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ডি আই এস) অন্যতম।

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মান সম্পন্ন শিক্ষা বাস্তবায়নে এ প্রতিষ্ঠান বহুলাংশে এগিয়ে। এটি ইংলিশ মিডিয়াম হওয়ার কারনে ছাত্রছাত্রীরা সফলভাবে তাদের মেধা ও মনন চর্চা করে এখান থেকে একটি আদর্শ শিক্ষা গ্রহন করে থাকে।

মানসম্পন্ন শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি এমন শিক্ষাকে যা শিক্ষার্থীরা গ্রহনের পর সে শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। Wolfsburg এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে A good quality education is that provides all learners with capabilities they require to become economically productive, develop sustainable livelihood, contribute to a peaceful and democratic  societies and enhance individual wellbeing.”

অর্থাৎ যে শিক্ষা শিক্ষার্থীদেরকে অর্থনৈতিক ভাবে উৎপাদনশীল হতে শেখায়, টেকসই জীবিকা উন্নয়ন করে, শান্তিপুর্ন ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে অবদান রাখে এবং ব্যক্তিসত্তাকে জাগ্রত করে তাই মানসম্পন্ন শিক্ষা। এক কথায়, যে শিক্ষা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিচরিত্রকে সমুন্নত রেখে দেশ, জাতি ও সমাজকে আলোকিত করতে পারে তাকেই মানসম্পন্ন শিক্ষা বলা হয়।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মানসম্পন্ন শিক্ষা বাস্তবায়নে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অত্র স্কুল শিক্ষার গুনগত মান নির্ধারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ শিক্ষা প্রদান করে থাকে এবং বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিষয়গুলো নিম্নরূপ:
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল১। Equity বা সমদর্শিতার গুনঃ ডি আই এস সকল ছাত্র ছাত্রীদেরকে বৈষম্যহীনতা, ন্যায়পরায়নতা ও সমদর্শিতার শিক্ষা প্রদান করে। শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজন প্রক্রিয়া একটি প্রধান নেতিবাচক দিক বিধায় এখানে ধর্ম- বর্ণ ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের মানবিক গুণাবলীর শিক্ষা দেয়া হয়।

২। সমসাময়িক ও সাম্প্রতিক বিষয়ে শিক্ষাদান ঃ দেশ, জাতি, সমাজ ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেয়া এ প্রতিষ্ঠানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। ছাত্র ছাত্রীদেরকে অতি সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিয়মিত ভাবে জ্ঞান চর্চার জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকম-লী সব সময় নিবেদিত থাকেন অত্র প্রতিষ্ঠানে। ফলে শিক্ষার্থীরা অল্প বয়সে তাদের দায়িত্ববোধের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে।

৩। শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা প্রদান : ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে তাদেরকে অংশগ্রহণ মূলক শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ তৈরি করে। ফলে শিক্ষার্থীরা মুক্ত জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ করে।

Post MIddle

৪। টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থাঃ “পরিবর্তনই উন্নয়ন’ কথাটি মাথায় রেখে ডি আই এস ইতিবাচক পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে টেকসই যোগ্যতা ও ক্ষমতাধর্মী শিক্ষা দান করে থাকে। ফলে প্রতিটি শিক্ষার্থী স্ব স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজ ও জাতির প্রতি কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পারে।

৫। ভারসাম্যপূর্ণ উপস্থাপন শক্তি অর্জনঃ অত্র প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীদেরকে দৈনন্দিন শিক্ষার পাশাপাশি নিজেদেরকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করার ভারসাম্যপূর্ণ যোগ্যতা অর্জনের শিক্ষা দেয়া হয়। ফলে প্রতি শিক্ষার্থী তার মেধানুযায়ী নিজেকে সকলের সামনে উপস্থাপন করে সমাজ ও দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহন করতে পারে।

৬। শিখন ফল নিশ্চিত করাঃ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নির্দিষ্ট কোন শিক্ষাপ্রদানের পর তার শিখন ফল নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীকে উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করতে সহযোগিতা করে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞানের আলোকে জীবনের বাস্তবতায় প্রয়োগ করে আদর্শ জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

৭। শ্রেণিবান্ধব পড়াশুনাঃ উচ্চতর প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ শিক্ষকম-লী দ্বারা পাঠদান করে শিক্ষার্থীকে শ্রেণিবান্ধব সুশিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য। শিক্ষকগন ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এতটাই যত্নশীল যে তারা স্কুল কেন্দ্রিক পাঠ গ্রহনে সদা উৎসাহী হয়ে থাকে।

৮। অংশগ্রহণ মূলক শিক্ষাঃ শিক্ষকগণ তাদের শ্রেণীকক্ষে অংশগ্রহণ মূলক পদ্ধতিতে পাঠদান করে থাকে। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রী তাদের মুক্ত চিন্তা চর্চা করে আনন্দচিত্তে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা বিকাশের নিশ্চিত সুযোগ লাভ করতে পারে।

৯। শিক্ষক- শিক্ষিকার নিবিড় সম্পর্ক উন্নয়নঃ শিক্ষক জ্ঞানদান করে আর শিক্ষার্থী তা গ্রহন করে। প্রদান ও গ্রহনের মাঝে যদি নিবিড় সম্পর্ক না থাকে তবে সে শিক্ষা যেন অনেকটাই নিরর্থক হয়ে যায়। তাই ডি আই এস এ শিক্ষক ও ছাত্রের মাঝে একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে একটি আদর্শ শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে আরো জ্ঞান অর্জনে ব্রতি হয়। শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সম্পর্ক এ জাতীয় জ্ঞান আহরণের এক অবারিত সুযোগ অত্র স্কুলে নিশ্চিত হয়ে থাকে।

১০। নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষাঃ নীতিহীন শিক্ষা অশিক্ষা বা কুশিক্ষার নামান্তর। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষার প্রতি বেশ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। ব্যক্তি চরিত্র, মানবীয় গুণাবলী ও নৈতিক মূল্যবোধসহ উন্নত চরিত্র গঠনে এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত এসেম্বলি ও শ্রেণিতে বিশেষ আলোচনা করে থাকে। ফলে শিক্ষার্থী বিদ্যার্জনেই নয় বরং নৈতিক উন্নয়নেও অনেক শক্তিশালী হয়ে থাকে।

সুতরাং এ কথা দ্বিধাহীন ভাবে বলা যায় যে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রদান ও আদর্শ জাতি গঠনে এখন আলোকিত স্কুল। মনে রাখা দরকার শুধুমাত্র ভালো ফলাফল অর্জনই একজন শিক্ষার্থীর কাম্য হওয়া উচিত নয়, বরং ভালো মানুষ হওয়া প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত। আর এটি সম্ভব হয় ছাত্র –ছাত্রীদেরকে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে এমন স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করলে।

এসব বিবেচনায় এ কথা স্পষ্ট যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সর্ব সাধারনের জন্য এমন একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যাকে মাতা-পিতা তাদের সন্তানদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেছে নিতে পারে। আমরা আশা করি, অত্র স্কুলে পড়াশুনা করে যে কোন শিক্ষার্থী বড় একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।

 

ড. মোঃ মাহমুদুল হাছান। প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা

পছন্দের আরো পোস্ট